যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস ও তার চ্যালেঞ্জ
![যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীত্বের দৌড়ে জয়ী হওয়ার পর কনজারভেটিভ দলের কার্যালয়ের সামনে লিজ ট্রাস। ছবি: এপি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীত্বের দৌড়ে জয়ী হওয়ার পর কনজারভেটিভ দলের কার্যালয়ের সামনে লিজ ট্রাস। ছবি: এপি](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2022/09/06/truss1.jpeg?itok=GmP6dyG3×tamp=1662457580)
যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ দলের নেতা ও দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন লিজ ট্রাস। ব্রেক্সিট বিরোধী এই নেতা কনজারভেটিভ দলের ডানপন্থীদের জনপ্রিয় প্রতিনিধি।
আশির দশকে লিবারাল ডেমোক্র্যাট আন্দোলনকারী হিসেবে তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। তবে ৪৭ বছর বয়সী লিজ এখন নিজেকে 'থ্যাচারের অগ্নিশিখার বাহক' হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
লিজ ট্রাসের রাজনৈতিক যাত্রা
তবে নিঃসন্দেহে বলা যায়, ম্যারি এলিজাবেথ ট্রাসের রাজনৈতিক যাত্রা বেশ বৈচিত্র্যময়।
তিনি তার পূর্বসূরির মত ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে সুপরিচিত নন। এমন কী, কনজারভেটিভ টোরি দলের সংসদ সদস্যদের কাছেও তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য সবচেয়ে যোগ্য দাবিদার ছিলেন না।
তবে কনজারভেটিভদের মৌলিক মূল্যবোধগুলোতে ফিরে যাওয়ার যে প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছেন, অর্থাৎ, কর কর্তন ও রাষ্ট্রের ক্ষমতা কমিয়ে জনগণের ক্ষমতা বাড়ানো, তা দলের সদস্যদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত তাদের ভোটেই বরিস জনসনের বদলে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হলেন লিজ ট্রাস। এছাড়াও, প্রতিদ্বন্দ্বী ধনী পরিবারের সন্তান ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত রিশি সুনাকের তুলনায় লিজকে কর্মীরা কাছের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করেছেন, যার প্রতিফলন ঘটেছে ৫৭ শতাংশ ভোটে।
মজার বিষয় হচ্ছে, যে বরিস জনসনের পরিবর্তে তিনি ক্ষমতায় এলেন, সেই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মন্ত্রীসভার অনেক সদস্য বিদ্রোহ করলেও পররাষ্ট্র সচিব লিজ তা করেননি। তিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বরিসের প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছেন। এ কারণে বরিসের কট্টর সমর্থকদের ভোটও তিনি পেয়েছেন।
টোরি দলের তৃণমূল কর্মীরা লিজ ট্রাসের মাঝে দলের অন্যতম জনপ্রিয় নেতা মার্গারেট থ্যাচারের ছায়া দেখতে পান। তারা লিজকে থ্যাচারের মতো অবিচল, দৃঢ় এবং সংকল্পবদ্ধ নেতা হিসেবে বিবেচনা করেন। লিজ নিজেও বিভিন্ন সময়ে নিজেকে থ্যাচারের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে বেশ কয়েকবার পদ ও সমর্থন বদলালেও লিজের সঙ্গে যেনো এই শব্দগুলো সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের লিজ সম্পর্কে বলতে বলা হলে অবিচল, দৃঢ় এবং সংকল্পবদ্ধের পাশাপাশি তাকে 'উচ্চাভিলাষী' বলেও তারা অভিহিত করেন।
এক নজরে লিজ ট্রাস
![লিজ ট্রাসকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন তার স্বামী। ছবি: এপি লিজ ট্রাসকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন তার স্বামী। ছবি: এপি](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2022/09/06/liz_and_husband.jpeg?itok=Na_aKqs9×tamp=1662457887)
