মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিতেই ডুবল খুলনা, কাজে আসছে না ৮২৩ কোটির প্রকল্প

খুলনা নগরীতে জলাবদ্ধতা। ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

আষাঢ়ের শুরুতেই মৌসুমের প্রথম ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা। সোমবার রাতভর বৃষ্টিতে নগরীর প্রধান সড়কগুলো হাঁটুপানিতে ডুবে যায়। নিম্নাঞ্চল ও বহু এলাকার বাসাবাড়ি-দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী।

বিশেষজ্ঞ ও নাগরিকেরা বলছেন, শত শত কোটি টাকা খরচ করে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও অপরিকল্পিত উন্নয়ন, খাল দখল ও নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার না করায় এই দুর্ভোগের পুনরাবৃত্তি ঘটছে।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এই বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে এবং তা আগামী ২০ জুন পর্যন্ত চলতে পারে। মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে অফিসগামী মানুষ ও শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন। নগরীর নতুন রাস্তা মোড় থেকে আবু নাসের হাসপাতাল এবং মুজগুন্নি সড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এ ছাড়া আহসান আহমেদ রোড, রয়েল মোড়, খানজাহান আলী সড়ক, বাস্তুহারা, বাইতিপাড়া, চানমারী, লবণচরা ও টুটপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, রুপসা নতুন বাজারের মতো এলাকাগুলোতে প্রায় কোমরসমান পানি জমে থাকতে দেখা যায়।

ছবি: হাবিবুর রহমান

৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তুষার কান্তি দাস বলেন, 'সকালে বাসা থেকে বের হয়েই দেখি রাস্তা ডুবে গেছে। আমার মোটরসাইকেলের অর্ধেকটাই ডুবে গিয়েছিল। খুলনা-যশোর মহাসড়ক ছাড়া শহরের প্রায় সব রাস্তাই পানির নিচে।' তিনি আরও জানান, তাঁদের এলাকার প্রধান সড়কের ড্রেন নির্মাণের কাজ অর্ধেক করে ফেলায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না।

শিরিশ নগর এলাকার রিকশাচালক আজমল হক প্রায় ৩০ বছর ধরে খুলনায় থাকেন। তিনি বলেন, 'আগে বৃষ্টি হলেও পানি বেশিক্ষণ থাকত না। কিন্তু গত ৮-১০ বছরে অবস্থা ভয়াবহ হয়েছে। এত ড্রেন আর কালভার্ট হয়েছে, কিন্তু কোনোটা দিয়েই পানি নামে না। জলাবদ্ধতা হলে আমাদের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু মালিককে ঠিকই জমার টাকা দিতে হয়।'

কেন এই জলাবদ্ধতা

নগরবাসীর অভিযোগ, খুলনা নগরীর পানি নিষ্কাশনের প্রধান মাধ্যম ২২টি খাল দখলমুক্ত ও সংস্কার না করা, নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার না করা এবং জলাধার ভরাট হয়ে যাওয়াতেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

খুলনা নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, ভৈরব ও রূপসা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীর পানিধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। ফলে বৃষ্টির পানি নদীতে নামতে পারছে না, বরং জোয়ারের সময় শহরের পানি আরও বাড়ছে। এ ছাড়া, নগরীর পশ্চিমাঞ্চলের বিল পাবলা ও রায়ের মহলের মতো প্রাকৃতিক জলাধারগুলো আবাসন ব্যবসায়ীরা ভরাট করে ফেলায় বৃষ্টির পানি জমার আর জায়গা নেই।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, চার বছর আগে জেলা প্রশাসন ২৬টি খালে ৪৬০ জন দখলদারকে চিহ্নিত করলেও তাদের উচ্ছেদে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। নগরীর ভেতর দিয়ে বয়ে চলা ময়ূর নদ খনন করা হলেও সেই মাটি নদীর পাড়ে রাখায় তা আবার নদীতেই ফিরে যাচ্ছে।

প্রশ্নবিদ্ধ ৮২৩ কোটির প্রকল্প

২০১৮ সালে ও ২০২৩ সালে নির্বাচিত মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের মূল প্রতিশ্রুতি ছিল জলাবদ্ধতা নিরসন। জলাবদ্ধতা নিরসনে ৮২৩ কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্প হাতে নেন তিনি। গত সাড়ে পাঁচ বছরে এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ছয়শ কোটি টাকা খরচ করে নগরীর বিভিন্ন ড্রেন নির্মাণ ও সাতটি খাল খনন করা হয়েছে। এরপরও নগরবাসী সুফল না পাওয়ায় প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজজামান বলেন, 'গত চার দশকে সব মেয়রই জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া প্রকল্প নিলে কোনো লাভ হবে না।'

এ বিষয়ে কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান বলেন, 'জলাবদ্ধতা নিরসন একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রকল্পের আওতায় পাম্প স্টেশন ও স্লুইসগেট সংস্কারের মতো কিছু কাজ এখনো বাকি আছে। এগুলো শেষ হলে নগরবাসী সুফল পাবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Gaza rescuers say Israeli forces kill 60, half near aid centres

Civil defence spokesman Mahmud Bassal told AFP that five people were killed while waiting for aid in the southern Gaza Strip and 26 others near a central area known as the Netzarim corridor, an Israeli-controlled strip of land that bisects the Palestinian territory

21m ago