‘চলমান পরিস্থিতিতে মন্ত্রীদের বক্তব্য কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা’

করোনা মহামারির রেশ এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি দেশের সাধারণ মানুষ। এর মধ্যেই জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। বাজারে প্রত্যেকটি পণ্যের দামই প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ফলে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা।

করোনা মহামারির রেশ এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি দেশের সাধারণ মানুষ। এর মধ্যেই জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। বাজারে প্রত্যেকটি পণ্যের দামই প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ফলে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা।

এমন পরিস্থিতিতেও সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, 'বৈশ্বিক মন্দায় অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ বেহেশতে আছে।' পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, 'দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি অস্বীকার করব না। কিন্তু এখনো কেউ জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় মারা যায়নি। আশা করি মরবেও না।'

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, 'দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে আমরা এখানে এসেছি। ভবিষ্যতে আমাদের প্রজন্মের মতো লোকদের এগুলো (দারিদ্র্য) দেখতে মিউজিয়ামে যেতে হবে।' তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, 'কেবল দেশ বদলে যায়নি। দেশের প্রত্যেকটি মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। ছেঁড়া জামা গায়ে কাউকে দেখা যায়? না। আপনারা খালি পায়ের কাউকে দেখতে পান? পান না। উপর থেকে কোনো কুঁড়েঘর দেখতে পান? না।'

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন, 'আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে। প্রত্যেকটি গ্রাম ও শহরে…কেউ না খেয়ে নেই। আল্লাহর রহমতে সবাই খেতে পারছে। সবার গায়ে জামা-কাপড় আছে।'

মন্ত্রীদের এসব কথা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।

দলের নেতা-কর্মীদের দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা বলা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও।

চলমান পরিস্থিতিতেও কয়েকজন মন্ত্রী যে ধরনের মন্তব্য করেছেন, তা কী বার্তা দেয়? জানতে চাইলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মন্ত্রী ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গ লুটেরা ধনী শ্রেণির যারা আছে, তারা যাতে ভালো থাকে, সেটা ছাড়া সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই। সেটাই বারবার প্রমাণিত হচ্ছে। এরকম একটা দুর্ভোগের সময় যারা এ ধরনের দায়িত্বহীন মন্তব্য করতে পারে, তাদের বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করা নিষ্প্রয়োজন। তাদের হাত থেকে দেশবাসীকে উদ্ধার পেতে হবে। ক্ষমতায় আসার পর যাদের আচরণ এমন হয়, তাদের হাত থেকে উদ্ধার পাওয়া ছাড়া জনগণের দুর্ভোগ দূর হবে না।'

ভারতে মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের চেয়ে কম উল্লেখ করে এই সিপিবি নেতা বলেন, 'যাদের মাথাপিছু আয় আমাদের চেয়ে কম, তারা যদি দরিদ্রদের জন্য রেশনিং দিতে পারে, আমাদের এখানে দরিদ্রদের জন্য কমমূল্যে সেই রেশনিং কেন দিচ্ছে না? তা তো করছেই না, সাধারণ মানুষকে এরকম যন্ত্রণায় ফেলে রেখে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো এ ধরনের হাসি-তামাশা করছে, দায়িত্বহীন বক্তব্য দিচ্ছে। বাঁচতে হলে জনগণকে তাদের হাত থেকে উদ্ধার পেতে হবে।'

এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদের ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্তমান সরকার জনবান্ধব নয়। জনগণের দুঃখ-কষ্ট বোঝার ইচ্ছে এই সরকারের নেই। সাধারণ মানুষের দুঃখে দুঃখী হওয়ার মানসিকতা তাদের মধ্যে নেই। তাদের ভাব দেখে মনে হয়, তারা খুব নির্দয়। মানুষের কষ্টে সহানুভূতি বা দয়া তাদের মনে আসে না। তারা নিজেরা ভালো আছে, এতে মনে করে যে সবাই ভালো আছে বা অন্যরা ভালো না থাকলেও তাদের কিছু যায় আসে না। এ ধরনের মানসিকতা নিয়ে সরকার চলছে।'

এ ধরনের মানসিকতা অত্যন্ত অমানবিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'তাদের (মন্ত্রী) মধ্যে মানবিক গুণ থাকলে এ ধরনের পরিস্থিতিতে মানুষের জন্য তাদের সহানুভূতি থাকত। তারা মনে ব্যথা অনুভব করতেন যে হয়তো তারা দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। তাদের আরও চেষ্টা করা উচিত। এ ধরনের মনোভাব তাদের মধ্যে থাকা উচিত ছিল।'

মন্ত্রীদের এ ধরনের মন্তব্যের বিষয়ে গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জনগণের ভোটে সরকার নির্বাচিত হয়নি। ফলে জনগণের বিষয় নিয়ে তাদের খুব বেশি মাথাব্যথা নেই। চলমান পরিস্থিতিতে মন্ত্রীদের মন্তব্য থেকে এই বার্তাই পাওয়া যায়। মন্ত্রী-আওয়ামী লীগারদের তো কোনো কষ্ট হচ্ছে না। কিন্তু জনগণের যে কষ্ট হচ্ছে, তা নিয়ে তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই।'

মুদ্রাস্ফীতি আরও বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'সামনে কয়েক সপ্তাহে যে মুদ্রাস্ফীতি আরও বাড়বে, তা নিশ্চিত। টাকার অবমূল্যায়ন ও তেলের মূল্য বাড়াতে সবকিছুর দাম অনেক বাড়বে। সেটা ঠেকানোর ক্ষমতা বা ইচ্ছে কোনোটাই সরকারের নেই।'

'জনগণের নির্বাচিত সরকার না বলে তারা জনগণকে তোয়াক্কা করছে না। তারা পুলিশের দ্বারা নির্বাচিত সরকার। তাই জনগণ নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। এজন্যই তারা অদ্ভুত কথা বলে', বলেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিষয়টি নিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ইতোমধ্যে কথা বলেছেন। তিনি দলের সবাইকে সংযতভাবে কথা বলতে এবং অপ্রয়োজনীয় কথা না বলার জন্য বলেছেন। তাই এ বিষয়ে আমি আর কোনো কথা বলব না।'

Comments

The Daily Star  | English

Going abroad to study or work: Verifying documents to get easier

A Cabinet meeting today approved the proposal for Bangladesh to adopt the Apostille Convention, 1961 which facilitates the use of public documents abroad

24m ago