বয়স: ৪৭
জন্মস্থান: অক্সফোর্ড
শিক্ষা: লিডসের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাউন্ডহে স্কুল
পরিবার: স্বামী হিসাবরক্ষক হিউ ও'লিয়ারির সঙ্গে ২ কন্যা সন্তান।
সংসদীয় আসন: দক্ষিণ-পশ্চিম নরফোক
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে লিজ ট্রাস দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।
অক্সফোর্ডে পড়ার সময় লিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের সভাপতি হন।
১৯৯৪ সালে দলের সম্মেলনে তিনি রাজতন্ত্র বাতিলের স্বপক্ষে বক্তব্য দিয়ে সাড়ে ফেলেন। তিনি বলেন, 'আমরা, লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা সবার জন্য সমান সুযোগে বিশ্বাসী। কোনো ব্যক্তি তার জন্মপরিচয়ের কারণে বাকিদের শাসন করবেন, এতে আমরা বিশ্বাস করি না।'
লিবারেল ডেমোক্র্যাট থেকে কনজারভেটিভ লিজ
![সমর্থকদের সঙ্গে লিজ ট্রাস। ছবি: এপি সমর্থকদের সঙ্গে লিজ ট্রাস। ছবি: এপি](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2022/09/06/2.jpeg?itok=6vwsFs8N×tamp=1662457887)
বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনে লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলের সমর্থন করায় পরবর্তীতে তিনি কনজারভেটিভ দলের সদস্যদের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে সমস্যায় পড়েন।
ইস্টবোর্নে এক সভায় তিনি জানান, 'আমরা সবাই ভুল করি। সবারই জীবনেই কম বয়সের কিছু দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা রয়েছে। অনেক মানুষ যৌনতা, মাদক ও রক অ্যান্ড রোল সঙ্গীতে মজে থাকে। আমি লিবারেল ডেমোক্র্যাট ছিলাম। আমি দুঃখিত'
নতুন প্রধানমন্ত্রীর জন্য ৭ সমস্যা
নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী লিজের জন্য প্রথম দিন থেকেই যে সমস্যাগুলো প্রকট হয়ে দেখা দেবে, তার মধ্যে ক্রমবর্ধমান দৈনন্দিন খরচ অন্যতম।
যুক্তরাজ্যের সংবাদ মাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে ৭টি মূল সমস্যার কথা বলা হয়েছে, যেগুলো লিজ ট্রাসের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিতে পারে।
বাড়তে থাকা দৈনন্দিন খরচের ওপর রাশ টেনে ধরা
বিশেষজ্ঞদের মতে, লিজ ট্রাসের পক্ষে এ সমস্যা পুরোপুরি সমাধান করা খুবই ঝামেলাপূর্ণ হবে। যুক্তরাজ্যের বাসিন্দাদের নিত্যদিনের খরচ বেড়ে যাওয়ার পেছনে মূল কারণ জ্বালানি সংকট, যার পুরোভাগে রয়েছে গ্যাস সংকট। ইউক্রেনে হামলা করার কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সমগ্র ইউরোপ ও পশ্চিমের দেশগুলো বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ফলে সেখান থেকে গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি শীতকালের প্রস্তুতি হিসেবে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলো গ্যাস মজুত করে রাখায় পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।
সার্বিক ভাবে, জ্বালানির মূল্য এমন এক পর্যায়ে গেছে, যাতে বেশিরভাগ মানুষের জন্য তা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। নতুন প্রধানমন্ত্রীকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কীভাবে এবং ঠিক কত বিলিয়ন পাউন্ড ভর্তুকি দিয়ে তিনি এ সংকটের সমাধান করবেন।
