ডিএসএলআর ক্যামেরার ব্যাটারির স্থায়িত্ব কমার ১০ কারণ
ডিএসএলআর ক্যামেরা ব্যবহারের অন্যতম অসুবিধা হচ্ছে, প্রায়শই মনে হয় এটির ব্যাটারি তলানিতে। দেখা গেল, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসে ক্যামেরাটির চার্জ নেই নেই করছে, পরিষেবার হিসেবেও ব্যাটারিটি তেমন সন্তোষজনক নয়। এর ফলে অনেকেই অতি অল্প সময়ের মধ্যে চড়া দাম দিয়ে ক্যামেরার ব্যাটারি পরিবর্তন করেন। কিন্তু খানিকটা সচেতন হলেই এই পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
চলুন দেখা নেওয়া যাক ডিএসএলআর ক্যামেরার স্থায়িত্ব এবং চার্জ শেষ হওয়ার পেছনে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এবং সেগুলোর প্রতিকার।
এলসিডি স্ক্রিনের ব্যবহার
ব্যাটারি তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যাবার অন্যতম একটি কারণ হলো শট সেটআপের ক্ষেত্রে ভিউফাইন্ডারের বদলে এলসিডি স্ক্রিন ব্যবহার করা। কেন না, এলসিডি স্ক্রিনের মাধ্যমে ব্যাটারির চার্জের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি। ছবি তোলার পূর্বে এবং পরে প্রিভিউ এবং রিভিউয়ের জন্য এলসিডি স্ক্রিন ব্যবহৃত হয়। এটির ব্যবহার একেবারেই বাদ না দিতে পারলেও, পরিমাণ কমিয়ে আনলে অনেকখানি ব্যাটারির চার্জ বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।
এ ক্ষেত্রে দুটি সমাধান হতে পারে- পোস্ট-শট রিভিউ ইনঅ্যাকটিভ করা এবং ব্রাইটনেস সেটিং কমানো।
অতিরিক্ত জুম
ফোটোগ্রাফিতে জুম ব্যবহারের অন্যতম একটি নিয়ম হলো- কেবল তখনই জুম ব্যবহার করা উচিত যখন আপনি ছবির বিষয়বস্তুর আর কাছে যেতে পারছেন না। এতে করে ছবি যেমন ভালো হবে, তেমনি ব্যাটারিও আরেকটু বেশি সময় নিজের স্থায়িত্ব ধরে রাখতে পারবে।
জুমের কাজ মূলত করে থাকে লেন্স মোটর। যখনই আপনি জুম করেন, এই মোটর চক্রাকারে ঘোরে এবং প্রতি পাকে এটি ব্যাটারির শক্তি ব্যবহার করে।
তবে 'ম্যানুয়ালি অ্যাডজাস্টেবল জুম রিং' সংবলিত বেশিরভাগ ডিএসএলআর ক্যামেরার ক্ষেত্রে ব্যাটারির স্থায়িত্ব কোন সমস্যাই নয়।
বড় লেন্সের ব্যবহার
কিছু কিছু শটের ক্ষেত্রে আপনাকে হয়তো টেলিস্কোপিক লেন্স ব্যবহার করতে হতে পারে। যেমন বিশেষ কিছু পোর্ট্রেট শট এবং দূর থেকে ল্যান্ডস্কেপ শট নেওয়ার ক্ষেত্রে। প্রতিটি শটের জন্য কিন্তু আপনার টেলিস্কোপিক লেন্সের দরকার নেই। ছোট কোন লেন্সের চাইতে এই লেন্স আপনার ব্যাটারি বেশি খরচ করবে। টেলিস্কোপিক লেন্স একদমই জরুরি না হলে ওয়াইড-অ্যাঙ্গেল লেন্সের ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে চাইলেই ক্রপ করে ছবির অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দেওয়া সম্ভব।
কন্টিনিউয়াস অটোফোকাস
