মূল্যস্ফীতি ও যুদ্ধ: বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের অর্ডার কমেছে ২০ শতাংশ

স্টার গ্রাফিক্স

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির পরিমাণ অনেক বেড়েছে এবং সার্বিক ভাবে একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। ফলে পশ্চিমা ভোক্তারা তাদের ব্যক্তিগত খরচের ক্ষেত্রে আরও হিসেবী হয়ে উঠেছেন।

এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে ওয়ার্ক অর্ডারের সংখ্যা ২০ শতাংশের বেশি কমে গেছে। 

ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে অর্থনীতিতে প্রলম্বিত মন্দা দেখা দাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাতের জন্য আরেকটি অশনি সংকেত। উল্লেখ্য, এ ২টি গন্তব্য থেকেই তৈরি পোশাক খাতের সিংহভাগ উপার্জন আসে।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, 'আন্তর্জাতিক খুচরা পোশাক বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলো মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত যে পরিমাণ অর্ডার দিয়েছিল, সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ের জন্য তার চেয়ে ২০ শতাংশ কম অর্ডার দিয়েছে।'

খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর কাছে বিক্রি না হওয়া পণ্যের বড় আকারের মজুদ আছে। এ কারণে তারা নতুন অর্ডার দেওয়া থেকে বিরত থাকছে। পরিবর্তে, তারা বিলম্বিত পেমেন্ট সুবিধা চাচ্ছে এবং রপ্তানিকারকদের অনুরোধ করছে চালান স্থগিত রাখতে।

অর্ডারগুলো এমন এক সময় কমে এসেছে, যখন মাত্রই এ খাত করোনাভাইরাসের মন্দা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।

নজিরবিহীন স্বাস্থ্য সঙ্কট থেকে উত্তরণের পর, বাড়তে থাকা চাহিদা মেটাতে খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলো অনেক বেশি অর্ডার দেয়।

কুতুবউদ্দীন জানান, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রপ্তানি করে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মে মাসে এই ধারা অব্যাহত থাকেনি।

এপ্রিলের ৩ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার থেকে মে মাসে তৈরি পোশাকের চালানের পরিমাণ কমে ৩ দশমিক ১৬ বিলিয়ন হয়, জানান তিনি।

অর্ডারের পরিমাণ কমে যাওয়ার নেতিবাচক প্রভাব আগামী অর্থবছরেও পড়তে পারে।

প্লামি ফ্যাশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ম. ফজলুল হক বলেন, 'যদি যুদ্ধ বন্ধ না হয়, তাহলে রপ্তানি পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে এবং অর্ডার কমার পরিমাণ ২০ শতাংশে সীমাবদ্ধ থাকবে না।'

শুধু ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রে নয়, সারা বিশ্বেই মূল্যস্ফীতির চাপ অনুভূত হচ্ছে। এর পেছনে মূল কারণ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি, জ্বালানী সঙ্কট ও সরবরাহের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা।

বিশ্ব ব্যাংকের গ্রুপ প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস গতকাল জানান, গত কয়েক দশকেও এত বেশি মূল্যস্ফীতির মুখোমুখি হয়নি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের অর্থনীতি। ফলে পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আসতে আরও ২ বছরও লেগে যেতে পারে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের গবেষকরাও একই ধরনের পূর্বাভাষ দেন।

বিজিএমইএ প্রধান ফারুক হাসান জানান, ক্ষুদ্র ও মাঝারি তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানের পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে, কারণ সার্বিকভাবে অর্ডার কমে যাওয়ায় তাদের কাছেও বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে তেমন কোনো কাজ আসছে না।

তিনি আরও জানান, যুদ্ধে বৈশ্বিক অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে এবং মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। ফলে বর্ধিত মূল্যের সঙ্গে তাল মেলাতে ভোক্তারা তাদের খরচের ধারা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। ভোক্তারা আগের চেয়ে বেশি দামে জ্বালানী ও খাবার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে তারা পোশাকের জন্য বাজেট কমিয়ে ফেলেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে গ্যাসের দাম প্রায় ৩ গুণ বেড়েছে।

'জ্বালানী ও খাদ্য খাতে খরচ বাড়ার কারণে বাংলাদেশের মত তৈরি পোশাক সরবরাহকারী দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে', যোগ করেন বিজিএমইএ'র ফারুক হাসান।

রপ্তানিকারকদের সমস্যাগুলোর খুব শিগগির সমাধান হচ্ছে না, কারণ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দা আসার সম্ভাবনা আরও জোরালো হচ্ছে।

ইতোমধ্যে গোল্ডম্যান স্যাকস, মর্গান স্ট্যানলি ও সিটিগ্রুপের মতো স্বনামধন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান আসন্ন বৈশ্বিক মন্দার পূর্বাভাষ দিয়েছে। সিটিগ্রুপ জানিয়েছে, এ ধরনের একটি মন্দা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশের কাছাকাছি।

সম্প্রতি মার্কিন সিনেটের এক শুনানিতে ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ার জেরোম পাওয়েল স্বীকার করেন, অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা যত বাড়বে, ততই মানুষ তাদের খরচ কমাবে। ফলে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য দুঃসময় আরও দীর্ঘায়িত হতে থাকবে।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান। 

 

Comments

The Daily Star  | English

CA reiterates 2 possible polls timelines

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus has once again said the next general election will likely be held in December 2025 or by mid-2026.

5h ago