খাবারের দামও বেড়েছে, যার ফলে মূল্যস্ফীতির পরিমাণ ১৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের মূল্য আরও কমে গেলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়বে। ইতোমধ্যে ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার বাড়ছে এবং তা শুধু ব্যক্তি ও পরিবার পর্যায়ে নয়, সরকার ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্যেও তহবিলের খরচ বেড়ে গেছে।
অর্থনীতির এই ঝামেলাপূর্ণ সময়ে সরকার প্রধানকে ঠাণ্ডা মাথায় সঠিক, বাস্তবায়নযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য উদ্যোগ নিতে হবে।
শীতকালে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা কীভাবে কাজ করবে
যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সংস্থার (এনএইচএস) কর্মীরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে ধর্মঘট করার হুমকি দিয়েছেন। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মন্দার পর জীবনযাপনের খরচ বেড়ে যাওয়াতে তারা এই দাবি জানাচ্ছেন।
নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজের জন্য মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে এনএইচএসের গত এক দশক ধরে কমতে থাকা সেবার মান। মহামারির সময় এই সংস্থার উপযোগিতা আরও কমে যায়। হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য অপেক্ষমাণ ব্যক্তির তালিকা বড় হয়ে নতুন রেকর্ড গড়েছে। এ মুহূর্তে প্রতি ৮ জনে ১ জন রোগী চিকিৎসা পাওয়ার অপেক্ষা আছেন। এছাড়াও, জরুরি স্বাস্থ্যসেবাও বিঘ্নিত হচ্ছে। ৯৯৯ নম্বরে কল করে সময়মত জরুরি সেবা পাচ্ছেন না বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করছেন।
স্বাস্থ্যসেবা খাতের বেতন-ভাতা নিয়ে অসন্তুষ্ট ইউনিয়ন কর্মীরা যেকোনো সময় বিক্ষোভ শুরু করতে পারেন বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আসন্ন শীতে করোনাভাইরাস ও ফ্লু'র নতুন ঢেউ আসতে পারে। এ সময় স্বাস্থ্যসেবাকর্মীরা কর্মবিরতীতে গেলে তা বড় আকারের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। হাসপাতালগুলো অন্য এক ধরনের সমস্যায় পড়েছে, যা হল, রোগী সুস্থ হলেও তাদেরকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া যাচ্ছে না, কারণ তাদের পুনর্বাসনের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ সামাজিক সেবা কেন্দ্র নেই।
সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতির উন্নয়নে লিজ ট্রাসকে অনেক সময় দিতে হবে।
ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন অব্যাহত থাকবে?
বৈশ্বিক নেতাদের মধ্যে বরিস জনসন ইউক্রেন সংকটের একদম শুরু থেকে দেশটির প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি এমন কী ইউক্রেন সফরে যেয়ে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সশরীরে দেখা করে তার সমর্থন অব্যাহত রাখার বিষয়টিও নিশ্চিত করেন। যেদিন বরিস পদত্যাগের ঘোষণা দেন, সেদিন গভীর দুঃখ নিয়ে জেলেনস্কি জানান, ইউক্রেন আজ এক পরম বন্ধুকে হারাল।
![ইউক্রেনে হামলার কিছুদিন আগে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাস। ছবি: রয়টার্স ইউক্রেনে হামলার কিছুদিন আগে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাস। ছবি: রয়টার্স](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2022/09/06/lavrov.jpeg?itok=bYBpMQKe×tamp=1662458098)
তবে ধারণা করা হচ্ছে, লিজ ট্রাস বরিস জনসনের নীতিতেই অটল থাকবেন এবং ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র ও অন্যান্য ধরনের সহযোগিতা দেওয়া অব্যাহত রাখবেন।
