আমি নিশ্চিত লাশটি মায়ের: মরিয়ম মান্নান

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বওলা গ্রামে উদ্ধারের পর দাফন হওয়া অজ্ঞাত নারীর মরদেহ নিজের মা রহিমা বেগমের বলে দাবি করেছেন খুলনার দৌলতপুরের মরিয়ম মান্নান।
মায়ের মরদেহ শনাক্তের জন্য আজ ২ বোন মাহফুজা আক্তার ও আদরি আক্তার এবং ভাবী কানিজ ফাতেমাকে নিয়ে ফুলপুর থানায় যান মরিয়ম মান্নান। ছবি: স্টার

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বওলা গ্রামে উদ্ধারের পর দাফন হওয়া অজ্ঞাত নারীর মরদেহ নিজের মা রহিমা বেগমের বলে দাবি করেছেন খুলনার দৌলতপুরের মরিয়ম মান্নান।

পোশাক ও অন্যান্য আলামত দেখে মরদেহ মায়ের বলে দাবি করেছেন তিনি।

এ বিষয়ে ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মরদেহ শনাক্তের জন্য আজ শুক্রবার ২ বোন ও ভাবীসহ ফুলপুর থানায় পৌঁছান মরিয়ম। এরপর উদ্ধারকৃত নারীর অর্ধগলিত মরদেহের ছবি দেখে সেটি তার মায়ের বলে দাবি করেন তিনি।'

'তবে উদ্ধারকৃত মরদেহের পোশাক দেখে মরিয়ম নিশ্চিত হতে পারেননি সব পোশাক তার মায়ের কী না', যোগ করেন ওসি।

মরিয়ম উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি নিশ্চিত লাশটি আমার মায়ের। মায়ের চুল, কপাল, চোখ, হাত- এগুলো চিনতে সন্তানের কোনো প্রমাণ লাগে না। আমি চিনবো না-তো কে চিনবে। এগুলোও যদি নিশ্চিত প্রমাণ না হয়, তবে আমরা আইনগত প্রক্রিয়ায় যেতে রাজি আছি।'

'আমরা মাকে খুঁজছি, সে জীবিত হোক বা মৃত। মা যদি আত্মগোপনেও গিয়ে থাকেন, তা হলেও তো তাকে খুঁজে বের করতে হবে', বলেন তিনি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মরিয়ম বলেন, 'মায়ের ওষুধ, চশমা ও খরচের টাকা এখনো বাসায় পড়ে আছে। আমরা যেকোনো অবস্থায় মায়ের সন্ধান চাই।'

তিনি জানান, গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার বাসার উঠানের নলকূপে পানি আনতে যান রহিমা বেগম। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ।

বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে মরিয়ম তার ফেসবুকে লেখেন, 'আমার মায়ের লাশ পেয়েছি এই মাত্র।'

পুলিশ গত ১০ সেপ্টেম্বর ফুলপুরের বওলা পূর্বপাড়ার একটি গোরস্তান থেকে অজ্ঞাত নারীর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্ত শেষে ১২ সেপ্টেম্বর মরদেহটি কাজিয়াকান্দা কামিল মাদ্রাসা গোরস্তানে দাফন করা হয়। এরপর ফুলপুর থানার ওসি ফেসবুকে এই অজ্ঞাত নারীর সন্ধান চেয়ে একটি পোস্ট দিলে বৃহস্পতিবার রাতে ওসির সঙ্গে কথা বলেন মরিয়ম। এসময় অজ্ঞাত ওই নারীর পোশাকের কয়েকটি ছবি মরিয়মকে পাঠান ওসি। ওই পোশাক দেখেই অজ্ঞাত নারীর মরদেহকে মায়ের বলে দাবি করেন মরিয়ম।

পুলিশ উদ্ধারকৃত মরদেহের বয়স আনুমানিক ৩০ জানালেও, মরিয়ম তার মায়ের বয়স ৫২-৫৫ বছর বলে দাবি করেছেন।

এসময় মরিয়মের ২ বোন মাহফুজা আক্তার ও আদরি আক্তার এবং ভাবী কানিজ ফাতেমা উপস্থিত ছিলেন।

ওসি জানান, মরিয়ম ডিএনএ টেস্টের জন্য আজ একটি আবেদন করেছেন। তার আবেদনটি আগামী রোববার আদালতে পেশ করা হবে। আদালতের অনুমতি পেলে ডিএনএ টেস্টের জন্য নমুনা ঢাকায় পাঠানো হবে।

২৭ আগস্ট নিখোঁজ হওয়ার পর রাতে সম্ভাব্য সব স্থানে খুঁজেও না পেয়ে দৌলতপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন রহিমা বেগমের ছেলে। পরদিন মেয়ে আদুরি আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় অপহরণ মামলা করেন। পরে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ১৪ সেপ্টেম্বর মামলাটি পিবিআইতে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এরপর প্রক্রিয়া মেনে ১৭ সেপ্টেম্বর নথিপত্র বুঝে নেয় পিবিআই।

পিবিআই ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মো. রকিবুল আক্তার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ পর্যন্ত পুলিশ ও র‌্যাব যৌথ অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের রিমান্ডে নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে, যা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।'

তিনি বলেন, 'অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধারের পরপরই পিবিআই ছায়া তদন্ত শুরু করে।'

তারা বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বলেও জানান পুলিশ সুপার।

Comments

The Daily Star  | English

Political parties want road map to polls

Leaders of major political parties yesterday asked Chief Adviser Professor Muhammad Yunus for a road map to the reforms and the next general election.

1h ago