৪ নয়, ৬ বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে
কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রথম ৪ বিষয়ের (গণিত, কৃষি শিক্ষা, পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়ন) প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ উঠলেও পরবর্তীতে ৬টি বিষয়ের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। এই কারণে ৪টি বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত করে তারিখ পুনর্নির্ধারণ করা হলেও প্রশ্নপত্র বাতিল করা হয়েছে ৬ বিষয়ের।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে প্রথমে গণিত, কৃষি শিক্ষা, পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়ন বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. কামরুল ইসলামের সই করা এক চিঠিতে জানা গেছে ওই ৪টি বিষয় ছাড়াও আরও ২টি বিষয়ের প্রশ্নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
এই দুটি বিষয় হচ্ছে-জীব বিজ্ঞান (বিষয় কোড-১৩৮) ও উচ্চতর গণিত (বিষয় কোড-১২৬)।
সংশ্লিষ্ট ৮ জেলার জেলা প্রশাসককে দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় স্থগিতকৃত ৪ বিষয় যথাক্রমে গণিত, পদার্থ বিজ্ঞান, কৃষি শিক্ষা ও রসায়ন এবং আরও ২ বিষয় যথাক্রমে জীববিজ্ঞান ও উচ্চতর গণিতসহ মোট ৬ বিষয়ে ইতোপূর্বে সরবরাহকৃত প্রশ্নপত্র বাতিল করা হলো। তাই আগামী ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাতিলকৃত প্রশ্নপত্র ট্রেজারি অফিসগুলোতে কঠোর নিরাপত্তার সাথে আলাদা করে আলাদা ট্রাংকে সংরক্ষণ করার অনুরোধ করা হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, উক্ত ৬ বিষয়ের নতুন প্রশ্নপত্র যথাসময়ে সরবরাহ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম জানান, চলমান এসএসসি পরীক্ষার মোট ৬টি বিষয়ের প্রশ্নপত্র নিয়ে সমস্যা হয়েছে। তাই ৬টি বিষয়ের নতুন প্রশ্নপত্র তৈরি করা হচ্ছে। যথাসময়ে তা সরবরাহ করা হবে।
তিনি বলেন, স্থগিত ৪ বিষয়ের পরীক্ষার তারিখ পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। জীববিজ্ঞান এবং উচ্চতর গণিত বিষয়ের পরীক্ষা ঘোষিত রুটিন অনুযায়ীই অনুষ্ঠিত হবে। এতে নতুন প্রশ্নপত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে স্থগিত হওয়া এসএসসি পরীক্ষার চারটি বিষয়ের পরীক্ষার তারিখ পুননির্ধারণ করেছে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে (সংশোধিত) এ তথ্য জানা যায়।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, পরিবর্তিত সময়সূচী অনুযায়ী গণিত (বিষয় কোড-১০৯) বিষয়ের পরীক্ষা ২২ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে ১০ অক্টোবর, কৃষি শিক্ষা (বিষয় কোড-১৩৪) বিষয়ের পরীক্ষা ২৫ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে ১১ অক্টোবর, রসায়ন (বিষয় কোড-১৩৭) বিষয়ের পরীক্ষা ২৬ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে ১৩ অক্টোবর এবং পদার্থ বিজ্ঞান (বিষয় কোড-১৩৬) বিষয়ের পরীক্ষা ২৪ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। একই সাথে ব্যবহারিক পরীক্ষা ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর এর পরিবর্তে ১৬ অক্টোবর থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া অন্যান্য পরীক্ষা আগের রুটিন অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে।
তিন ঘণ্টার মধ্যেই রুটিন সংশোধন
প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার পৌনে ১টায় স্থগিত পরীক্ষার তারিখ পুনর্নির্ধারণ করলেও তিন ঘণ্টার মধ্যেই আবার তা সংশোধন করে। সংশোধনীতে পরিবর্তিত ৩টি বিষয়ে তারিখ ঠিক থাকলেও আবারও পরিবর্তন করেছে পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষা। পৌনে ১ টার ঘোষিত নোটিশে পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষার পরিবর্তিত তারিখ নির্ধারণ করা হয় ১২ অক্টোবর। কিন্তু বিকেল পৌনে ৩ টার সংশোধিত নোটিশে পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষা ১২ অক্টোবরের পরিবর্তে ১৫ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়াও ব্যবহারিক পরীক্ষা ১৫ অক্টোবর থেকে পিছিয়ে ১৬ অক্টোবর থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।
এ বিষয়ে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম জানান, আগামী ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই কারণে ১২ অক্টোবরের পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষা পিছিয়ে ১৫ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়।
মামলা হবে শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকেও
কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে ভুরুঙ্গামারী থানায় স্থানীয় ট্যাগ অফিসার আদম মালিক চৌধুরী বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। এই ঘটনায় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকেও মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম জানান, প্রশ্নপত্র নিয়ে সমস্যার ঘটনায় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের গঠিত তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার থেকেই তদন্ত কাজ শুরু করেছে। তদন্ত কমিটিকে ৫ কর্মদিবসের মধ্যেই রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। এই তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে এই ঘটনায় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকেও একটি মামলা করা হবে।
তিনি জানান, তদন্ত রিপোর্টে যাদের নাম আসবে-তাদের বিরুদ্ধেই মামলা করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষা প্রশ্নপত্র নিয়ে সমস্যা সৃষ্টির ঘটনায় ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক মো. ফারাজ উদ্দীন তালুকদারকে। কমিটির অপর দুজন সদস্য হচ্ছেন-দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (উমা) প্রফেসর মো. হারুন-অর রশিদ মন্ডল এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. আকতারুজ্জামান।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৭৩ হাজার ৯৬১ জন। কিন্তু সবশেষ ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র বিষয় পর্যন্ত পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ লাখ ৬৮ হাজার ২৮ জন পরীক্ষার্থী।
২০০৬ সালে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের কার্যক্রম চালু হওয়ার পর ২০০৯ সাল থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া শুরু হয়।
Comments