এশিয়ায় ন্যাটো?

মাদ্রিদে ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে আলোচনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা (ডানে) ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইউল (বামে)। ছবি: এপি

'শীতলযুদ্ধ' আর 'ন্যাটো' যেন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের 'রেষারেষি' থেকে ১৯৪৯ সালে জন্ম নেয় নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অরগানাইজেশন বা ন্যাটো নামের এই সামরিক জোট।

প্রায় ৭০ বছর পর আবার আলোচনায় আটলান্টিকের উত্তরপূর্ব-পাড়ের এই সামরিক জোটের প্রসঙ্গ। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পরাশক্তি রাশিয়া প্রতিবেশী ইউক্রেনে 'বিশেষ সামরিক অভিযান' বা আগ্রাসন চালালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এই সংস্থাটির ভূমিকা নিয়ে আটলান্টিকের ২ পাড়েই আলোচনা শুরু হয়।

এই আলোচনা আরও বেগবান হয় যখন উত্তর ইউরোপের ধনী দেশ সুইডেন ও ফিনল্যান্ড দীর্ঘ ৭০ বছর 'নিরপেক্ষ' থাকার পর ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন দেখে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য সেই জোটের সদস্য হওয়ার আবেদন করে।

তবে, সেই আলোচনা এখন শুধু আটলান্টিক মহাসাগরকে ঘিরেই সীমিত নয়। এর ঢেউ প্রশান্ত মহাসাগরেও আছড়ে পড়েছে।

আজ রোববার আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার অভিযোগ—যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকে নিয়ে 'ন্যাটো'র আঙ্গিকে সামরিক জোট গড়তে যাচ্ছে ওয়াশিংটন।

প্রতিবেদন অনুসারে, উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ জানায়—যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান সম্প্রতি নিজেদের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য যে চুক্তি করেছে তা আসলে এশিয়ায় ন্যাটোর মতো জোট গড়ার প্রক্রিয়া। পিয়ংইয়ং এর তীব্র সমালোচনা করছে।

পিয়ংইয়ং এর মুখপাত্র বলেন, 'বাস্তবতা দেখে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে—"উত্তর কোরিয়ার হুমকি"কে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে এবং এ সম্পর্কে গুজব ছড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া-প্রশান্ত অঞ্চলে নিজেদের সামরিক আধিপত্য বিস্তার করতে চায়।'

গত সপ্তাহে মাদ্রিদে ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে আলোচনায় বসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইউল। তারা উত্তর কোরিয়াকে 'প্রতিরোধ' করা নিয়ে সমন্বিত প্রচেষ্টার বিষয়ে একমত হন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, সম্মেলনে জাপানের প্রধানমন্ত্রী কিশিদা বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে ত্রিদেশীয় অংশীদারিত্ব জোরদার করতে দেশগুলোর বিদ্যমান সক্ষমতাকে নতুন মাত্রায় নেওয়া প্রয়োজন।'

তবে ১৯১০ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জাপান ও কোরীয় উপদ্বীপের মধ্যে যে তিক্ততাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল সে কথাও প্রতিবেদনে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি, সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট মুন জি-ইনয়ের শাসনামলে এশিয়ার এই ২ শক্তিশালী দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির বিষয়টিও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

'এশিয়ান ন্যাটো' কি আসন্ন?

গত মাসে ফরাসি সংবাদমাধ্যম লা মঁদ দিপ্লোমেটিক'র প্রতিবেদনে প্রশ্ন রাখা হয়, 'এশিয়ান ন্যাটো কি আসন্ন?' প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, এশিয়ায় বিশেষ করে ভারত-মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাবকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এতে আরও বলা হয়, ভারত-মহাসাগরীয় অঞ্চলে ফ্রান্সের ৭ হাজার সেনা, ১৫ যুদ্ধজাহাজ ও ৩৮ উড়োজাহাজবাহী রণতরী স্থায়ীভাবে অবস্থান করছে।

এই অঞ্চলে 'স্বাধীনতা'র আদর্শকে সমুন্নত রাখতে বছর পাঁচেক আগে যুক্তরাষ্ট্র তার কৌশলগত ও আঞ্চলিক মিত্র জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতকে নিয়ে ৪ দেশীয় নিরাপত্তা জোট 'স্কোয়ার্ড' গড়েছে। এই জোটকে আরও প্রসারিত করে 'স্কোয়ার্ড প্লাস' গড়ার আলোচনাও চলছে।

মূলত চীনের প্রভাব ঠেকাতে এই জোট গড়া হয়েছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তাই চীন এই জোটকে 'এশিয়ান ন্যাটো' হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

গত ১৭ জুন ন্যাটোর ওয়েবসাইটে বলা হয়, সংস্থাটি এশিয়া-প্রশান্ত অঞ্চলে অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে নানান উদ্যোগ নিয়েছে। সংস্থাটির আগামী ২০৩০ সালের অ্যাজেন্ডা হচ্ছে—এই অঞ্চলে মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করা।

সামগ্রিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বলা যেতে, ভিন্ন নামে হলেও ন্যাটো এশিয়ায় এর প্রভাব বিস্তারে ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছে। তাই, কোনদিন যদি এশিয়ায় 'ন্যাটো'র আবির্ভাব হয় তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

Comments

The Daily Star  | English
probe committee for past elections in Bangladesh

Govt launches probe into last 3 national polls

The government has formed a committee to investigate alleged corruption, irregularities and criminal activities in the last three general elections.

1h ago