বাহাউদ্দিনকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ নয়, বিনীত অনুরোধ করেছিলাম: সিইসি

সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। ফাইল ছবি

এক ফোনে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল পাল্টে যাওয়ার বিষয়টিকে গুজব বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

তিনি বলেছেন, 'একটি ফোনে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল পাল্টানোর বক্তব্যটি গুজব। কেননা এটি অসম্ভব।'

আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, 'আমরা রাত ৮টা পর্যন্ত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছি। কোনো বিপর্যয় দেখিনি। সিসিটিভির মাধ্যমে আমরা কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি দেখছিলাম। কিন্তু একটা টেলিফোনে ফলাফল পাল্টে গেল, এমন একটি কথা শোনা যাচ্ছে। শেষ মুহূর্তে একটা ফোনে ফল পাল্টে যায়, এটি একেবারে অসম্ভব। একটা বা দুইটা টেলিফোন আমি নিজেও করেছিলাম। আমাদের রিটার্নিং অফিসার আমাকে খুব বিপর্যস্ত অবস্থায় ফোন করে বললেন- আমি বিপদে পড়েছি। সেসময় আমি সেখানে প্রচণ্ড শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। আমি ভাবলাম তাকে মারধর করা হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'আমি এরপর ডিসি-এসপিকে ফোন করেছিলাম। তারা তখন জানালেন তাৎক্ষণিক বিষয়টি দেখছেন। এরপর রিটার্নিং অফিসারকে বললাম সমস্যা হবে না। পরে তিনি জানালেন পুলিশ এসেছে। মানুষ সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। উচ্ছৃঙ্খল ঘটনাটা মাত্র ১৫ মিনিট ছিল। কোনোভাবেই ২০ মিনিটের বেশি দীর্ঘ হয়নি। এরপর তিনি স্বাচ্ছন্দ্যে ফলাফল ঘোষণা করলেন সেটি আমরা দেখেছি।'

সিইসি বলেন, 'একটা ফোনে ফল পাল্টে গেল, এটা একজন বলার পর হাজার মানুষ বলল। এটা আমাদের দেশের কালচার, এটা গুজব। মেশিনের ফল অথবা হাতের রেজাল্ট আমরা ওয়েবসাইটে তুলে দিয়েছি। এমন ঘটনা ঘটেনি।'

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, 'ফলাফল ঘোষণার সময় মিছিলের বিষয়টি হয়েছে মানুষের আবেগ উচ্ছ্বাসের কারণে। এটা আমাদের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত কিন্তু তাদের কাছে কাঙ্খিত। তারা উচ্ছ্বাসের কারণেই এটা করেছেন। আর রিটার্নিং কর্মকর্তা ফলাফল ঘোষণার সময় টয়লেটে গেছেন বলে যেটি বলা হচ্ছে, তিনি ন্যাচারাল কলিং হলে যেতেই পারেন। এটাকে বড় করে দেখার কিছু নেই। আমি শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলছি, আপনারাও খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন ৫ মিনিটে ফল পাল্টানো সম্ভব না।'

স্থানীয় এমপিকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিলেও তিনি এলাকা না ছাড়ার কারণেও সমালোচনা মুখে পড়তে হয় ইসিকে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, 'অনেকে বলেছেন নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।'

কুমিল্লা সিটি ভোটে কুমিল্লা ৬ আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে এলাকা ছাড়ার কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি বলেও জানিয়েছেন কাজী হাবিবুল আউয়াল।

স্থানীয় এমপিকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমরা প্রায় শুনছি তাকে নির্বাচন কমিশন থেকে আদেশ করা হয়েছে এলাকা ত্যাগ করার। কিন্তু আমরা তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি নির্বাচন কমিশন থেকে কখনোই একজন নির্বাচিত সংসদ সদস্যকে কখনোই এলাকা ত্যাগ করার আদেশ দেওয়া হয়নি। আমরা তাকে প্রকাশ্যে প্রচারণায় অংশ নিতে দেখিনি। কিন্তু কেউ কেউ বলছেন তিনি কৌশলে অংশ নিয়েছেন। আমাদের একটা প্রত্যাশা ছিল তাকে যদি রিকুয়েস্ট করি তাহলে আর কথা উঠবে না।'

'আচরণবিধি অনুযায়ী তিনি (বাহাউদ্দিন) অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি' উল্লেখ করে সিইসি বলেন, 'তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সংসদ সদস্য কেন, কোনো সাধারণ মানুষকেও তার এলাকা ত্যাগ করার আদেশ দিতে পারে না। আমরাও বাহাউদ্দিনকে এলাকা ত্যাগ করার কোনো আদেশ দেইনি। তাকে বিনীতভাবে অনুরোধ করেছিলাম, সেই চিঠি আছে। কিন্তু চারদিকে ছড়িয়ে গেল- আদেশ দেওয়ার পরও তিনি প্রতিপালন করতে পারলেন না। এ কথাটি পুরোপুরি সত্য নয়।'

সিইসি আরও বলেন, 'এর আগে বলা হয়েছিল একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী গিয়েছিলেন, তাকে ১ ঘণ্টার মধ্যে এলাকা ত্যাগ করাতে পেরেছিলাম। হয়ত পেরেছেন, সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু সে ক্ষেত্রে সেই মন্ত্রী ছিলেন বহিরাগত। আর বাহাউদ্দিনের সেটা স্থায়ী ঠিকানা। একজন মানুষ তার বাড়িতে থাকতে পারবে না তা তো নয়। আমরা একটু বিনীতভাবে অনুরোধ করেছিলাম, হয়ত উনি ডিস্টার্ব করছেন বা কৌশলে প্রচারণা করছেন। সেজন্য তাকে অনুরোধ করা হয়েছিল। আমরা আইন কানুন দেখে চিঠি দিয়েছিলাম। একজন ব্যক্তিকে তার এলাকা থেকে বহিষ্কার করার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের নেই।'

'সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন কোনো আইন ভঙ্গ করেননি' দাবি করে হাবিবুল আউয়াল বলেন, 'নিয়ম ভঙ্গ করেননি। অভিযোগ আসছিল তিনি গোপনে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাই তাকে অনুরোধ করেছি। অনুরোধ করলে তিনি রাখতেও পারেন নাও রাখতে পারেন। বিনীতভাবে অনুরোধ আর নির্দেশ এক করে দেখার সুযোগ নেই। তবে উনি চলে গেলে হয়ত ভালো হতো।'

এসময় নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব খান, বেগম রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার উপস্থিত ছিলেন।

গত ১৫ জুন অনুষ্ঠিত কুসিক নির্বাচনে মাত্র ৩৪৩ ভোটে পরাজয় বরণ করতে হয় ২ বারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে। ১০৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০১টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার পর হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই ফল ঘোষণা স্থগিত রাখা হয় এবং শেষ মুহূর্তে একটি ফোনে ফল পরিবর্তনের অভিযোগ তোলা হয় সাক্কু ও তার সমর্থকদের মধ্য থেকে। এ ছাড়া, তিনি ফল প্রত্যাখ্যান করার ঘোষণাও দেন।

Comments

The Daily Star  | English

Prisoners celebrate Eid in unity and harmony at Dhaka Central Jail

Eid prayers for inmates were held at 8:15am inside the prison premises

40m ago