ইন্টারনেট ব্যাংকিং লেনদেন দ্বিগুণ হলো জুলাইয়ে

এক বছর আগের তুলনায় গত জুলাইয়ে ইন্টারনেট ব্যাংকিং লেনদেন প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ২৩ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে এ তথ্য দেখা গেছে। দেশের অনেকেই এখন বিভিন্ন আর্থিক সেবা পেতে কম্পিউটার ও মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করছে।

২০২১ সালের জুলাইয়ে ইন্টারনেট ব্যাংকিং লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। তবে, জুলাইয়ের ইন্টারনেট ব্যাংকিং লেনদেনের পরিমাণ জুনের ২৩ হাজার ৭৭০ কোটি টাকার চেয়ে কিছুটা কম ছিল বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে।

ইন্টারনেট ব্যাংকিং সাধারণত অনলাইন ব্যাংকিং নামে অধিক পরিচিত। এর মাধ্যমে গ্রাহকরা আর্থিক লেনদেন ও বিল পেমেন্টসহ নানা ধরনের পরিষেবা সহজেই পান।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ২ দশক আগে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যাংকিং চালু করে। তখন থেকেই দ্রুত গতিতে এটি দেশব্যাপী বহুল প্রচলিত হতে শুরু করে।

মূলত করোনাভাইরাস মহামারির কারণে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের ব্যবহার বিপুল পরিমাণে বেড়েছে। কারণ, এর মাধ্যমে বাইরে যাওয়ার ঝুঁকি এড়িয়ে গ্রাহকরা ঘরে বসে সহজেই কাজ সারতে পারেন।

গ্রাহকরা ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহার করেই আর্থিক লেনদেন করতে আগ্রহী হওয়ায় চলতি বছরের জুলাইয়ে গত বছরের চেয়ে গ্রাহক সংখ্যা ৪৩ শতাংশেরও বেশি বেড়ে ৫৪ লাখ ৭২ হাজারে দাঁড়িয়েছে।

গত বছরের জুলাইয়ে ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহার করা গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ৩৮ লাখ ২২ হাজার। আর চলতি বছরের জুনে এ সংখ্যা ছিল ৫৩ লাখ ৫৫ হাজার।

ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডিজিটাল ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান আমিন মো. মেহেদী হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কোনো গ্রাহক একবার ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা নিলে এরপর থেকে এই সেবাই ব্যবহার করেন। বিশ্বব্যাপী মহামারির আঘাতের পর থেকেই ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়েছে।'

তিনি জানান, ২০২০ ও ২০২১ সালে ইবিএলের গ্রাহকদের মধ্যে লেনদেনের গতানুগতিক পদ্ধতি থেকে ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে স্থানান্তরের হার ৬০০ শতাংশ বেড়েছে। এখন বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকটির ৯১ শতাংশ লেনদেন হয় অনলাইনে এবং বাকি লেনদেন হয় শাখায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, '২০১৬ সালে আমি যখন পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগে যোগদান করি, তখন ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দৈনিক মাত্র ২ থেকে ৩ কোটি টাকা লেনদেন হতো। এখন দৈনিক ১৫০ থেকে ২০০ কোটি টাকার লেনদেন ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হয়।'

তার মতে, প্রযুক্তি যেহেতু এগিয়ে চলেছে, তাই অনলাইন ব্যাংকিংই ভবিষ্যৎ।

তিনি বলেন, 'অনেক মানুষই ব্যাংকে যেতে আগ্রহী হবে না। সারা বিশ্বেই এমনটা ঘটছে।'

মেজবাউল হকের মতে, ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন বাড়ায় তা ব্যাংকের জন্যও সাশ্রয়ী। অর্থাৎ লেনদেন যদি অনলাইনে হয়, তাহলে ব্যাংক পরিচালনার খরচ অনেকাংশেই কমবে।

'ব্যাংকগুলোর খরচ কমানোর ও দক্ষতা নিশ্চিত করার এটাই একমাত্র উপায়', যোগ করেন তিনি।

