১৩২ কোটি টাকা আত্মসাৎ অভিযোগে যা বললেন তাকসিম এ খান

তাকসিম এ খান। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে ১৩২ কোটি ৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ওয়াসার সাবেক কর্মচারী শাহাব উদ্দিন সরকারের মামলার আবেদন ফিরিয়ে দিয়েছেন আদালত। তবে অভিযুক্তরা সরকারি কর্মচারী হওয়ায় এ অভিযোগে মামলা ও তদন্ত করা দুদকের এখতিয়ার বলে উল্লেখ করেছেন আদালত।

অভিযুক্তরা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের তহবিল থেকে ওই টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে সমিতির বর্তমান সম্পাদক শাহাব উদ্দিন এ অভিযোগ আনেন।

মামলা প্রসঙ্গে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে ওয়াসা এমডি তাকসিম এ খান, বাদী শাহাব উদ্দিন সরকার ও বাদীর আইনজীবী মো. মঞ্জুর আলমের সঙ্গে।

ওয়াসা এমডি বলছেন, চাকরিচ্যুত করায় শাহাব উদ্দিন ক্ষুব্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। 

এদিকে মামলার বাদী শাহাব উদ্দিনের বক্তব্য, তিনি এমডির দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেন, তাই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন এমডি তাকসিম এ খান। 

তবে বাদীর আইনজীবী মো. মঞ্জুর আলম জানান, অডিট প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মামলার আবেদন করা হয়েছিল। 

জানতে চাইলে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মামলার কথা আমিও শুনেছি। তবে মামলার বিষয়ে কিছুই জানি না। যিনি অভিযোগ করেছেন তিনি ওয়াসা থেকে চাকরিচ্যুত। তিনি সাসপেন্ডও ছিলেন অনেকদিন। আমার সময়েই চাকরিচ্যুত হয়েছেন তিনি।'  

ওয়াসা থেকে চাকরিচ্যুতির বিষয়ে জানতে চাইলে শাহাব উদ্দিন সরকার বলেন, 'আমি চলতি বছর ২০ মার্চ চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি। আর আমাকে এমডি টারমিনেশনের চিঠি দিয়েছেন ২৬ এপ্রিল। অবসরের ৩৬ দিন পর আমাকে টারমিনেট করা হয়েছে, বিষয়টাই তো হাস্যকর।'

১৯টি চেকের মাধ্যমে ১৩২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াসা এমডি বলেন, 'কীভাবে, কোথা থেকে, কাদের চেক? কার টাকা, কীসের টাকা, কো-অপারেটিভ সোসাইটির? তাদের সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক? ঢাকা ওয়াসার ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্কই নেই।' 

এ বিষয়ে সমিতির সম্পাদক শাহাব উদ্দিন বলেন, 'আমরা কো-অপারেটিভ সোসাইটির নির্বাচিত কমিটি। ওয়াসার কর্মচারীদের ভোটে নির্বাচিত। ২০২০ সালে আমরা নির্বাচিত হওয়ার পর ব্যাংক যেন আমাদের সঙ্গে লেনদেন না করে, এমডি তাকসিম চিঠি দিয়ে ব্যাংককে বলেছেন। তার যদি কোনো সম্পর্কই না থাকবে তাহলে তিনি ব্যাংককে চিঠি দিলেন কেন? আমাদের সঙ্গে লেনদেন করতে নিষেধ করে তিনি যোগসাজশ করে টাকা তুলে নিয়েছেন। যাদের নামে মামলা করেছি তারা যে টাকা তুলেছে, তার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ আছে। কোন চেকে কে কত টাকা তুলেছেন, সব প্রমাণ আছে।'

মামলার বাদী বলছেন তার কাছে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ আছে, এর উত্তরে তাকসিম এ খান বলেন, 'যে মামলা করছে তার  বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। তাকে টার্মিনেট করা হয়েছে।  আমাদের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। এটা একটা হাস্যকর অভিযোগ। যিনি অভিযোগ করেছেন তার বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ আছে।'

তার বিরুদ্ধে ঠিক কী অভিযোগ আছে? এমডি তাকসিম খান বলেন, 'আছে, অনেক অভিযোগ আছে। ফাইলপত্র দেখে বলতে হবে।'

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী শাহাব উদ্দিন বলেন, 'আমার নামে কোনো অভিযোগ নেই। আমার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ আছে। আমাকে বদলি করা হয়েছিল, কিন্তু আমি নতুন কর্মস্থলে যোগ দেইনি।'

