১৪ বছর পর বীর মুক্তিযোদ্ধা নৃপেন্দ্রনাথ রায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন

সংশোধিত জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা নৃপেন্দ্রনাথ রায়। ছবি: স্টার

তথ্য সংগ্রহকারীদের 'অবহেলায়' বীর মুক্তিযোদ্ধা নৃপেন্দ্রনাথ রায়ের (৭১) জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজ নাম ও জন্ম তারিখ ভুল ছিল। এ কারণে তিনি সরকারি স্বীকৃতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন।

অবশেষে তার সব প্রমাণাদি বিবেচনায় নিয়ে নাম ও বয়স সংশোধন করে গত ২৮ জুন বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন তাকে সংশোধিত জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়েছে।

নতুন পরিচয়পত্র পাওয়ার পর বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে ও ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধাদি পেতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তিনি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা নৃপেন্দ্রনাথ রায় ডেইলি স্টার পত্রিকায় ছবিসহ তাকে নিয়ে লেখা প্রতিবেদন দেখছেন। স্টার ফাইল ফটো

বীর মুক্তিযোদ্ধা নৃপেন্দ্রনাথ রায়ের ডাক নাম সিনিয়াল। বর্তমানে নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার পশ্চিম বোরাগাড়ী বাকডোকরা গ্রামে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। জ্বালানি কাঠ কেটে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি।

নীলফামারী শহরকে পাকবাহিনী মুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম যে দলটি শহরে ঢুকেছিল, সেই দলের একজন সদস্য ছিলেন সিনিয়াল। দলটির সঙ্গে ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ২০ বছর বয়সে পাকবাহিনীর সঙ্গে ভয়াবহ সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। 

মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকায় তার নাম থাকলেও, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত তিনি।

এই বীর মুক্তিযোদ্ধা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার সংকলিত মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বজনগ্রাহ্য তালিকায় তার নাম নৃপেন্দ্রনাথ রায়, ক্রমিক নম্বর ৩৭৪২৯ ও জন্মসাল ১৯৫১।'

'কিন্তু ২০০৮ সালে তথ্য সংগ্রহকারীদের অবহেলায় জাতীয় পরিচয়পত্রে তার প্রকৃত নামের পরিবর্তে ডাক নাম সিনিয়াল ও জন্ম সাল ১৯৬০ লিপিবদ্ধ করা হয়,' যোগ করেন তিনি।

তিনি জানান, জাতীয় পরিচয়পত্রের এই ভুল সংশোধনের জন্য তিনি গত ১৪ বছর বিভিন্ন অফিসে ঘুরেছেন।

এর আগে ২০২১ সালের ২২ মার্চ দ্য ডেইলি স্টারে নৃপেন্দ্র রায়কে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে তিনি প্রতিবেদনটির ফটোকপি যুক্ত করে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে আবার আবেদন দেন।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকরা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদনে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে তার বয়স নির্ধারণী রেডিওলজিকাল পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। পরীক্ষায় তার প্রকৃত বয়স ৭০ এর আশেপাশে বলে শনাক্ত হয় ও লিখিত রিপোর্ট দেওয়া হয়।

ডোমার উপজেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সম্পাদক রওশন আলম পাপ্পু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বয়স নির্ধারণী রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনের কপি যুক্ত করে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে দরখাস্ত করি। কমিশন যাচাই-বাছাই শেষে গত ২৮ জুন তাকে সংশোধিত জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়।'

জানতে চাইলে ডোমার ইউনিট মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ইলিয়াস হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বীর মুক্তিযোদ্ধা নৃপেন্দ্রনাথ রায় এখন থেকে আমাদের মতোই সরকারি ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন।'

মলিন বেশের এই বীর মুক্তিযোদ্ধা ডোমার শহরের কাঠগোলায় বসে এ প্রতিবেদককে বলেন, 'আমার স্বপ্ন ছিল মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া এবং পরিশেষে তা পেয়েছি।'

Comments

The Daily Star  | English
changes in Bangladesh media industry

Allegiance shifts, so do faces at the helm

Bangladesh’s media industry has seen some major shake-ups, with more than two dozen outlets shuffling leadership positions following the July mass uprising last year.

17h ago