গ্রাহকদের জন্য ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতিটি লেনদেনের সর্বোচ্চ সীমা ৩ লাখ টাকা। এভাবে দিনে সর্বোচ্চ ১০ বার এবং প্রতিদিন ১০ লাখ টাকা লেনদেন করা যাবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তবে, করপোরেট অ্যাকাউন্টের জন্য প্রতি লেনদেনে সীমা ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই অ্যাকাউন্ট থেকে দিনে সর্বোচ্চ ২০ বার এবং প্রতিদিন মোট ২৫ লাখ টাকার লেনদেন করা যাবে।

জুলাইয়ে বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার নেটওয়ার্কের (বিইএফটিএন) মাধ্যমে ফান্ড ট্রান্সফার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকায়, যা আগের বছরের একই মাসে ছিল ৩২ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা থেকে প্রায় ২৩ শতাংশ বেশি। তবে, জুনের ৪৫ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকার চেয়ে জুলাইয়ে অনলাইন লেনদেন কম হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে।

২০১১ সালে চালু হওয়া বিইএফটিএন ছিল দেশের প্রথম কাগজবিহীন ইলেক্ট্রনিক আন্তব্যাংকিং ফান্ড ট্রান্সফার সিস্টেম। চেক-ক্লিয়ারিং সিস্টেমের মাধ্যমে এটি ক্রেডিট ও ডেবিট উভয় লেনদেনকে সহজতর করে তোলে।

এটি পে-রোল, বিদেশি ও দেশি রেমিট্যান্স, সামাজিক নিরাপত্তার অর্থপ্রদান, কোম্পানির লভ্যাংশ, বিল পেমেন্ট, করপোরেট পেমেন্ট, সরকারি ট্যাক্স পেমেন্ট, সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান এবং ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি অর্থ প্রদানের মতো লেনদেন পরিচালনা করতে পারে।

এ ছাড়াও, বীমা প্রিমিয়াম, ক্লাব বা সমিতি সাবস্ক্রিপশন ফি ও সমতুল্য মাসিক কিস্তির মতো অর্থ পরিশোধও এর মাধ্যমে করা যায়।

২০১৫ সাল থেকে উচ্চমূল্য ও টাইম-ক্রিটিক্যাল পেমেন্ট সম্পাদন করে আসছে বাংলাদেশ রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (বিডি-আরটিজিএস)। এর মাধ্যমে লেনদেন জুলাইয়ে প্রায় ৩ গুণ বেড়ে ৪ লাখ ১৫ হাজার ৫২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর আগের বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪১০ কোটি টাকা।

তবে জুনের ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকার তুলনায় জুলাইয়ে এর পরিমাণ প্রায় ২৪ শতাংশ কম ছিল।

আরটিজিএসের মাধ্যমে করা লেনদেনগুলো রিয়েল-টাইম হলেও বিইএফটিএনের মাধ্যমে করা লেনদেন রিয়েল-টাইম নয়। এ ছাড়া, কেন্দ্রীয় ব্যাংককের নির্দেশনা অনুযায়ী, ১ লাখ টাকার বেশি পরিমাণ অর্থ স্থানান্তরের জন্য আরটিজিএস ব্যবহার করা যাবে।

ইবিএলের আমিন মো. মেহেদী হাসান বলেন, অতীতে ইন্টারনেট ব্যাংকিং ফান্ড ট্রান্সফার স্থানান্তর ও মোবাইল রিচার্জের মাধ্যম ছিল। এখন এটি দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অংশ হয়ে উঠেছে।

'একজন মানুষের প্রতিদিন যেই পরিমাণই নগদ সহায়তাই প্রয়োজন হোক না কেন, বাংলাদেশের প্রায় সব ব্যাংকই সেবার মাধ্যমে তা পূরণ করছে। ইন্টারনেট ব্যাংকিং ৫ বছরের ব্যবধানে একটি অতি প্রয়োজনীয় পরিষেবায় রূপান্তরিত হয়েছে', যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
EU helping Bangladesh to strengthen border security

EU recommends revising ICT's legal framework in line with int'l standards

EU also underlined the importance of ensuring due process at all stages of proceedings to ensure justice

1h ago