তবে যত দিন যাবে, লিজ ট্রাসের জন্য ইউক্রেনকে সহায়তা করার বড় আকারের অর্থনৈতিক অঙ্গীকারকে যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা ঝামেলাপূর্ণ হয়ে যাবে। জ্বালানি সংকট ও দৈনন্দিন খরচ বেড়ে যাওয়ার বিপরীতে একটি বিদেশী রাষ্ট্রকে বিনা শর্তে বিলিয়ন বিলিয়ন পাউন্ড সহায়তা করা কতটুকু যুক্তিপূর্ণ, সে প্রশ্নের উত্তর লিজকেই দিতে হবে।
এছাড়াও, ইউরোপের কিছু দেশ চাইবে রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে। মূলত, যে দেশগুলো জ্বালানির জন্য অনেকাংশেই রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল, তাদের কাছ থেকেই এ ধরনের প্রস্তাব আসবে। এ বিষয়টির সঙ্গে মোকাবিলা করতে লিজ ট্রাসকে সূক্ষ্ম ও জটিল কূটনৈতিক কৌশলের আশ্রয় নিতে হবে।
বিভাজিত টোরি দলকে সংগঠিত করা
বেশ কয়েক মাস ধরে নিজেদের মধ্যে বিভেদের পর কনজারভেটিভ দলকে আবারও সংগঠিত করার দায়িত্ব নবনির্বাচিত নেতা লিজ ট্রাসের ওপরই আসবে। ক্ষমতা গ্রহণের পর শুরুতেই তাকে প্রিভিলেজেস কমিটির তদন্তের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। এই কমিটি জানার চেষ্টা করছে, বরিস জনসন ডাউনিং স্ট্রিটের পার্টি সম্পর্কে সংসদ সদস্যদের ভুল তথ্য দিয়েছেন কী না।
![পূর্বসূরী বরিস জনসনের সঙ্গে তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব লিজ ট্রাস। ছবি: রয়টার্স পূর্বসূরী বরিস জনসনের সঙ্গে তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব লিজ ট্রাস। ছবি: রয়টার্স](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2022/09/06/with_boris.jpeg?itok=5R2rviWF×tamp=1662457887)
যদি কমিটির সদস্যরা বরিসকে দোষী সাব্যস্ত করে তার ওপর শাস্তি আরোপ করে, তাহলে সংসদ সদস্যদের এ বিষয়ে ভোট দিতে হবে। তখন লিজের সামনে বিকল্প থাকবে নিজ দলের সদস্যদের তাদের ব্যক্তিগত ইচ্ছে অনুযায়ী ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে, অথবা একটি সুনির্দিষ্ট বিকল্পে (শাস্তির পক্ষে বা বিপক্ষে) দলের সব সংসদ সদস্যকে ভোট দিতে বলার সিদ্ধান্ত নেওয়া। তিনি যদি বরিসের শাস্তির স্বপক্ষে ভোট দিতে বলেন, তাহলে দলে বরিস জনসনের অনুসারীরা ক্ষিপ্ত হবেন। আর যদি তিনি 'না' ভোট দিতে বলেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে 'অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়ার' অভিযোগ আসতে পারে।
দেশে বড় বড় অর্থনৈতিক সমস্যার মাঝে টোরি দলের বিভাজন কেনো একটি বড় সমস্যা? এ প্রশ্নের জবাবে বিশ্লেষকরা বলেন, একটি বিভাজিত দল ক্ষমতায় থাকলে জনগুরুত্বপূর্ণ নীতিমালাগুলো দ্রুত অনুমোদন পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়।
উত্তর আয়ারল্যান্ডের অচলাবস্থার নিরসন
লিজ ট্রাসকে খুব দ্রুতই উত্তর আয়ারল্যান্ডের রাজনৈতিক অচলাবস্থার মোকাবিলা করতে হবে। যুক্তরাজ্য সরকার এর আগে একটি বিল পাস করিয়েছে, যার মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীরা চাইলে ব্রেক্সিট পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তিগুলোকে আংশিকভাবে উপেক্ষা করতে পারেন। এই সিদ্ধান্তে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা স্থবির হয়ে পড়ে।
উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট দল ঘোষণা দিয়েছে, এই নীতির পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত তারা 'স্টরমন্টে' (দেশটির সংসদ) ক্ষমতা ভাগাভাগি করে সরকার গঠন করতে রাজি নয়। তাদের যুক্তি, এই নীতির কারণে যুক্তরাজ্যে উত্তর আয়ারল্যান্ডের অবস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্টরমন্টে সরকার গঠনের চূড়ান্ত সময়সীমা হচ্ছে ২৮ অক্টোবর।