ছবির বিষয়কে ফোকাসের মধ্যে আনা ততটাও কঠিন কোনো কাজ নয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, অটোফোকাসকে নিয়ন্ত্রণকারী মোটর, ক্যামেরার ব্যাটারির ওপর ভীষণভাবে নির্ভরশীল। 'কন্টিনিউয়াস ফোকাস' ব্যাটারির অন্যতম বড় শত্রু। যদি এটির প্রয়োজন না পড়ে তবে আপনি 'ওয়ান-শট' কিংবা 'অটোফোকাস সিঙ্গেল মোড'-এ আস্থা রাখতে পারেন।
শাটার বাটন মুহুর্মূহু চাপা
শটে ফোকাস করতে ছবি তোলার আগে অনেকেই শাটার বাটনের ওপর হালকা চাপ দিয়ে থাকেন। এতে কিন্তু ব্যাটারির বেশ ক্ষতি হয়। কেন না, যতবার আপনি বাটনটি চাপছেন, লেন্সটি রিসেট এবং রিফোকাস হচ্ছে। তাতে মোটরটিও বারবার ব্যবহৃত হচ্ছে।
অটোমেটিক ফ্লাশ অন থাকা
রাতের বেলা ছবি তোলার ক্ষেত্রে অটোমেটিক ফ্লাশের জুড়ি মেলা ভার। তবে দিনের বেলা এটির ব্যবহার প্রায় হয় না বললেই চলে। অথচ অটোমেটিক ফ্লাশ অন থাকলে ক্যামেরার চার্জ অনেকখানি কমে আসে, কমে আসে ব্যাটারির স্থায়িত্বও।
অপ্রয়োজনীয় ফিচার সক্রিয় থাকা
একটি ডিএসএলআর ক্যামেরায় নেহায়েত কম ফিচার নেই। কিন্তু এর ঠিক কতগুলো একজন চিত্রগ্রাহক কাজে লাগান? ক্যামেরার এমন বহু ফিচার রয়েছে যেগুলো ব্যবহারের ফল পরবর্তীতে ছবি সম্পাদনা করেই পাওয়া যায়। ক্যামেরা একটি ট্রাইপডের ওপর থাকলে 'ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন' ব্যবহারের কোনো কারণ নেই। তেমনি বিপসহ ক্যামেরার বহু সাউন্ড ইফেক্ট রয়েছে যা একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। ক্যামেরার মেন্যুতে গিয়ে এগুলো নিষ্ক্রিয় করে রাখলে অনেকটুকু ব্যাটারির অনেকটুকু চার্জ এবং স্থায়িত্ব সঞ্চয় করা সম্ভব।
পাওয়ার-সেভিং মোড ইনঅ্যাকটিভ রাখা
ক্যামেরার পাওয়ার-সেভিং মোড ব্যাটারির চার্জ ও স্থায়িত্ব বহুলাংশে বাড়িয়ে দেয়। আপনি ক্যামেরাটি সুইচ অফ করতে ভুলে গেলেও পাওয়ার-সেভিং মোড নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত ক্যামেরার নিষ্ক্রিয়তা দেখে নিজে থেকেই একে অফ করে দেবে। ডিভাইসের ডকুমেন্টশনে সাধারণত এ বিষয়ক বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া থাকে।
ছবি তোলার সময় অহেতুক কাজ না করা
যখন আপনি ক্যামেরা নিয়ে কোথাও ছবি তুলতে বেরিয়েছেন, তখন বাজে ছবি ডিলিট করে, সম্পাদনার খুঁটিনাটি মাথায় এনে নিজের সময় এবং ক্যামেরার চার্জ নষ্ট করবেন না। ক্যামেরা চালু রেখে অহেতুক কাজ করে গেলে পরবর্তীতে ছবি তোলার জন্য চার্জ পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়াবে।
শীতে ক্যামেরার ব্যবহার
শীতে ক্যামেরার স্থায়িত্ব সাধারণত তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায়। তাই এ ক্ষেত্রে উচিত দিনের তুলনামূলক উষ্ণ অংশটা ছবি তোলার কাজে ব্যবহার করা। কম তাপমাত্রা সহনশীল ব্যাটারি ব্যবহারও এক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে।
তথ্যসূত্র: মেক ইউজ অব, গিজ বট
গ্রন্থনা: কৌরিত্র তীর্থ
Comments