সপ্তাহের ব্যবধানে ২ বিশ্বস্ত মন্ত্রীকে হারিয়ে বিপাকে লিজ ট্রাস

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। ছবি: এপি
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। ছবি: এপি

অনেক আশা-ভরসা নিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর পদে এসেছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস। তবে মাস দেড়েক যেতে না যেতেই চরম নড়বড়ে অবস্থায় চলে এসেছে তার 'রাজত্ব'।

গতকাল বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যান পদত্যাগ করায় ট্রাসের প্রধানমন্ত্রীত্ব 'তাসের ঘরের' মতো উড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে, সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে ট্রাস তার মন্ত্রিসভার ২ বিশ্বস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে হারালেন।

বিদায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যান। ছবি: রয়টার্স
বিদায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যান। ছবি: রয়টার্স

এর আগে, অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ারটেংকে মাত্র ৩৮ দিনের মাথায় বরখাস্ত করতে বাধ্য হন লিজ।

সুয়েলার পদত্যাগের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রক্ষণশীল দলের আইনপ্রণেতারা সংসদে প্রকাশ্যেই সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েছেন।

নাম না প্রকাশের শর্তে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির আইনপ্রণেতা বলেন, 'দলের মধ্যে শৃঙ্খলা হারিয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না।'

আইনপ্রণেতা চার্লস ওয়াকার জানান, তিনি সেসব প্রতিভাহীন মানুষের ওপর চরম বিরক্ত, যারা শুধুমাত্র চাকরির আশায় ট্রাসকে ক্ষমতায় এনেছেন।

অপর এক আইনপ্রণেতা দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, 'আমি (ট্রাসের জায়গায়) থাকলে এখন আত্মীয়দের ফোন করে বলতাম, কয়েক দিন নয়, (আমার প্রধানমন্ত্রীত্বের মেয়াদ) আর কয়েক ঘণ্টা।'

গত ২৩ সেপ্টেম্বর 'মিনি-বাজেট' ঘোষণার পর লিজ ট্রাসের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে পড়ে। অর্থনৈতিক প্রকল্পে তিনি কর কমানোর ঘোষণা দেন। কিন্তু, এর বিপরীতে বাড়তি তহবিল জোগানের প্রক্রিয়ার কথা তিনি বা তার সাবেক অর্থমন্ত্রী জানাতে পারেননি। ফলে দেশটির অর্থনীতিতে চরম উদ্বেগ ও আশংকা দেখা দেয়।

নবনিযুক্ত অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। ছবি: রয়টার্স
নবনিযুক্ত অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। ছবি: রয়টার্স

ইতোমধ্যে কয়েকজন আইনপ্রণেতা ট্রাসকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। কেউ কেউ তার বিকল্পের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এক পর্যায়ে গুজব রটে, দলের শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি ও তার সহকারী পদত্যাগ করেছেন।

ট্রাসের কার্যালয় থেকে এ গুজব নাকচ করে দেওয়া হয়।

কনজারভেটিভ পার্টির এই নাটকীয় পরিস্থিতির পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি ও সরকারি ব্যয় সংকোচন নিয়ে উদ্বেগে আছেন। নেতারা এ পরিস্থিতির মোকাবিলায় তেমন কিছুই করছেন না বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।

ট্রাস ইতোমধ্যে আইনপ্রণেতাদের জানিয়েছেন, তিনি তার ভুলগুলোর জন্য দুঃখিত। তবে, পদত্যাগ করবেন না। সুয়েলার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি এ কথা জানান।

পদত্যাগের সময় সুয়েলা জানান, তিনি ব্যক্তিগত ইমেল থেকে ভুল করে আনুষ্ঠানিক নথি তার এক সংসদীয় সহকর্মীকে পাঠিয়ে আইন ভেঙেছেন।

সরকার নিয়ে গভীর উদ্বেগে আছেন উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, সব সমস্যা এমনি এমনি দূর হয়ে যাবে, এই আশায় বসে থাকা কোনো কার্যকর সমাধান নয়।

প্রধানমন্ত্রীকে এক চিঠিতে তিনি বলেন, 'আমি ভুল করেছি। এর দায় নিয়ে পদত্যাগ করছি।'

বিকল্প হিসেবে ট্রাস সাবেক মন্ত্রী গ্র্যান্ট শ্যাপসকে নিয়োগ দেন। সম্প্রতি, এই মন্ত্রী মন্তব্য করেছিলেন, ট্রাসকে টিকে থাকতে হলে বড় লড়াইয়ে নামতে হবে।

নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গ্র্যান্ট শ্যাপস। ছবি: এপি
নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গ্র্যান্ট শ্যাপস। ছবি: এপি

তিনি নতুন পদে যোগ দিয়ে বলেন, 'নিঃসন্দেহে এখন খুব কঠিন সময় যাচ্ছে।'

নবনিযুক্ত অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্টের প্রশংসা করেন সদ্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, 'আমার মতে, জেরেমি হান্ট মিনি বাজেট নিয়ে বিতর্কের নিষ্পত্তিতে খুবই ভালো কাজ করেছেন।'

জরিপে জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে কনজারভেটিভ পার্টি এ মুহূর্তে লেবার পার্টির চেয়ে ৩০ পয়েন্ট পিছিয়ে আছে। জরিপ সংস্থা ইউগভ তাদের জরিপ সংগ্রহ কার্যক্রমের ইতিহাসে ট্রাসকে সবচেয়ে কম জনপ্রিয় নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

Comments

The Daily Star  | English
Motorcycle sales in the last 6 years

Motorcycle sales hit five-year low

Interestingly, the premium motorcycle segment bucked the trend, showing significant growth in 2024.

12h ago