‘নাও না থাইকলে আংগোরে বানের পানি ভাইসা লইয়া যাইতো’

ডুবে আছে ঘরবাড়ি। তাই তাদের বসবাস নৌকায়। ছবি: স্টার

'নাও না থাইকলে আংগোরে বানের পানি ভাইসা লইয়া যাইতো। পোলাপান লইয়া আমরা বাঁইচা আছি নাওয়ের উপর। নাও আমগো বাঁইচা রাইখছে।'

কথাগুলো বলছিলেন বানভাসি জেলেখা বেওয়া (৬২)। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চর এলাকার এই বানভাসি পরিবারের ৭ সদস্য গত ১৪ দিন ধরে নৌকায় বসবাস করছেন।

বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও তাদের চর এখনো বন্যার পানিতে ডুবে রয়েছে। ঘরের ভেতর এখনো কোমর পানি।

১৪ দিন ধরে নৌকায় তাদের জীবনযাপন। ছবি: স্টার

জেলেখা বেওয়া বলেন, 'আমগো গরের ব্যাড়া, দজ্জা, কাপড়-চোপড় ভাইস্যা গ্যাছেন বানের পানিত। ঘরের ভিতর ২০ কেজি চাইল আছিলো, তাও ভাইসা গ্যাছেগা। এ্যাহোন মাইনসে খাবার দিতাছে। শুইকনা খাবার খায়া আছি। নাওয়ের ওপর ঠিকমতো আইনবারও পাইতাছি না।'

জেলেখার ছেলে রফিকুল ইসলাম (৪৬) দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তার একটি মাছ ধরার নৌকা আছে। এখন পরিবারের সবাই সেই নৌকাতেই বসবাস করছেন। ফলে মাছ ধরতে পারছেন না তিনি।  সরকারি-বেসরকারি যৎসামান্য সাহায্য দিয়েই তাদের দিন কাটছে।

তিনি বলেন, 'এই চরে হকলে কষ্টে রইছেন। আমগো চরটা নিচু জইন্যে বানের পানি ধরে নাইমছে। ২-৩ দিনের মইধ্যে ঘরোত উঠবার পামো। আমগো ঘর-বাড়ির ম্যালা ক্ষতি হইছে। এইল্যা ক্যামনে ঠিক করমো। আল্লাহ ছাড়া আমগো বাঁচাইও আর কেউ নাই।'

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের দুর্গম চর পূর্ব দৈখাওয়ার চরের বানভাসি বিলকিস বেওয়া (৬৫) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পানির স্রোত আমগো ভাইসা লইতেছিলো। আল্লাহ আমগো বাঁচাইছে। নাওত চইড়া বাঁইচ্যা গ্যাছিগা। এ্যাহোন নাওত চইড়া আছি। ঘরোত থাকি পানি নাইমতাছে। আমগো ঘরোত ধান চাইল আছিল, ব্যাকটি ভাইসা গ্যাছে। এ্যাহোন ইলিপ পাইতাছি। এইটি দিয়ে আমরা বাঁইচা আছি।'

মাছ ধরার নৌকায় পরিবার নিয়ে বসবাসের কারণে জীবিকার জন্য মাছ ধরতে পারছেন না রফিকুল ইসলাম। ছবি: স্টার

যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অধিকাংশ বন্যা দুর্গত এলাকা থেকে বানের পানি নেমে গেছে। বানভাসিরা তাদের বাড়িতে উঠেছেন। তবে কয়েকটি দুর্গম চর এখনো পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এসব দুর্গম চরে পানির স্রোতে কিছু ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি চরের মানুষ পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন। তাদের কেউ না খেয়ে নেই।'

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন আজ রোববার সকালে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে কিছু দুর্গম চর এখনো পানিতে তলিয়ে রয়েছে। নদের বুকে এসব দুর্গম চর নিচু হওয়ায় বর্ষাকালে সবসময়ই পানি থাকে।'

Comments

The Daily Star  | English

Inside the 3-year plan to fix banks

Bangladesh has committed to a sweeping overhaul of its troubled financial sector, outlining a detailed three-year roadmap as part of its latest agreement with the International Monetary Fund.

9h ago