গুম-নির্যাতনে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবিতে ২৭ নাগরিকের বিবৃতি

আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘মায়ের ডাক’ সংগঠন আয়োজিত আলোচনা সভায় শিশু সাবা। সাবার বাবা মাহফুজুর রহমান সোহেলকে গুম করা হয়েছে। পথ চেয়ে বাবার অপেক্ষায় আছে সাবা। সাবার কথা-কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে আলোচনার পরিবেশ! ফাইল ছবি: এমরান হোসেন/স্টার

দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে গুম, নির্যাতন ও অবৈধ আটক সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ২৭ নাগরিক।

একইসঙ্গে এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত হিসেবে যেসব কর্মকর্তা এবং এজেন্সির নাম গণমাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে তাদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তদন্তের দাবিও জানিয়েছেন তারা।

আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব দাবি জানানো হয়।

এতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও এজেন্সির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফোরামে গুম, নির্যাতন, অবৈধ আটকসহ চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল। অতি সম্প্রতি সুইডেনভিত্তিক একটি অনলাইন পোর্টাল ও আরও কিছু গণমাধ্যমে গুম ও অবৈধ আটকের শিকার ব্যক্তিদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার যে বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে তা আমাদেরকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ভুক্তভোগীদের বিবরণে অবৈধ আটক, নির্যাতন ও গুমের ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিছু রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বাহিনী, তাদের কয়েকজন কর্মকর্তা এবং অবৈধ আটক ও গুম করে রাখার কয়েকটি স্থানের সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। যা দেশের নাগরিক বিশেষ করে ভিন্নমতের মানুষের জন্য আতঙ্কজনক বার্তা প্রেরণ করেছে।  

এতে জানানো হয়, আমরা সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী নির্যাতন, গুম এবং অবৈধ আটক সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কোনো ব্যক্তিকে বৈধভাবে আটক করার ক্ষেত্রেও তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচারিক আদালতে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে সংবিধানে। বাংলাদেশের বিভিন্ন আইন এবং যেসব আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিতে বাংলাদেশ সদস্য হয়েছে সেখানেও ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, মর্যাদা বিরোধী যেকোনো ব্যবস্থা গ্রহণ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, আমরা অবিলম্বে গুম, নির্যাতন, অবৈধ আটক সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার এবং এসব হীন অপরাধের সঙ্গে জড়িত হিসেবে যেসব কর্মকর্তা এবং এজেন্সির নাম গণমাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে তাদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। আমার মনে করি, বিশ্বাসযোগ্যতার স্বার্থে এই তদন্তে গুমের ভুক্তভোগী পরিবার, মানবাধিকার সংগঠন এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। 

এতে বলা হয়, আমরা একইসঙ্গে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তদন্তের জন্য জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সফরের জন্য যেসব অনুরোধ জানানো হয়েছে, সরকার কর্তৃক সেগুলোর অনুমোদন প্রদান ও বাংলাদেশে তাদের তদন্ত পরিচালনায় পূর্নাঙ্গ সহায়তা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। আমরা মনে করি, অব্যাহত ও পরিকল্পিত গুম, নির্যাতন, অবৈধ আটক কেবল গুরুতর মানবাধিকার ও আইনের শাসনের লঙ্ঘন নয়, এগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধেরও সমতুল্য।

বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, আমরা বাংলাদেশ সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বাংলাদেশ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত রোম স্ট্যাটিউটের সদস্য। এ ধরনের অপরাধ বাংলাদেশে ঘটতে থাকলে তা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারযোগ্য বিষয় হতে পারে এবং তা রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তিকে চরমভাবে ক্ষুণ্ণ করতে পারে।

বিবৃতিদাতারা হলেন, মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অধ্যাপক আলী রীয়াজ, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক স্বপন আদনান, অধ্যাপক পারভীন হাসান, অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, ড. সামিনা লুৎফা, ড. শাহনাজ হুদা, আইনজীবী তবারক হোসেইন, মানবাধিকারকর্মী শিরীন প হক, হানা শামস আহমেদ, সঞ্জীব দ্রং, অরূপ রাহী, নূর খান লিটন, রেহনুমা আহমেদ, নাসের বখতিয়ার, সুব্রত চৌধুরী, গবেষক ড. নোভা আহমেদ এবং অ্যাডভোকেট সালমা আলী।

Comments

The Daily Star  | English

$14b lost to capital flight a year during AL years

Bangladesh has lost around $14 billion a year on average to capital flight during the Awami League’s 15-year tenure, according to the draft report of the committee preparing a white paper on the economy.

8h ago