বছরের ব্যবধানে আটার দাম বেড়েছে ৬২ শতাংশ

খুলনার একটি হোটেলে আটা দিয়ে রুটি বানানো হচ্ছে। ছবি: হাবিবুর রহমান

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব আমদানির ওপর পড়ায় দেশীয় বাজারে শস্য জাতীয় পণ্যের সরবরাহ ও মজুত কমে গেছে। এতে বাংলাদেশে আটার দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে।

খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, আটার খুচরা মূল্য বেড়ে এ বছরের সেপ্টেম্বরে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা ১০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় এ বছরের একই মাসে আটার দাম ৬২ শতাংশ বেশি ছিল।

গত ৪ অক্টোবর রাজধানীর খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজি আটা ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি করেন, যা এর আগের মাসের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি এবং এক বছর আগের একই সময়ের চেয়ে ৬২ শতাংশ বেশি।

আমদানিকারক ও প্রক্রিয়াজাতকারীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে গমের মূল্যবৃদ্ধি, টাকার বিপরীতে ডলারের মানবৃদ্ধি এবং মজুত কমায় বিস্কুট ও বেকারিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত গমের দামও বেড়েছে।

২০২২ সালের মে মাসে ভারত স্থানীয় বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য শস্য জাতীয় পণ্য রপ্তানি সীমাবদ্ধ করে। যার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশি বাজারেও। কারণ ২০২০ সাল থেকেই গমের জন্য বাংলাদেশের প্রধান উৎস ভারত। যুদ্ধের কারণে ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ভারত এ সিদ্ধান্ত নেয়।

২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের গম আমদানি ৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারি ও বেসরকারি আমদানি ২৫ শতাংশ কমে ৪০ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে।

আর ২০২২-২৩ অর্থবছরের ২৫ আগস্ট পর্যন্ত মোট গম আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৬২ লাখ টনে, যা এর আগের বছরের একই সময়ের ২ দশমিক ৪৮ লাখ টনের তুলনায় ৩৫ শতাংশ কম।

নারায়ণগঞ্জের আটা ও ময়দা মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'বাজারে গমের সরবরাহ কম। আমরা যখন সরবরাহ পাই, তখন এর দামও বেশি হয়।'

চট্টগ্রামভিত্তিক পণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বাশার চৌধুরী বলেন, 'মে মাসের পর ভারত থেকে গম আসা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিবেশী দেশের এ নিষেধাজ্ঞার পর আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম বেড়েছে। একইসঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবও রয়েছে।'

অভ্যন্তরীণ উৎপাদন কম হওয়ায় দেশের মোট বার্ষিক চাহিদার তিন-চতুর্থাংশই আমদানি-নির্ভর।

ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে আমদানি করা গম ১৫ অক্টোবরের মধ্যে বাংলাদেশে আসবে উল্লেখ করে আবুল বাশার চৌধুরী বলেন, 'গমের মজুত, বিশেষ করে বেসরকারি খাতের মজুত দেশে ইতিহাসে এখন সর্বনিম্নে আছে।'

ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে আমদানি করা গম এলে সহজলভ্যতা বাড়বে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'প্রায় ৫ লাখ টন গম নিয়ে ৬ থেকে ৭টি জাহাজ ইতোমধ্যে রওনা দিয়েছে।'

আরেক আমদানিকারক ও প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের জ্যেষ্ঠ সহকারী মহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার বলেন, 'গমের প্রধান উৎস ভারত, রাশিয়া ও ইউক্রেন। গমে প্রোটিনের পরিমাণ কম এবং পরোটা তৈরিতে ব্যবহৃত ময়দা বা প্রিমিয়াম মানের ময়দার চেয়ে এর দাম তুলনামূলকভাবে কম। সফট রেড উইনটার (এসআরডব্লিউ) গম রুটির জন্য ময়দা তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়, যা এখনো আন্তর্জাতিক বাজারে জনপ্রিয়।'

এ ছাড়াও, আমদানি পণ্যের জন্য ঋণপত্র (এলওসি) খোলার ক্ষেত্রেও ব্যবসায়ীরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Beximco workers' protest turns violent in Gazipur

Demonstrators set fire to Grameen Fabrics factory, vehicles, vandalise property

26m ago