চিকিৎসক হতে চায় সেই মনি-মুক্তা
ঠিক ১৩ বছর আগে আজকের এই দিনে জন্ম নেয় মনি ও মুক্তা। যমজ ২ মেয়ে জন্ম নেওয়ায় বাবা-মার আনন্দে আত্মহারা হওয়ার কথা ছিল। তা হয়নি। বরং তারা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। কারণ তাদের ২ মেয়ে অন্য স্বাভাবিক শিশুর মতো ছিল না।
তবে এখন মনি ও মুক্তাকে নিয়ে বাবা-মার তেমন কোনো আর দুশ্চিন্তা নেই। মেয়েদের নিয়ে তারা খুশিতেই সময় পার করছেন। তাদের সংসারে এখন সুখের ঝিলিক।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের জয় প্রকাশ পালের স্ত্রী কৃষ্ণা রানীর গর্ভে ২০০৯ সালের ২২ আগস্ট জন্ম হয় মনি-মুক্তার। জন্মের সময় পেটে জোড়া লাগানো অবস্থায় ছিল ২ বোন।
২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারি বাবা জয় প্রকাশ পাল ঢাকার শিশু হাসপাতালে ২ মেয়েকে ভর্তি করান। একই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসক এ আর খানের নেতৃত্বে সফল অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে ২ বোনকে আলাদা করা হয়। তখন থেকেই তারা ফিরে পায় স্বাভাবিক জীবন। দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে সৃষ্টি হয় এক নতুন ইতিহাস।
আজ সোমবার মনি-মুক্তা এবং তার বাবা-মার সঙ্গে দ্য ডেইলি স্টারের কথা হয়েছে।
২ বোন এখন বীরগঞ্জের শতগ্রাম ইউনিয়নের ঝাড়বাড়ী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়়ের সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। মনি ও মুক্তার বড় এক ভাই ও বোন আছে।
তাদের বাবা জয় প্রকাশ বলেন, 'যখন মনি-মুক্তা জন্মগ্রহণ করেছিল অনেকে অনেক কথা বলেছিল। এমনো কেউ বলেছিল যে এটা পাপের ফসল।
অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম তখন। তবে এখন সবাই ভালো বলে। আমার মেয়েদের খোঁজ নেয়। অনেক ভালো লাগে।'
জয় প্রকাশ জানান, ২ বোন এখন ভালো আছে। তাদের কোনো সমস্যা নেই।
মনি ও মুক্তার মা কৃষ্ণা রানী বলেন, 'গোটা দেশবাসী আমার মেয়েদের জন্য আশীর্বাদ করে, খোঁজ নেয়। এটা খুব আনন্দের।'
জন্মের পর চিকিৎসকের হাতে নতুন জীবন পাওয়া মনি-মুক্তা বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চায়। দেশের মানুষের সেবা করতে চায়।
তাদের ২ জনের মধ্যে খুব মিল। আবার ঝগড়াও যে হয় না, তা না।
মনি-মুক্তা জানায়, তাদের মধ্যে সম্পর্ক অনেক ভালো। তারা একসঙ্গে স্কুলে যায়। একই পোশাক পরে। আবার ভিন্ন পোশাকেও তাদের দেখা যায়।
ঝাড়বাড়ী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়়ের সহকারী শিক্ষক তাসমি-বারী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মনি ও মুক্তা অত্যন্ত মিশুক। শিক্ষক ও বন্ধুদের সঙ্গে তাদের ভালো সম্পর্ক। তারা খুব ভালো মেয়ে। তারা অনেক বড় হবে এই কামনা করি।'
আজ সকালে ঘরোয়াভাবে ২ বোনের জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটা হয়েছে। সন্ধ্যায় তাদের মঙ্গল কামনা করে প্রসাদ বিতরণ করা হবে বলে জানান বাবা জয় প্রকাশ পাল ।
Comments