‘পাবলিক লাইব্রেরি’ এখন ‘ভাগাড়’

ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

মৌলভীবাজারের 'কুলাউড়া পাবলিক লাইব্রেরি' নামটি সিলেট বিভাগসহ বিভিন্ন এলাকার বইপ্রেমীদের কাছে 'বাতিঘর' হিসেবে পরিচিত ছিল। এক সময় বইপ্রেমী মানুষদের কাছে এটি ছিল ঐতিহ্যের স্মারক। কয়েক বছর ধরে গ্রন্থাগারটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

সংরক্ষণের অভাবে এটি এখন ময়লা-আবর্জনা ও জলাবদ্ধতায় পরিণত হয়েছে। স্বনামধন্য লেখকদের মূল্যবান বইয়ের সংগ্রহও ধ্বংস হয়ে গেছে।

স্থানীয়রা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, প্রায় ৩৮ বছর আগে শহরের প্রাণকেন্দ্র তৎকালীন পোস্ট বাংলো (বর্তমানে স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভ) প্রাঙ্গণে 'কুলাউড়া পাবলিক লাইব্রেরি' প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৮৪ সালের ২৬ জুন তৎকালীন ইউএনও সিরাজুল ইসলাম এটি উদ্বোধন করেন। কমিটির মাধ্যমে গ্রন্থাগারিক ও সহকারী গ্রন্থাগারিক নিয়োগ দেওয়া হয়। বই সংগ্রহ ও অন্যান্য খরচ উপজেলা পরিষদের সদস্যদের মাসিক চাঁদার মাধ্যমে মেটানো হতো। সে জন্য গ্রন্থাগারটির ব্যাংক হিসাবও খোলা হয়েছে।

ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

গ্রন্থাগারটি পরিদর্শনে দেখা গেছে, ভবনের সামনে ফার্নিচারের দোকান বসানো হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে জরাজীর্ণ ভবনের বারান্দা ও মেঝে। জলাবদ্ধতার কারণে গ্রন্থাগারের বই, আলমারি ও আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

সেসময় কয়েকজনকে সেখানে প্রস্রাব করতে দেখা যায়।

গ্রন্থাগারের সাবেক গ্রন্থাগারিক খুরশীদ উল্লাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সেখানে কর্মরত ছিলাম। আমার অনুপস্থিতিতে সহকারী গ্রন্থাগারিক শামসুদ্দিন দায়িত্ব পালন করতেন। তিনি ২০১৭ সালে মারা যান। এরপর থেকে এটি সংরক্ষণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।'

গ্রন্থাগারের সদস্য সঞ্জয় দেবনাথ ডেইলি স্টারকে বলেন, '১৯৯৪ সালে লাইব্রেরির মেম্বারশিপ কার্ড সংগ্রহ করেছিলাম। লাইব্রেরি থেকে নিয়ে বই পড়তাম। এটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এবং আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। আমি এর সংস্কারের দাবি জানাই।'

ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

সিএনজিচালক সাদ্দাম হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখানে সবাই প্রস্রাব করে। এতো ময়লা আবর্জনা যে সেখানে দাঁড়ানো মুশকিল। গত ৪-৫ বছর ধরে কাউকে এই অফিস খুলতে দেখিনি।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, 'এখানে সবাই প্রস্রাব করে। আমিও করি।'

কুলাউড়া সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইদুল হাসান সিপন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কুলাউড়া পাবলিক লাইব্রেরি এক সময় এ অঞ্চলে "বাতিঘর" ছিল। এখন এটি আমাদের মূল্যবোধের অবক্ষয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে।'

কুলাউড়ার লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মাজহারুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একটি এলাকার সংস্কৃতি সমৃদ্ধ করতে পাঠাগারের ভূমিকা অপরিসীম।'

প্রেসক্লাব কুলাউড়ার সভাপতি আজিজুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গ্রন্থাগারকে পুনরুজ্জীবিত করে নতুন প্রজন্মকে সাহিত্য-সংস্কৃতির পথে আনতে হবে। অন্যথায় প্রজন্ম নৈতিক অবক্ষয়ের অতল গহ্বরে নিপতিত হবে।'

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহমুদুর রহমান খোন্দকার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি নতুন এসেছি। লাইব্রেরি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেব।'

Comments

The Daily Star  | English

With Trump’s win, Bangladesh gets more investment queries from China

Chinese entrepreneurs are increasingly inquiring with Bangladeshi businesses over scope for factory relocations, joint ventures and fresh investments, apprehending that the new Trump administration might further hike tariffs on their exports to the US.

9h ago