ইতালির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন জর্জিয়া মেলোনি

ইতালির নতুন প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন জর্জিয়া মেলোনি। ছবি: এপি
ইতালির নতুন প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন জর্জিয়া মেলোনি। ছবি: এপি

ইতালির নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন জর্জিয়া মেলোনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ডানপন্থী (ফার-রাইট) দলের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি কনজারভেটিভ জোটকে রোববারের নির্বাচনে সাফল্য এনে দিয়েছেন।

আজ সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে মতে, নির্বাচনের প্রাথমিক ফল অনুযায়ী, পার্লামেন্টের উভয় কক্ষেই ডানপন্থী ব্লক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে চলেছে।

ফলে দীর্ঘদিনের ভঙ্গুর ও গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতির অবসান হয়ে দেশটিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

তবে মেলোনি ও তার জোটের মিত্রদের সামনে রয়েছে অনেকগুলো গুরুতর সমস্যা, যার মধ্যে রয়েছে দ্রুত বাড়তে থাকা জ্বালানির দাম, ইউক্রেনের যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক মন্দা।

সোমবার সকালে ন্যাশনালিস্ট ব্রাদার্স অব ইতালি দলের সমর্থকদের উদ্দেশ্যে মেলোনি (৪৫) বলেন, 'আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে এটা শেষের মুহূর্ত নয়, বরং এখান থেকেই সব শুরু হতে যাচ্ছে। আগামীকাল থেকেই আমাদের নিজেদেরকে প্রমাণ করার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।'

ইতালির বোলোনা শহরে ভোটগণনা চলছে। ছবি: এপি
ইতালির বোলোনা শহরে ভোটগণনা চলছে। ছবি: এপি

মেলোনি তার দলের ফ্যাসিবাদি অতীতকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না। তিনি দলটিকে যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ দলের মতো মূল ধারার রাজনৈতিক দল হিসেবে উপস্থাপন করতে চান। তিনি ইউক্রেনে পশ্চিমের অবলম্বন করা নীতিমালাকে সমর্থন করার ও ইতালির ভঙ্গুর অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ঝুঁকির মুখে না ফেলার অঙ্গীকার জানিয়েছেন।

জয়ের ঘোষণার পর দেওয়া বক্তব্যে মেলোনি বলেন, 'আমাদেরকে যদি এই দেশ শাসনের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে আমরা সেটি সব ইতালীয়দের জন্য করবো এবং আমাদের উদ্দেশ্য হবে সব মানুষকে একতাবদ্ধ করা এবং এক্ষেত্রে, যেওসব বিষয় আমাদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে, সেগুলোর পরিবর্তে যেগুলো আমাদেরকে একতাবদ্ধ করে, সেগুলোর দিকে আমাদের নজর বেশি থাকবে।'

'এখন দায়িত্বশীল হওয়ার সময়', যোগ করেন তিনি।

প্রায় অর্ধেকেরও বেশি ভোট গণনার পর ব্রাদার্স অব ইতালি প্রায় ২৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলটি মাত্র ৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ভোটাররা দেশটির বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে ইতোপূর্বে সুযোগ পায়নি এমন একটি দলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।

মেলোনির প্রধান মিত্র মাত্তেও সালভিনির দল ৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে। গতবারের নির্বাচনে তার দল 'লিগ ফর সালভিনি প্রিমিয়ার' ১৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল।

জোটের অপর দল সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ফুটবল দল এসি মিলানের সাবেক মালিক সিলভিও বার্লুসকোনির ফরজা ইতালিয়া। এই দলটি ৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে।

ফলে সার্বিকভাবে ব্রাদার্স অফ ইতালি জোটের সবচেয়ে শক্তিশালী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

জোটের ৩ নেতা (বাম থেকে) মাত্তেও সাল্ভিনি, সিলভিও বার্লুসকোনি ও জর্জিয়া মেলোনি। ছবি: রয়টার্স
জোটের ৩ নেতা (বাম থেকে) মাত্তেও সাল্ভিনি, সিলভিও বার্লুসকোনি ও জর্জিয়া মেলোনি। ছবি: রয়টার্স

আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, পার্লামেন্টের ২ কক্ষেই জোট প্রাধান্য বিস্তার করতে পারবে। তবে জোটের সদস্যদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মতভেদ রয়েছে।

সালভিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমের বিধিনিষেধের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি এবং বার্লুসকোনি প্রায়ই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।

বাড়তে থাকা জ্বালানি বিলের মোকাবিলা প্রসঙ্গে তারা কর রেয়াত, পেনশনের সংস্কারসহ বেশ কিছু উদ্যোগের কথা বলেছেন, তবে এগুলোর বাস্তবায়ন করা বেশ কঠিন হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন।

মেলোনি সদ্য-সাবেক প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘির কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেবেন।

মেলোনির জোট বড় ব্যবধানে জয়ী হলেও, এবারের নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি অনেক কম ছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৭৪ শতাংশ ভোটার ভোট দেন, যা ছিল ইতালির ইতিহাসে কোনো নির্বাচনে সবচেয়ে কম ভোটার ভোট দেওয়ার নতুন রেকর্ড। এবারের নির্বাচনে ভোটার আরও কমে ৬৪ শতাংশ হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Cops get whole set of new uniforms

The rules were published through a gazette yesterday, repealing the previous dress code of 2004

1h ago