'আমি যেহেতু এমডির দুর্নীতি নিয়ে কথা বলি, তাই তিনি আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তোলেন,' যোগ করেন তিনি।  

শাহাব উদ্দিন বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে ওয়াসা যে অভিযোগ এনেছিল, উচ্চ আদালত তা খারিজ করে দিয়েছেন।'

আজ বৃহস্পতিবার করা মামলার আবেদনে ওয়াসা এমডি তাকসিম এ খান ছাড়া অপর অভিযুক্তরা হলেন-ওয়াসার সচিব শারমিন হক আমীর, সাবেক রাজস্ব পরিদর্শক মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত প্রকৌশলী মো. আখতারুজ্জামান, রাজস্ব পরিদর্শক এ এইচ এম জাকির হোসেন, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বদরুল আলম, উপসচিব শেখ এনায়েত আবদুল্লাহ, উপপ্রধান হিসাব কর্মকর্তা মো. সালেকুর রহমান এবং জনতা ব্যাংকের কারওয়ান বাজার করপোরেট শাখার ব্যবস্থাপক ও সাবেক উপব্যবস্থাপক শ্যামল বিশ্বাস।

মামলা প্রসঙ্গে বাদীর আইনজীবী মো. মঞ্জুর আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সমবায় অধিদপ্তরের নির্দেশে একটি অডিট হয়েছে। অডিট রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ওয়াসা এমডির নির্দেশে তারই অধীনস্থ ওয়াসার অতিরিক্ত প্রকৌশলী আখতারুজ্জামান, রাজস্ব কর্মকর্তা মিজানুর রহমান তাদের সময়ে কমিশন হিসেবে প্রাপ্ত সমিতির ১৩২ কোটি টাকা বিভিন্নভাবে ব্যাংক থেকে তুলে আত্মসাৎ করেছেন। তারা দুজন সে সময় সমিতির সভাপতি-সেক্রেটারি ছিলেন। এটা অডিট রিপোর্টে এসেছে। অডিট আপত্তির ভিত্তিতেই মামলা করা হয়েছে।'

সমিতির সঙ্গে ওয়াসার এমডির সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ওয়াসার এমডি সমিতির নতুন কমিটিকে দায়িত্ব গ্রহণ করতে দেয়নি। নতুন কমিটির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক যেন সমিতির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে না পারে সেজন্য ওয়াসার এমডি ব্যাংকে চিঠি দিয়ে ব্যাংক ম্যানেজারকে নিষেধ করেছেন। এসব চিঠি ও অডিট রিপোর্ট আমাদের কাছে আছে।'

'তিনি সমিতির নির্বাচনে বাঁধা দিয়েছেন। যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, তাদের বহিষ্কার করেছেন,' যোগ করেন তিনি।

বাদী শাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে ওয়াসা এমডির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মঞ্জুর আলম বলেন, 'শাহাবুদ্দিন ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিপুল ভোটে সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ উচ্চ আদালত সব খারিজ করে দিয়েছেন।'

আজ বৃহস্পতিবার ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সম্পাদক শাহাব উদ্দিন সরকার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমামের আদালতে মামলার আবেদন করেন।

শুনানি শেষে আদালত আবেদন ফিরিয়ে দেন।

আদালত আদেশে বলেন, দুর্নীতি দমন আইন ২০০৪ এর তফসিলের 'খ' (আ) এ উল্লেখিত পেনাল কোডের ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ৪৭৭ (এ) ধারার অভিযোগের অপরাধ সরকারি সম্পদ সম্পর্কিত হলে বা সরকারি কর্মচারী বা ব্যাংকের কর্মচারী-কর্মকর্তা বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীর দাপ্তরিক দায়িত্ব পালনকালে হলে এ বিষয়ে মামলা করার ও তদন্ত করার এখতিয়ার শুধু দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আছে।

আদালত আরও বলেন, এ আবেদনে আনীত অপরাধ গ্রহণ বা তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার এখতিয়ার না থাকায়, আবেদনের অনুলিপি সংরক্ষণ করে মূল কপি আবেদনকারীকে ফেরত দেওয়া হোক।

Comments

The Daily Star  | English

Hasnat warns media against airing Hasina’s speech

He further warned that there would be no rehabilitation of Hasina or fascism in Bangladesh

24m ago