‘তেলের দাম বাড়ানোর ফলে নিত্যপণ্যের দামও বেড়ে গেছে, মানুষের কষ্ট হচ্ছে’

প্রধানমন্ত্রী
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভার ভার্চুয়ালি বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার নিম্নবিত্ত ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার লক্ষে বেশকিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে।

এ সময় তিনি সকলকে সতর্ক করে বলেন, দেশ যখন এগিয়ে যায় এবং সাধারণ মানুষ একটু ভাল থাকতে শুরু করে তখনই দেশে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত শুরু হয়ে যায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে যে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে সেগুলোকে সহনীয় পর্যায়ে কীভাবে নিয়ে আসতে পারি সেই ব্যবস্থা আমাদের নেয়া একান্তভাবে জরুরি বলে আমি মনে করি। কারণ, মানুষের জন্যেই তো রাজনীতি করি। মানুষ কষ্ট পেলে আমারও কষ্ট হয়।'

সরকার প্রধান আজ মঙ্গলবার সকালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভার প্রারম্ভিক ভাষণে এ কথা বলেন।

তিনি গণভবন থেকে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরস্থ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এই সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি যে তেলের দাম বাড়ানোর ফলে আমাদের নিত্যপণ্যের দামও বেড়ে গেছে। মানুষের কষ্ট হচ্ছে। যারা নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত বা ফিক্সড ইনকাম যাদের, নির্দিষ্ট আয়ে যাদের চলতে হয় তাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে। এটা আমরা উপলব্ধি করতে পারি।

সাধারণের কষ্ট লাঘবে ১৫ টাকা কেজিতে ৫০ লাখ মানুষকে চাল কেনার সুবিধার পাশাপাশি প্রায় এক কোটি 'বিশেষ পারিবারিক কার্ড' দিয়ে ন্যায্যমূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে তার সরকারের উদ্যোগও তুলে ধরেন সরকার প্রধান।

তিনি বলেন, 'আমাদের এ ধরনের আরও কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে যেন নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, সাধারণ মানুষগুলো কষ্ট না পায়।'

শেখ হাসিনা বলেন, আমার মাঝে মাঝে এটাই শঙ্কা হয় বাংলাদেশকে আমরা উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, উন্নয়নশীল দেশ গড়ে তুললাম, জাতির পিতার রেখে যাওয়া স্বল্পোন্নত দেশ থেকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। যখন এই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় এবং একটু ভালোর দিকে যায় তখনই নানা রকম শঙ্কার সৃষ্টি হয়। তখন এটাকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য নানা রকম চক্রান্তও শুরু হয়ে যায়। 'কিন্তু মরার ওপর খাড়ার ঘা' এই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।'

সরকার প্রধান বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে এবং তার পরে স্যাংশন এবং পাল্টা স্যাংশন। এর ফলে দেখা গেল আমাদের কেনার সামর্থ্য থাকতেও সবকিছু ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেল।

তিনি বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতার পর যখন একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পড়ে তুলে একে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হন তখনই ৭৫ এর ১৫ আগস্টের আঘাতটা আসে।

শেখ হাসিনা বলেন, 'যখন দেশের অগ্রগতির পথে অগ্রযাত্রা শুরু হলো তখনই আঘাতটা আসল।'

তিনি ৭৪ এর দুর্ভিক্ষের প্রসঙ্গে বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যখন দেশের মাটি ও মানুষ ছাড়া সম্পদ বলতে আর কিছুই ছিল না, সেই ৭২ বা ৭৩ সালে কিন্তু দুর্ভিক্ষ হয়নি। হয়েছে ৭৪ সালে। নগদ অর্থ দিয়ে কেনা খাদ্যের জাহাজ কিন্তু বাংলাদেশে আসতে দেওয়া হয়নি।

দেশ গড়ার কাজে দিনরাত ব্যস্ত জাতির পিতাকে কোন সময় যেমন দেয়া হয়নি, তেমনি 'দেশ বিরোধীদের অপপ্রচার ছিল তুঙ্গে' এমন অভিমত ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'নানা ধরনের প্রচারণা ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ এমনকি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরকেও হত্যা করা শুরু করে। পাবনা ও খুলনায় আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে হত্যা করা হলো।

জাতির পিতা স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার-আলবদরদের বিচার শুরু করলেও অনেকেই তখন আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যায় বলেও তিনি জানান এবং মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে জাতির পিতার বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঔপনিবেশিক প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙ্গে একটি গণমুখী প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলার মাধ্যমে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং তৃণমূলের ক্ষমতায়নে তিনি সকল মহকুমাকে জেলায় রূপান্তরিত করে জেলাভিত্তিক মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
দেশের উন্নয়নে জাতির পিতার দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং আর্থ-সামাজিক উন্নতি করাই ছিল তার লক্ষ্য।

শেখ হাসিনা এ সময় আবারো নিজেদের উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী ফেলে না রেখে সবাইকেই কিছু না কিছু উৎপাদন করতে হবে যেন, সাধারণ মানুষের জীবন কষ্টে না কাটে।

Comments

The Daily Star  | English

Seven killed in Mymensingh road crash

At least seven people were killed and several others injured in a head-on collision between a bus and a human haulier in Mymensingh’s Phulpur upazila last night

1d ago