বাপা ও বানিশান্তা কৃষিজমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সংলাপ

 ‘বানিশান্তার ৩০০ একর জমিতে বালু ফেলায় বাস্তুচ্যুত হবে ১২০০ পরিবার’

শনিবার সকালে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবির বালু মিলনায়তনে বাপা এবং বানিশান্তা ইউনিয়ন কৃষিজমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সংলাপ। ছবি: দীপঙ্কর রায়

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বানিশান্তা ইউনিয়ন কৃষি জমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির এক সংলাপে বক্তারা বলেছেন, খুলনার দাকোপ উপজেলার বানিশান্তায় ৩০০ একর উর্বর ফসলি জমিতে পশুর নদী খননের বালু ফেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে ১ হাজার ২০০ পরিবার।

সংলাপে বক্তারা বলেন, এ সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর কৃষিজমি রক্ষা নির্দেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ইতোমধ্যেই খনন করা বালি ফেলার কারণে বাগেরহাটের মংলার চিলা এলাকার ৫০০ একর ভূমি বালুর স্তূপে পরিণত হয়েছে। একইসঙ্গে পশুর নদী পাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকা-স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। খনন করা বালি দ্বারা পশুর নদীর অববাহিকার ব-দ্বীপ পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হচ্ছে।

তারা আরও বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের একমাত্র জীবিকার উৎস কৃষিজমি এখন হুমকির মুখে পড়ছে। কৃষি জমিকে বাঁচাতে বন্দর কর্তৃপক্ষের বালু ফেলার পরিকল্পনা অবিলম্বে বাতিল করা দরকার।

আজ শনিবার সকালে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবির বালু মিলনায়তনে বাপা এবং বানিশান্তা ইউনিয়ন কৃষিজমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি 'পশুর নদী খননকৃত বালির কবল থেকে বাণীশান্তা ইউনিয়নের ৩০০ একর ৩ ফসলি কৃষি জমি রক্ষায় করণীয়' শীর্ষক এই সংলাপের আয়োজন করে।

বক্তারা বলেন, মংলা বন্দরকে টিকিয়ে রাখতে ও পশুর নদীর প্রাণ রক্ষায় নদী খনন জরুরি। কিন্তু, একইসঙ্গে নদী খনন করা বালু কোথায় রাখা হবে তার একটি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা থাকা জরুরি। নদী খননের সমস্যা সমাধানের জন্য টেকসই সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু, কোনোভাবেই মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ স্থানীয় বাসিন্দাদের কৃষি জমি রক্ষার কোনো চিন্তাভাবনা না করে ৩ ফসলি জমিতে বালু ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে তারা মংলার চিলা এলাকায় ৫০০ একর জায়গায় বালু ফেলেছে।

বানিশান্তা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুদেব কুমার রায় বলেন, 'পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রয়োজন। স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে স্বচ্ছভাবে যথাযথ পরিবেশগত অভিঘাত পর্যালোচনার মাধ্যমে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে পশুর নদীর নাব্যতা সংকট সমাধান করতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'যে স্থানে বালু ফেলা হবে সেখানে এখন তরমুজের আবাদ। কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকার তরমুজ উৎপাদন হবে এখানে। বছরের অন্য সময় আমন ও বোরো ধান হয়। পশুর নদীর বালু এখানে ফেললে কমপক্ষে ১২০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত ও বাস্তুচ্যুত হবে।'

বাপার মোংলা শাখার আহ্বায়ক মো. নূর আলম শেখ বলেন, 'মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বছরে বিঘাপ্রতি ২ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবে জমির মালিকদের। কিন্তু, এলাকার কৃষকরা বিঘাপ্রতি একটি জমিতে ৪ লাখ টাকার তরমুজ ও ২ সিজনে ৪ লাখ টাকার ধান বিক্রি করে। অর্থাৎ যেখানে ১ বছরে কৃষকরা ৮ লাখ টাকার ফসল বিক্রি করতে পারে, সেখানে বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে মাত্র ২ লাখ টাকা।'

বাপা'র সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, 'সরকারের মধ্যে ভালো-মন্দ লোক আছে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বানিশান্তার কৃষিজমিতে বালু ফেলার ষড়যন্ত্র করছে। আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। বানিশান্তার সংখ্যালঘু মানুষের কৃষিজমিতে বালু ফেললে সরকার আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হবে।'

সাবেক সংসদ সদস্য ননী গোপাল মণ্ডল বলেন, 'বানিশান্তার কৃষি জমিতে বালু ফেলার বিষয় জাতীয় সংসদে আলোচনা দরকার ছিল। সংসদ সদস্য আছে, পার্লামেন্ট আছে কিন্তু সংসদে আলোচনা হচ্ছে না। পশুর নদীর বালু ফেলার জন্যে বিকল্প জায়গা খুঁজতে হবে। প্রয়োজনে বন্দরকে আরও দক্ষিণে সরিয়ে নিতে হবে। বন্দর বড় নাকি মানুষ বড়?'

বাপা খুলনার সমন্বয়কারী বাবুল হাওলাদার কৃষি এবং কৃষক বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধভাবে গণসংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

সংলাপে খুলনার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ছাত্র-শিক্ষক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বানিশান্তার বাসিন্দারা উপস্থিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

India curbs import of Bangladeshi jute, woven fabrics, yarn

However, the products will be allowed to be imported only through Nhava Sheva seaport in Maharashtra

1h ago