মরিয়ম মান্নানসহ রহিমা বেগমের পরিবারের সদস্যদের শাস্তি দাবি ভুক্তভোগী পরিবারের

রহিমা বেগমের 'নিখোঁজের' ঘটনায় আটকদের পরিবারের সদস্যদের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত

খুলনার মহেশ্বর বনিকপাড়া থেকে রহিমা বেগমের 'নিখোঁজের' ঘটনায় আটক একই এলাকার ৫ জন এখন কারাগারে আছেন। আটককৃতদের মুক্তি ও রহিমা বেগমের পরিবারের সদস্যদের শাস্তি দাবি করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।

এ দাবিতে আজ মঙ্গলবার সকালে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা বলেন, 'অপহরণের নাটক সাজানো রহিমা বেগম ও তার মেয়ে মরিয়মসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে প্রশাসন, সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে। পরে প্রতিবেশী ৫ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তারা এখন জেলহাজতে আছেন। কিন্তু পরে দেখা গেল পুলিশ রহিমা বেগমকে উদ্ধার করেছে স্বাভাবিকভাবে। তিনি ফরিদপুরে যেখানে ছিলেন, সেখানে স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে জন্ম নিবন্ধন আনতে গিয়েছিলেন। এ থেকে বোঝা যায় ঘটনার পেছনে তাদের কোনো মোটিভ ছিল।'

রহিমা বেগমের 'নিখোঁজের' ঘটনায় করা অপহরণ মামলায় আসামি ছিলেন প্রতিবেশী মো. মহিউদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া, রফিকুল ইসলাম পলাশ, মোহাম্মদ জুয়েল ও হেলাল শরীফ। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করার পর তারা এখন জেলহাজতে আছেন।

গ্রেপ্তার গোলাম কিবরিয়া খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রধান প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী। তার ভাই রবিউল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'কোনো সম্মানিত ব্যক্তি যখন জেলে থাকেন তার মতো বিড়ম্বনা আর নেই। সারাদেশের মানুষ এমনকি আমাদের পরিচিতজনরা আমাদের এখন বাঁকা চোখে দেখছেন আমাদের। অনেকে আমাদের এড়িয়ে চলেছেন।'

'তার যে ক্ষতি হলো সে ক্ষতিপূরণ কে দেবে,' প্রশ্ন রাখেন রবিউল ইসলাম।

তিনি বলেন, 'একটি জমি দখলে রাখতে তারাই নাটক সাজিয়েছে। আমরা আগেও পুলিশকে জানিয়েছিলাম। কারণ অন্যদের কেনা জমি তারা দখল করে রাখলেও, আদালত একদিন রহিমা বেগমের বিপক্ষে রায় দেবে। সেদিন জমি ছেড়ে দিতে হবে। শুধু জমি দখলছাড়া না করতে তারা এই নাটক সাজিয়েছেন।'

সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় যোগীপোল ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শেখ মামুন বলেন, 'ঘটনার পরপর আমরা নিজেরা পুলিশের সহায়তায় অন্তত ৪টি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখেছি। মরিয়ম বেগমের বাড়ির উল্টোদিকে লাগানো একটি সিসি ক্যামেরা দেখা যায়, রাত ১০টার পর তিনি তার বাড়ির গেটের সামনে এদিক ওদিক উঁকি মারছেন। তারপর তিনি ভেতরে চলে যান। তাকে আর কোনো ফুটেজে দেখা যায়নি।'

'তাছাড়া ঘটনার দিন তিনি পুরোনো স্যান্ডেল এবং কাপড় ছেড়ে নতুন পোশাক পরে বেড়িয়েছেন বলে তার স্বামী বেল্লাল ঘটক এলাকাবাসীর কাছে স্বীকার করেছেন,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'মরিয়ম মান্নান আমাদের হুমকি দিয়েছেন যে যারা তাদের এই ঘটনা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করবে তাদের জেলে দেওয়া হবে।'

ওই মামলার ৫ নম্বর আসামি হেলাল শরীফের স্ত্রী মনিরা আক্তার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'অপহরণের মতো মিথ্যা মামলায় আমার স্বামীকে আজ জেলে যেতে হয়েছে। সামাজিকভাবে অপদস্থ হতে হয়েছে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। দেশের মানুষ জানলো যে আমার স্বামী অপহরণের সঙ্গে জড়িত। আমরা এর বিচার চাই।'


 
তিনি বলেন, 'এরকম মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা যারা করেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আমরা পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যত রকম আইনি প্রতিকার চাওয়া যায় সবগুলো চাইব আমরা।' 

'আমার স্বামীর এই কয়দিনের ব্যবসার যে ক্ষতি হয়েছে, সে ক্ষতিপূরণের মামলা করব। এক বছর আগে জমি নিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে রহিমা বেগমের পরিবারের মারামারি হয়েছিল। থানা পুলিশ এবং আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। তখন থেকে স্থানীয়রা তাদের সঙ্গে মিশতে চায় না,' যোগ করেন তিনি।

মনিরা আক্তার আরও বলেন, 'আমার মেয়ে নবম শ্রেণীতে পড়ে, গত বেশ কয়েকদিন ধরে সে স্কুলে যেতে পারছে। তাকে বিভিন্ন রকম কটূক্তি করা হয়েছে রহিমা বেগমের ইস্যু নিয়ে। এর দায়ভার রহিমা বেগমের পরিবারকে নিতে হবে। আমার স্বামীর সাথে পরামর্শ করে খুব শিগগিরই আমি আইনি প্রতিকার চাইব।'

ফরিদপুর থেকে উদ্ধারের পর গত রোববার আদালতের আদেশে রহিমা বেগমকে মেয়ে আদুরি আক্তারের জিম্মায় দেয় পিবিআই। ওই রাতেই আদুরী ও মা রহিমাকে নিয়ে ঢাকা যান মরিয়ম মান্নান।

তারা এখন ঢাকায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আছেন। যোগাযোগ করা হলে মরিয়ম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সোমবার সকালে তিনি রহিমা বেগমকে ডাক্তার দেখাতে নিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, 'আদালত থেকে মুক্তির পর মাকে নিয়ে প্রথমে খুলনায় বয়রার বাসায় যাই। মায়ের জন্য খুলনা নিরাপদ মনে করিনি। তাই রাতেই খুলনা ত্যাগ করেছি।'

 

Comments

The Daily Star  | English

S Alam threatens int'l legal action against govt over asset freezing: FT

Alam says his family's bank accounts were frozen, they were subjected to travel bans, and they lost control of their companies, all while facing investigations for alleged money laundering without formal notification.

1h ago