ইরান যেভাবে জবাব দিতে পারে

তেল আবিবের রামাত আবিভ এলাকায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার পর সেখানে পৌঁছায় ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী ও উদ্ধারকর্মীরা। ছবি: এএফপি

বিপ্লব-পরবর্তী ইরানের রাজধানী তেহরানে মার্কিন দূতাবাসে আটক ব্যক্তিদের মুক্ত করতে সামরিক অভিযান চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। সেদিন সেই অভিযান ব্যর্থ হয়েছিল। সেটা ছিল ১৯৮০ সালের ২৪ এপ্রিল। এখন ২০২৫ সালের জুন। মাঝখানে কেটে গেছে ৪৫ বছর।

এখন প্রেক্ষাপট ভিন্ন। দীর্ঘ ৪৫ বছর পর ইরানে মার্কিন সামরিক অভিযান দেখলো বিশ্ববাসী। এবার উদ্দেশ্য ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস করা।

মূলত, ইরানে ইসরায়েলি হামলার পর যখন জানা গেল উপসাগরীয় দেশটির পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস করতে প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের, ঠিক তখনই চলমান ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধে যোগ দেয় বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশটি।

আজ রোববার ভোররাতে যুক্তরাষ্ট্র শক্তিশালী বাঙ্কার বাস্টার বোমা নিয়ে ইরানের পরমাণু প্রকল্পগুলোয় আকস্মিক হামলা চালায়। ওয়াশিংটনের এই জড়িয়ে পড়া মধ্যপ্রাচ্যে 'নতুন বাস্তবতা'র জন্ম দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের কয়েক ডজন পারমাণবিক ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আকস্মিক হামলা চালানোর পর থেকে ইরান দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে ইরান এখনো যথেষ্ট পাল্টা জবাব দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

এর আগে, ইরানের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রকে এই সংঘাতে না জড়ানোর বিষয়ে সতর্ক করে বলেছিলেন যে এতে 'অপূরণীয় ক্ষতি' হবে। এই অঞ্চলে 'সর্বাত্মক যুদ্ধের' ঝুঁকি তৈরি হবে।

বিবিসির নিরাপত্তা প্রতিবেদক ফ্রাঙ্ক গার্ডনার বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাবে ইরানকে এখন তিনটি কৌশলগত পদক্ষেপের মধ্যে একটি বেছে নিতে হতে পারে:

কিছুই না করা

এতে ইরান আরও হামলা এড়াতে পারে, এমনকি আলোচনায় ফেরার পথও খোলা থাকে। তবে এতে তাদের দুর্বল দেখাতে পারে।

দ্রুত ও কড়া পাল্টা জবাব

ইরানের কাছে এখনো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২০টি ঘাঁটি তাদের লক্ষ্যবস্তুর তালিকায় রয়েছে। তারা ড্রোন ও টর্পেডো বোট ব্যবহার করে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজগুলোয় হামলা চালাতে পারে।

পরে জবাব দেওয়া

এর অর্থ হবে বর্তমান উত্তেজনা কমা পর্যন্ত অপেক্ষা করা এবং মার্কিন ঘাঁটিগুলোয় সর্বোচ্চ সতর্কতা না থাকার সময় আকস্মিক হামলা চালানো।

মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে সেগুলোর মধ্যে বাহরাইন, মিশর, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত উল্লেখযোগ্য।

ইরানের লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে একটি হলো বাহরাইনের মিনা সালমানে মার্কিন নৌবাহিনীর ফিফথ ফ্লিট সদরদপ্তর।

এ ছাড়াও, ইরান হরমুজ প্রণালীর নৌপথও লক্ষ্যবস্তু করতে পারে। এই প্রণালী পারস্য উপসাগরকে ভারত মহাসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। বিশ্বের ৩০ শতাংশ তেল সরবরাহ এই পথ দিয়েই হয়। ইরান অন্যান্য সমুদ্র পথেও আক্রমণ চালাতে পারে, যা বিশ্ববাজারকে অস্থিতিশীল করতে পারে।

প্রতিবেশী যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করছে বলে মনে করে ইরান সেসব দেশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালাতে পারে। এর ফলে যুদ্ধ পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরান নতুন করে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে। বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে হাইফা, তেল আবিব ও জেরুজালেমে।

সবদিক বিবেচনায় নিয়ে অন্তত এটুকু বলা যায় যে—এই যুদ্ধ এখানেই শেষ হচ্ছে না।

Comments

The Daily Star  | English

Made with US cotton? Pay less at US customs

US customs will apply a tariff rate only to the non-American portion of a product's value

11h ago