জোড়া লাগানো যমজ খাদিজা-সুমাইয়ার চিকিৎসায় দিশেহারা বাবা-মা

মায়ের কোলে খাদিজা ও সুমাইয়া। ছবি: স্টার

সাভারের মো. সেলিম মিয়া (৩৮) ও সাথী বেগম (৩০) দম্পতির জোড়া যমজ শিশু কন্যা খাদিজা ও সুমাইয়া। ১৩ মাস আগে সাভারে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে খাদিজা ও সুমাইয়ার জন্ম হয়। এর পর থেকে সংযুক্ত যমজ শিশুদুটির চিকিৎসা চলছে।

খাদিজা ও সুমাইয়ার বাবা সেলিম পেশায় মিয়া পেশায় ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি। তিনি বলেন, চিকিৎসক বলেছেন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে খাদিজা ও সুমাইয়াকে আলাদা করা যাবে। কিন্তু এরই মধ্যে ১৪ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন এমআরআই ও সিটি স্ক্যান করতে ২৫ হাজার টাকার প্রয়োজন। এই টাকার জন্য সমাজের বিত্তবানদের কাছে হাত পাততে হচ্ছে।

রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজিবের কার্যালয়ের সামনে খাদিজা-সুমাইয়াকে নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন সেলিম-সাথী দম্পত্তি। তাদের বাড়ি দোহারের ওরঙ্গবাজ গ্রামে। সাভারের পলাশবাড়ী এলাকায় তারা ভাড়া বাসায় থাকেন।

সেলিম মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর সাভারের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম হয় খাদিজা ও সুমাইয়ার। তাদের কোমরের অংশটুকু জোড়া লাগানো। জন্মের পরই ওদেরকে দুই দিন আইসিইউতে রাখতে হয়েছে। পরে তাদেরকে ঢাকায় শিশু হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা চলে বেশ কিছু দিন। পরে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গত এক মাস যাবত ঢাকা মেডিকেলের সার্জারি বিভাগের একজন অধ্যাপকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছে।

সেলিম বলেন, খাদিজা-সুমাইয়ার চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত প্রায় খরচ হয়েছে ১৪ লাখ টাকা। এখন চিকিৎসক এমআরআই ও সিটি স্ক্যান করাতে বলেছেন। পরীক্ষা দুটিতে ২৫ হাজার টাকা প্রয়োজন। টাকা না থাকায় পরীক্ষা করাতে পারছি না। উপজেলা চেয়ারম্যান আসতে বলেছেন তাই এসেছি।

ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি সেলিম বলেন, নিজে যন্ত্র-পাতি কিনে কাজ করতাম। পরিবার নিয়ে ভালোই চলছিলাম। খাদিজা-সুমাইয়া জন্ম নেওয়ার পর হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে কাজ করতে পারছি না। জমানো টাকা, মানুষের দানের টাকা, ব্যাংক ঋণ ও আত্মীয়দের থেকে ধার করা টাকায় এতোদিন চিকিৎসা চালিয়েছি। এখন আর উপায় নেই। জমি থাকলে বিক্রি করে হলেও চিকিৎসা করতাম। কিন্তু গ্রামের বাড়ি দোহারে ভিটেমাটিটুকুও নদী ভাঙনে চলে গেছে। মানুষের কাছে হাত পাততে ভালো লাগে না, কিন্তু সন্তান দুটিকে-তো বাঁচাতে হবে। চিকিৎসক বলেছেন অপারেশনের মাধ্যমে ওদের আলাদা করে সুস্থ করা যাবে। আগামী ১ বছর চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিতে হবে। তারপর অপারেশন হবে।

খাদিজা-সুমাইয়ার মা সাথী বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, খাদিজা-সুমাইয়া অনেক চঞ্চল। অসুস্থ হলে দুই জন এক সঙ্গে অসুস্থ হয়। মাসে চার-পাঁচ বার জ্বর হয়। জন্মের পর থেকেই ঠান্ডাজনিত রোগ লেগেই আছে। জোড়া লাগানো শিশু জন্মানোয় মানুষের অনেক কটু কথা শুনতে হয়। আমি ওগুলোতে কান দেই না। আমি চাই খাদিজা-সুমাইয়া সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে আসুক।

এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মনজুরুল আলম রাজিব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আমারা উপজেলা প্রশাসন থেকে পরিবারটিকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পাশাপাশি বিত্তবান ব্যবসায়ীদেরও শিশু দুটির চিকিৎসায় সহায়তার হাত বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছি।

Comments

The Daily Star  | English

Tax-free income limit may rise to Tk 3.75 lakh

The government is planning a series of measures in the upcoming national budget to alleviate the tax pressure on individuals and businesses, including raising the tax-free income threshold and relaxing certain compliance requirements.

12h ago