শিশুর স্নায়ু রোগে ভিডিও গেম খেলার পরামর্শ চিকিৎসকের

ওয়েন ও তার মা কেলসি

অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানকে কম্পিউটার গেমস খেলতে দেখলে উদ্বিগ্ন হন। তবে, এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেলসি সিহানুরথ, তার ছেলে ওয়েনকে ট্যাবলেট হাতে গেমস খেলতে দেখলে বরং খুশিই হন।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৩ বছর বয়সী ওয়েন এখন প্রি-স্কুলের শিক্ষার্থী। তার অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (এডিএইচডি) ধরা পড়েছে।

শিশুদের সবচেয়ে সাধারণ নিউরোডেভেলপমেন্টাল সমস্যাগুলোর একটি হলা এডিএইচডি। সাধারণত অল্প বয়সে রোগটি নির্ণয় করা যায় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেটি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এডিএইচডি আক্রান্ত শিশুদের মনোযোগ দিতে অথবা আবেগপ্রবণ আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যা হতে পারে (ফলাফল কী হবে তা না ভেবেই কাজ করতে পারে) অথবা সেটা অতিরিক্ত সক্রিয় হতে পারে।

ছবি: সংগৃহীত

রোগটি ধরা পড়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার সাভানায় বসবাসকারী ওয়েনের পরিবার অকুপেশনাল থেরাপিস্টদের পরামর্শ নেন যাতে সে দৈনন্দিন কাজগুলো আরও ভালোভাবে মনোযোগ দিয়ে করতে পারে।

চিকিৎসকরা প্রথমে ওষুধের মাধ্যমে সুস্থ করার চেষ্টা করেন কিন্তু ওষুধের কারণে ওয়েনের মাইগ্রেনের সমস্যা বেড়ে যায়। ফলে সে ব্যবস্থা বন্ধ রাখতে হয়।

এডিএইচডির প্রভাবে ওয়েনের স্কুলের ফলাফলও খারাপ হচ্ছিল। এ বিষয়ে কেলসি বলেছেন, তিনি 'অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থার আশা করছিলেন।'

'আমি ঠিকই বুঝতে পারছিলাম, সে মনোযোগ দিতে পারছে না এবং কঠোর চেষ্টার পরও না পেরে হতাশ হয়ে পড়েছিল। এতে আমার খুব কষ্ট হতো কিন্তু কিছুই করার ছিল না', বলেন তিনি।

তিনি জানান, প্রথমে খুব বেখাপ্পা মনে হলেও শেষ পর্যন্ত কাজে এসেছে; ইনডেভারআরএক্স নামের কম্পিউটার গেমটি।

শিশুদের এডিএইচডি চিকিৎসায় ২০২০ সালে গেমটি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)।

বর্তমানে শুধু যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসকরা গেমটি খেলার জন্য প্রেসক্রাইব করেন। প্রথম দেখায় একে সাধারণ গেমের মতোই মনে হয়। যেখানে আপনাকে একটি ছোট এলিয়েনকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, যেটি বিভিন্ন জিনিস সংগ্রহের জন্য স্পেস শিপের মাধ্যমে মহাবিশ্বের বিভিন্ন গ্রহে যাতায়াত করে।

গেমটি স্নায়ুবিজ্ঞানীদের পরামর্শ নিয়ে তৈরি করা হয়েছে এবং এটি মস্তিষ্কের সেই জায়গাগুলোকে উদ্দীপিত ও উন্নত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যে জায়গাটা মনোযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ডাক্তাররা যখন প্রেসক্রিপশনে গেমটির কথা লিখে দেন তখন শিশুটির বাবা-মা একটি অ্যাক্টিভেশন লিঙ্ক পান। যা গেমটি খেলার আগে প্রয়োজন হয়।

কেলসি বলেছেন, প্রথম দিকে তার কিছুটা সন্দেহ ছিল। কিন্তু ২০২০ সালের শেষ দিকে ওয়েন ৩ মাসের একটি প্রোগ্রাম শুরু করে। তখন দিনে ২৫ মিনিটের জন্য গেমটি খেলতো। এরপর গত বছর নতুন আরেকটি রাউন্ড শুরু করে।

তিনি বলেন, 'ওয়েন স্বীকার করেছে গেমটি তার ধারণার চেয়েও কঠিন ছিল। কিন্তু সে বুঝতে পেরেছিল যে মনোযোগ বৃদ্ধির জন্য সে গেমটি খেলছে। কিছু অসুবিধা হলেও সে খেলাটির ব্যাপারে বেশ উৎসাহী ছিল।'

ছবি: সংগৃহীত

ওয়েনের প্রতিটি সেশনের পরে তিনি অ্যাপে তার দৈনন্দিন আচরণগুলো নোট করতেন এবং তার অগ্রগতি চিহ্নিত করতেন।

এরপর তিনি ওয়েনের আচরণে ছোটখাট ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে শুরু করেন। যেমন, স্কুলের জন্য প্রস্তুত হওয়ার বিষয়ে আগের চেয়ে সচেতন হয়েছে এবং শিক্ষকদের কাছ থেকেও আর নেতিবাচক বার্তা আসেনি। 

কেলসি বলেছেন, 'আমার ছেলের অগ্রগতি দেখে বিস্মিত হয়েছি। তার চেয়েও বেশি খুশি যে, এখন সে কিছু না পারলে  বিভ্রান্ত বা বিচলিত হয় না।'

ইনডেভারআরএক্স-এর পেছনের ব্যক্তিটি হলেন বোস্টনভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আকিলির প্রধান নির্বাহী এ ডি মার্তুচি। তিনি বলেন, 'গেমটি অবধারণগত সক্ষমতা বাড়াতে তৈরি করা হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Chief adviser returns home after joining COP29 in Baku

Chief Adviser Professor Muhammad Yunus returned home this evening wrapping up his Baku tour to attend the global climate meet Conference of Parties-29 (COP29)

1h ago