গাবতলীতে গরু নামাতেই অপরিষ্কার ট্রাকে ঘরমুখী মানুষ
টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জে মহাসড়কের ২ লেনে যানজটের কারণে ভেঙে পড়েছে বাসের শিডিউল। যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলো সময় মতো ফিরতে পারছে না ঢাকায়। ফলে দীর্ঘ হচ্ছে উত্তরবঙ্গের ঘরমুখী মানুষের অপেক্ষা।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির কাউন্টার থেকে গাবতলী ব্রিজ পর্যন্ত শতাধিক মানুষকে বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়।
তাদের ভাষ্য, এবার যাত্রীর তুলনায় পর্যাপ্ত গাড়ি নেই। প্রাইভেটকার বা মাইক্রোবাসের মতো বিকল্প যানবাহনও পাওয়া যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চললে যাতায়াত একটু স্বস্তির হতো।
বাড়ি ফিরতে কোরবানির পশুবাহী অপরিষ্কার ট্রাক বেছে নিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। গাবতলী ব্রিজের পাশে হাটে গরু নামিয়ে মূল সড়কে উঠতেই যাত্রী বোঝাই হয়ে যাচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ থেকে গরু নিয়ে গাবতলী পশুর হাটে এসেছেন ট্রাকচালক খুরশীদ আলম। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সিরাজগঞ্জ থেকে গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টায় গরু নিয়ে রওয়ানা হয়েছিলাম, আজ সকালে গাবতলী পৌঁছেছি। গরু আনলে ট্রাক ময়লা হবেই। এখানে গোবর পরিষ্কার করার কোনো সুযোগ নেই। মানুষের অসহায় অবস্থা, সবাই ঘরে ফিরতে চায়। অপরিষ্কার ট্রাকেই উঠছে তারা। হাট থেকে বের হয়ে ব্রিজে উঠতেই ৩০-৩৫ জন যাত্রী পেয়ে গেছি। এই যাত্রী নিয়ে গেলে টোলের টাকা হয়ে যাবে, এটুকুই আমার লাভ।
গাবতলী থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ট্রাকে জনপ্রতি ৩০০ টাকা, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৫০০ টাকা, বগুড়া ৪০০ টাকা ও রংপুরে ৬০০ টাকা ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের।
সাইফুল ইসলামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলায়। তিনি রাজধানীর মিরপুর-১২ নম্বর সেক্টরে ভাড়া থাকেন। কাজ করেন ওই এলাকার একটি পোশাক কারখানায়। আজ বিকেল সাড়ে ৫টায় গাবতলী ব্রিজের ওপর তার সঙ্গে কথা হয়। স্ত্রী ও এক ছেলেকে নিয়ে তিনি গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
সাইফুল বলেন, বুঝতে পারিনি রাস্তার এত খারাপ অবস্থা। আজ সকাল ১১টায় আমার বাস ছাড়ার কথা ছিল। জেরিন পরিবহনে টিকিট কেটে রেখেছিলাম। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত বাস আসেনি। কাউন্টার থেকে বলেছে রাত ১০টার আগে বাস আসবে না। আমি টাকা ফেরত নিয়ে চলে এসেছি। আর কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। ওই কাউন্টারে আবার গিয়েছিলাম, তারা জানিয়েছে আমার ফিরিয়ে দেওয়ার টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। এখন ট্রাকেই ফিরতে হবে।
তার স্ত্রী প্রথমে আপত্তি জানালেও পরবর্তীতে ট্রাকে যেতে রাজি হয়েছেন, জানান সাইফুল। তিনি বলেন, আমাদের আর কোনো উপায় নেই। গাড়ি পাওয়া যাবে নিশ্চয়তা থাকলে এভাবে ঝুঁকি নিতে হতো না।
ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় রিকশা চালান মিজানুর রহমান। তিনি যাবেন রংপুরে।
মিজান বলেন, বাড়িতে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি আগেই। এখন যত কম খরচে রংপুরে ফিরতে পারি। গাবতলীতে এসে দেখি দেড় হাজার টাকা দিয়েও রংপুরের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। মোহাম্মদপুরে বের হয়ে দেখি ছোট বাসগুলো চলছে না। গাবতলী পর্যন্ত আসতে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ২৫০ টাকা খরচ হয়ে গেছে।
কাউন্টারে আসার পরে দেখলাম বিআরটিসির এসি বাসে সিট আছে। কিন্তু ভাড়া ২ হাজার ২০০ টাকা। ডাবল ডেকারে দেড় হাজার টাকা ভাড়া, মুহূর্তে ভরে গেল। আমার কাছে অত টাকা নেই। এখন ট্রাকই ভরসা, বলেন মিজান।
মানিকগঞ্জ থেকে গরু নিয়ে আসা ট্রাকগুলো আরিচা পর্যন্ত যাত্রী বহন করছে। জনপ্রতি ভাড়া নিচ্ছে ২০০ টাকা।
মাঝে মাঝে দুএকটা প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস এসে দাঁড়িয়ে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে। গাবতলী থেকে চুয়াডাঙ্গা যাবেন রিপন আলী। সঙ্গে রয়েছেন তার স্ত্রী, মা, ছেলে। রিপন বলেন, একটি মাইক্রোবাস নিয়ে ফিরবো ভেবেছিলাম। ৮ হাজার টাকায় যেতে রাজি হলে চলে যাব কিন্তু ১২ হাজার টাকার কমে কেউ রাজি হচ্ছে না। অসুস্থ মাকে নিয়ে ট্রাকে কীভাবে যাব সেটাই ভাবছি।
Comments