এই দিনটির পর সরকারকে নতুন সংসদীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে অথবা নতুন সময়সীমার জন্য আইনের পরিবর্তন করতে হবে।
লিজ ট্রাসকে মনে রাখতে হবে যে উত্তর আয়ারল্যান্ডের বেশিরভাগ রাজনীতিবিদ আগের নীতিমালা পুনর্বহাল দেখতে চান এবং এর অন্যথা হলে তারা ডাউনিং স্ট্রিটকেই দায়ী করবেন।
স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা প্রসঙ্গ
স্কটল্যান্ডের নেতা ও ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জন ২০২৩ সালের অক্টোবরে দ্বিতীয় বারের মতো দেশটির স্বাধীনতা (যুক্তরাজ্য থেকে বের হয়ে আসার) প্রসঙ্গে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন। একে সংক্ষেপে ইন্ডিরেফ২ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনই স্কটল্যান্ড সফরে যান। বরিস জনসন ক্ষমতা গ্রহণের ১ সপ্তাহের মধ্যে সেখানে গিয়েছিলেন। তবে লিজ ট্রাস কবে স্কটল্যান্ড যাবেন, সে বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত দেননি।
স্কটল্যান্ড কি যুক্তরাজ্যের অনুমোদন ছাড়া ইন্ডিরেফ২ আয়োজন করতে পারবে কী না, সে বিষয়টির নিষ্পত্তি হবে অক্টোবরে। যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্লেষকরা মনে করছেন এ প্রশ্নের উত্তর হবে 'না'। তবে কোনো কারণে স্কটল্যান্ডে এই গণভোট আয়োজনের অনুমতি পেয়ে গেলে লিজ ট্রাসের জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়াবে। তিনি ইন্ডিরেফ২ আয়োজনে কোনো বাধা দেবেন কী না, সেটাই তখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।
২০৫০ সালের মধ্যে নেট জিরো কার্বন নিঃসরণ নিশ্চিত করা
গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি সঙ্কটে নতুন প্রধানমন্ত্রীকে দ্রুত কিছু অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে, যার ফলে যুক্তরাজ্যের ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণকে শূন্যে নামিয়ে আনার অঙ্গীকার রক্ষা করা সম্ভব নাও হতে পারে।
এ ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো নিয়ে লিজ ট্রাসকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তার মধ্যে আছে দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই জ্বালানিতে আরও বিনিয়োগ করা অথবা স্বল্পকালীন ও দ্রুত সমাধান হিসেবে জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়ানো। উত্তর সাগরে তেল ও গ্যাসের প্রকল্পগুলো অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে, যার বাস্তবায়নে পরিবেশে গ্রিন হাউজ গ্যাসের নিঃসরণ বেড়ে যাবে।
জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬ এর প্রতিশ্রুত নেট জিরো কৌশলের অংশ হিসেবে সরকার ২০৩৫ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কার্বনের ব্যবহার দূর করার অঙ্গীকার করেছে। কিন্তু এটি বাস্তবায়ন করতে হলে টেকসই জ্বালানি খাতে বড় আকারের সম্প্রসারণ প্রয়োজন। গভীর সমুদ্রে বায়ু কলের ব্যবহারে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যুক্তরাজ্য সাফল্য অর্জন করেছে, তবে মূল ভূখণ্ডে সৌর ও বায়ু ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের কাজ এখনও শেষ হওয়ার অপেক্ষায়।
টেকসই জ্বালানির উৎস তৈরির কাজটি দ্রুত শেষ করা লিজ ট্রাসের জন্য বেশ ঝামেলার হবে বলেই ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা।
Comments