৪ বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিতে উদ্বিগ্ন ১ লাখ ৬৮ হাজার এসএসসি পরীক্ষার্থী
এসএসসি পরীক্ষা শুরুর মাঝপথে এসে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের ১ লাখ ৬৮ হাজারেরও বেশি পরীক্ষার্থী। ৪ বিষয়ের পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে এবার স্থগিত করা হয়েছে অন্য ৪ বিষয়ের পরীক্ষা। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে এই শিক্ষা বোর্ডের অধীনের পরীক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা।
সাধারণত এসএসসি পরীক্ষা হয়ে থাকে বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে অথবা মার্চ মাসের শুরুর দিকে। তবে করোনা পরিস্থিতির জন্য এবার এই পরীক্ষা পিছিয়ে প্রথমে ১৯ জুন নির্ধারণ করা হয়। এরপর দেশের কয়েকটি স্থানে বন্যার কারণে স্থগিত করা হয়ে যায় পরীক্ষা। পরে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় পরীক্ষা।
কিন্তু বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের ৪টি পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে স্থগিত করা হয় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের ৪টি বিষয়ের পরীক্ষা। এতে আবারো অনিশ্চয়তার পড়ে যায় এই শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থীরা।
দিনাজপুর শহরের ঈদগাহ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী জেরিন আক্তার বলেন, আমাদের শিক্ষা জীবনের অনিশ্চয়তার কালো মেঘ যেন কিছুতেই কাটছে না। প্রায় তিন বছর ধরে একই ক্লাসে আছি। একই বই পড়তে আর ভালো লাগে না। নানা অনিশ্চয়তার পর ১৫ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা শুরু হলো। কিন্তু আবারও চারটি পরীক্ষা স্থগিত হলো। কবে এসব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, আর রেজাল্টই বা কবে হবে। এ নিয়ে শিক্ষাজীবন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
একই বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী ইলেন পারভীন নদী বলেন, পরীক্ষা সময়মতো না হওয়ায় আমাদের বেশকিছু বান্ধবীর বিয়ে হয়ে গেছে। আমরাও পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। সময়মতো পরীক্ষা না হওয়ায় পড়ালেখায় মন বসছিল না। অবশেষে পরীক্ষা শুরু হওয়ায় আশার আলো দেখছিলাম। কিন্তু আবার ৪টি গুরুত্বপুর্ণ পরীক্ষা স্থগিত হলো। কবে কী হবে জানি না।
একই রকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন, দিনাজপুর শহরের সারদ্বেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী সাদিয়া তাসনিম রূপন্তী।
ছেলে-মেয়েদের পরীক্ষা সময়মতো অনুষ্ঠিত না হওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছেন অভিভাবকরাও।
দিনাজপুর শহরের আব্দুল আলী নামে এক অভিভাবক জানান, এমনিতেই দেরি করে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তার উপর প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে আবার পরীক্ষা স্থগিত হলো। তিনি প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় শিক্ষকরাও। দিনাজপুর শহরের সারদ্বেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতন কুমার রায় জানান, বার বার পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যেসব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে, সেসব পরীক্ষার তারিখ দ্রুত ঘোষণা এবং সময়মতো পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগে স্থগিত করা হয়েছে গণিত, পদার্থ বিজ্ঞান, কৃষি বিজ্ঞান ও রসায়ন পরীক্ষা। রুটিন অনুযায়ী গণিত পরীক্ষা ২২ সেপ্টেম্বর, পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষা ২৪ সেপ্টেম্বর, কৃষি বিজ্ঞান পরীক্ষা ২৫ সেপ্টেম্বর এবং রসায়ন পরীক্ষা ২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. কামরুল ইসলাম জানান, স্থগিত চারটি বিষয় বাদে অন্যান্য পরীক্ষা রুটিন অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে। স্থগিত চারটি বিষয়ের পরীক্ষার তারিখ পরবর্তীতে জানানো হবে। শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. কামরুল ইসলাম আরও জানান, ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে একটি পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিবসহ ৩ শিক্ষককে আটক করা হয়েছে। এই ঘটনায় ভুরুঙ্গামারী থানায় একটি মামলাও হয়েছে।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ১ লাখ ৭৩ হাজার ৯৬১ জন। কিন্তু সবশেষ ইংরেজী দ্বিতীয় পত্র বিষয় পর্যন্ত পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ লাখ ৬৮ হাজার ২৮ জন পরীক্ষার্থী।
Comments