৫ জেলায় বিএনপির সঙ্গে পুলিশ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আহত দেড়শতাধিক

৫ জেলায় বিএনপির সঙ্গে পুলিশ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আহত দেড়শতাধিক
নারায়ণগঞ্জ সদরে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে এক যুবক নিহত এবং প্রায় অর্ধ শতাধিক আহত হয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে দেশের ৪টি জেলায় পুলিশ ও ১টি জেলায় ছাত্রলীগের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

নারায়ণগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে এক যুবক নিহত এবং প্রায় অর্ধ শতাধিক আহত হয়েছেন। এ ছাড়া রংপুর, নেত্রকোণা, সিরাজগঞ্জ, নাটোর ও মানিকগঞ্জে সংঘর্ষে পুলিশসহ দেড়শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।

রংপুরে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে ৩ পুলিশসহ আহত ১০

রংপুরে বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মিছিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশ এবং মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবসহ ১০ জন আহত হয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ের দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিলটি বের হয়ে জাহাজ কোম্পানি মোড়ের দিকে গেলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে।

সেসময় নেতাকর্মীরা ব্যারিকেড উপেক্ষা করে এগুতে ধরলে পুলিশের সঙ্গে হট্টগোল শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মৃদু লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এতে ৩ পুলিশ সদস্যসহ আহত হয় ১০ জন।

পরে গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হোসেন আলী বলেন, 'আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করার সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। এতে পুলিশের ৩ জন সদস্য আহত হয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।'

৫ জেলায় বিএনপির সঙ্গে পুলিশ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আহত দেড়শতাধিক
নেত্রকোণায় পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ, এএসপিসহ আহত ৫৮। ছবি: সংগৃহীত

নেত্রকোণায় পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ, এএসপিসহ আহত ৫৮

বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনকালে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে নেত্রকোণার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ ফররুজ্জামান জুয়েলসহ ৮ জন পুলিশ সদস্য ও কমপক্ষে ৫০ জন বিএনপির নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে জেলা শহরের ছোট বাজারে বিএনপি দলীয় অফিসের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ও পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

নেত্রকোনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. মো. আনোয়ারুল হক বলেন, '১২ গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ ৫ জনকে নেত্রকোণা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।'

জানতে চাইলে নেত্রকোনা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মো. সোহেল রানা বলেন, 'বিএনপি কর্মসূচি পালনের জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কর্মীরা সড়ক বন্ধ করে রাখে। এতে যানবাহনসহ জনগণের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় পুলিশ এসে সড়ক ফাঁকা করতে চাইলে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। বর্তমানে জেলা শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। আহত পুলিশ সদস্যদের নেত্রকোণা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।' 

এ ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত ৮ জনকে আটক করেছে বলে জানান তিনি।

৫ জেলায় বিএনপির সঙ্গে পুলিশ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আহত দেড়শতাধিক
সিরাজগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে আহত ২৫। ছবি: সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে আহত ২৫

সিরাজগঞ্জে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে।

সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুরে আলম সিদ্দিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে শহরের নবদ্বীপ পুল এলাকায় বিএনপির অনুষ্ঠানে তাদের দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। এ সময় একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে বিএনপিকর্মীরা পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।'

এ সময় পুলিশ তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে ৫২ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ও ৫ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় পুলিশের অন্তত ৫ জন আহত হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের রাবার বুলেট ও টিয়ারশেলের আঘাতে বিএনপির অন্তত ২০ জন আহত

হয়।

নাটোরে সমাবেশে যাওয়ার পথে ছাত্রলীগের হামলায় আহত বিএনপির ৫ নেতা-কর্মী

নাটোরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার পথে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে বিএনপি ও যুবদলের ৫ কর্মী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

আহতরা হলেন, গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম হোসেন, চাপিলা ইউনিয়নের যুবদল সভাপতি এনামুল হক নীলা, চাপিলা ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য ময়নাল হোসেন ও বাবুল হোসেন এবং চাপিলা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড যুবদল সভাপতি রতন আলী।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে নাটোর শহরের আলআইপুর এলাকায় পৌঁছালে এই ঘটনা ঘটে।

জেলা বিএনপি'র সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ বলেন, 'শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আসার পথে বিএনপি নেতা শামীম হোসেনসহ ৫ জনকে মারধর করে আহত করেছে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। রক্তাক্ত অবস্থায় শামীম হোসেনকে নাটোর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।'

জানতে চাইলে নাটোরে পুলিশ সুপার মো. সাইফুর রহমান বলেন, 'আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছিল কিন্তু কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। দুই পক্ষকে অনুরোধ করেই সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। কারো আহত হওয়ায় বিষয়ে এখনও কিছু জানিনা।'

এদিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে নাটোর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শাহিন বলেন, 'বিএনপির নাশকতার বিরুদ্ধে এবং আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাঈদ আহমেদ পলককে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার প্রতিবাদে ছাত্রলীগ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল করেছে। ছাত্রলীগ কারো ওপর হামলা করেনি।'

৫ জেলায় বিএনপির সঙ্গে পুলিশ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আহত দেড়শতাধিক
মানিকগঞ্জে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে আহত অন্তত ২০। ছবি: সংগৃহীত

মানিকগঞ্জে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে আহত অন্তত ২০

মানিকগঞ্জে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিল করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে ২ পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।

সকাল ১১টায় জেলা শহরের খালপাড় এলাকায় এই সংঘর্ষ বাধে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত দফা দফায় সংঘর্ষ হয়। এসময় প্রায় এক ঘণ্টা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছিলেন তারা।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা।

আজ বেলা আড়াইটায় গিলন্ড এলাকায় তিনি তার নিজ বাসভবন কার্যালয়ে জেলা বিএনপি আয়োজিত তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন।

সমাবেশের জন্য আগে থেকেই পুলিশের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল উল্লেখ করে এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবি করেন তিনি।

এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ সরকার বলেন, 'বিএনপির কর্মসূচি পালনের অনমতি না থাকায় আমরা তাদের মিছিলে বাধা দিয়েছি। আমাদের ওপর তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করায় আমরা তাদের ধাওয়া করি। তাদের আঘাতেই আমি এবং কনস্টবেল শাহিনসহ ৭ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। শাহীনের অবস্থা খুবই খারাপ। তার ডান চোয়াল ফেটে গেছে।'

গ্রেপ্তারকৃত বিএনপি নেতা ফজলুল হক গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, 'তিনি গুলিবিদ্ধ হননি। লাঠি চার্জ বা ইটপাটকেলের আঘাতে হয়তো তিনি আহত হয়েছেন। তিনিসহ গ্রেপ্তারকৃতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।'

নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৫০

নারায়ণগঞ্জ সদরে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে এক যুবক নিহত এবং প্রায় অর্ধ শতাধিক আহত হয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ২০ মিনিটের দিকে তিনি সংঘর্ষে নিহত হন।

নিহতের নাম শাওন মাহমুদ ওরফে আকাশ (২০) বলে দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতালের ডিউটি ​​অফিসার নাজমুল হোসেন।

Comments

The Daily Star  | English

Mindless mayhem

The clashes between students of three colleges continued yesterday, leaving over 100 injured in the capital’s Jatrabari.

5h ago