বানিশান্তার কৃষিজমি রক্ষার দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃষকদের খোলা চিঠি

প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃষকদের খোলা চিঠি পাঠানো উপলক্ষে বানিশান্তায় কৃষকদের সমাবেশ। ছবি: সংগৃহীত

খুলনার দাকোপ উপজেলার বানিশান্তা ইউনিয়নের ৩০০ একর কৃষিজমি রক্ষার দাবিতে পোস্টকার্ডের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন এক হাজার কৃষক পরিবার। চিঠিতে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পশুর নদী ড্রেজিংয়ের বালু কৃষিজমিতে ফেলার সিদ্ধান্ত স্থগিত করে বিকল্প জায়গায় বালু ফেলার দাবি জানানো হয়।

আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় কৃষকরা ডাকযোগ তাদের চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছেন।

চিঠিতে বলা হয়, 'আমরা খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার বানিশান্তা ইউনিয়নের ভোজনখালি, আমতলা, বানিশান্তা, ঢাংমারি ও খাজুরা গ্রামের ১২০০ কৃষক পরিবারের ৫ হাজার মানুষ মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সর্বদা আতঙ্কে আছি। বন্দর কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, পশুর নদীর ড্রেজিংয়ের বালু ফেলার জন্য ১৫০০ একর জমি হুকুম দখল নেওয়া প্রয়োজন। ইতোমধ্যে মোংলা উপজেলায় ১২০০ একর জমিতে বালু ফেলা হচ্ছে। বাকি ৩০০ একর খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার বানিশান্তা ইউনিয়নের তিন ফসলি কৃষিজমি।'

এতে বানিশান্তা ইউনিয়নের ১২০০ কৃষক পরিবারের জীবন-জীবিকা হুমকির মধ্যে পড়েছে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, 'আমরা বানিশান্তা ইউনিয়নবাসী সংরক্ষিত কৃষিজমিতে আমন, আউশ, তরমুজ এবং শাকসবজি উৎপাদন করে থাকি। উৎপাদিত ফসলের আয় দিয়েই আমাদের জীবন চলে এবং সন্তানদের লেখাপড়াসহ অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করি। কিন্তু বিকল্প জায়গা থাকা সত্ত্বেও বন্দর কর্তৃপক্ষের ভুল সিদ্ধান্তে আজ ৩০০ একর কৃষিজমি ধ্বংস হতে চলেছে।'

চিঠিতে বানিশান্তার ৩০০ একর তিন ফসলি কৃষিজমি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন কৃষকরা।

মোংলা বন্দর সচল রাখতে পশুর নদীর খননকাজ চলছে। সেখান থেকে উত্তোলিত বালু মোংলার চিলা এলাকায় ৭০০ একর জমিতে ফেলা হয়েছে। এখন বাকি বালু খুলনার দাকোপ উপজেলার বানিশান্তা ইউনিয়নের ৩০০ একর কৃষিজমিতে ফেলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

তবে, এতে ওই ৩ ফসলি জমি পতিত হওয়ার পাশাপাশি কৃষি-নির্ভরশীল অন্তত ৫ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃষকদের খোলা চিঠি পাঠানো উপলক্ষে বানিশান্তায় এক সমাবেশে বক্তারা বলেন, 'আমরা ভেবেছিলাম মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পশুর নদী ড্রেজিংয়ের বালু ফেলার ভুল সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে কৃষকদের বিকল্প প্রস্তাব বিবেচনায় নেবেন। কিন্তু তিনি তা না করে বিভিন্ন মহলকে উস্কানি ও অপকৌশলের মাধ্যমে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করছেন। এ অবস্থায় আমরা প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।'

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং বানিশান্তা কৃষিজমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আয়োজনে বানিশান্তা-ভোজনখালি সংযোগ সড়কে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এতে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য পাপিয়া মিস্ত্রী।

এ সময় বানিশান্তা ইউনিয়ন কৃষিজমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির নেতা ও স্থানীয় কৃষক সত্যজিৎ গাইন বলেন, 'আমার ৭ বিঘা জমির ওপর আমার পরিবার নির্ভরশীল। এই জমিতে তরমুজ চাষ করি, ধান চাষ করি। আমার মতো এই অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষের পেশা কৃষি। এই জমিতে বালু ফেলা হলে আমাদের জীবন-জীবিকার ওপর যে হুমকি আসবে তা কোনোভাবেই সমাধান সম্ভব নয়। তখন বাস্তুহারা হওয়া ছাড়া আমাদের কোনো উপায় থাকবে না।'

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে একনেক সভায় অনুমোদিত পশুর নদী খনন প্রকল্পের আওতায় পশুর নদী থেকে প্রায় ২১৬ লাখ ঘনমিটার মাটি ও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ওই মাটি ও বালু দাকোপ ও মোংলা উপজেলার বিভিন্ন খাস ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ফেলানো হবে। এর মধ্যে দাকোপ উপজেলার বানিশান্তা ইউনিয়নের ৩০০ একর জমিতে খননকৃত মাটি ও বালু ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা এখন পশুর নদী পাড়ের মানুষের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka airport receives 2nd bomb threat

Operations at HSIA continue amid heightened security

2h ago