কুমিল্লা মহানগর আ. লীগ সম্মেলন

এমপি বাহারের বিরুদ্ধে একক আধিপত্য বিস্তারের অভিযোগ

কুমিল্লা সদরের (কুমিল্লা-৬) সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ৫ নভেম্বর। তবে সম্মেলন ঘিরে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিবাদমান গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

গেলবারের পদবঞ্চিত নেতাদের অভিযোগ, অতীতের মতো এবারো মহানগর কমিটিতে একক আধিপত্য বিস্তার করতে চান কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সদরের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।

এরই মধ্যে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও কুমিল্লা সিটি মেয়র আরফানুল হক রিফাতকে আহ্বায়ক করে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিম, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্বোধক ও অতিথি করে সম্মেলনের দাওয়াতপত্র বিলি করেছে সম্মেলন আহ্বায়ক কমিটি।

তবে মহানগর আওয়ামী লীগ সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করলেও সম্মেলনে যাওয়ার দাওয়াতপত্র পাননি বলে স্থানীয় অনেক নেতা অভিযোগ করেছেন।

প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আফজাল খানের মেয়ে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুমান সুলতানা সীমা বলেন, সম্মেলন আয়োজনের বিষয়ে কোনো দাওয়াত বা কোনো প্রস্তুতি সভায় তাকে ডাকা হয়নি। প্রস্তুতি সভায় তাদের কাউকে না রাখার বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদের জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

কেন মহানগর নেতাদের ডাকা হয়নি, এ প্রশ্নের জবাবে সীমা বলেন, 'তা বর্তমান সভাপতি এমপি বাহার ভালো বলতে পারবেন। তবে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে আমি সম্মেলনে আসব।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রাখতে চাই।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, সম্মেলনের বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। তাদের অভিযোগ, সম্ভবত বাহার সমর্থিত গ্রুপের ছাড়া আর কেউই এ বিষয়ে কিছু জানেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও কুমিল্লা সিটি মেয়র আরফানুল হক রিফাত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়ে সবাইকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সম্মেলনের প্রস্তুতি সভায় আসতে বলা হয়েছে। কিন্তু, তারা এখন সবকিছু অস্বীকার করছেন। বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করছেন তারা।'

তিনি জানান, সংবাদ মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সম্মেলনের বিষয়ে সবাইকে জানানো হয়েছে।

সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও বাহার-সমর্থিত মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা আবিদুর রহমান জাহাঙ্গীর বলেন, 'সম্মেলন আয়োজনের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। দাওয়াতসহ সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মহানগর সম্মেলন আয়োজনে কোনো শঙ্কা দেখছি না।'

অন্যদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ও বর্তমান ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি নুর উর রহমান মাহমুদ তানিম বলেন, 'পেশিশক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে কমিটিকে জিম্মি করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর আমরা আস্থা রাখতে চাই। প্রয়োজনে আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।'

মহানগর আওয়ামী লীগ কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ও বর্তমান মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক সাবেক জেলা (দক্ষিণ) ছাত্রলীগের সভাপতি কবিরুল ইসলাম শিকদার বলেন, 'ত্যাগী আওয়ামী কর্মীরাই যেন মহানগর কমিটির নেতৃত্বে আসে। বর্তমান এমপি চাচ্ছেন তার মেয়েকে মহানগর কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ দিতে। অথচ অতীতে তিনি কখনও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।'

২০১৭ সালের ২২ জুলাই প্রথমবারের মতো মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে সভাপতি করা হয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে। সাধারণ সম্পাদক বর্তমান মেয়র আরফানুল হক রিফাত।

বর্তমান সভাপতির সময়ে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের ১০তলা মহানগর আওয়ামী লীগ অফিস নির্মিত হলেও স্থানীয় সাধারণ আওয়ামী কর্মী সমর্থকদের কাছে তা আ ক ম বাহাউদ্দিনের অফিস বলেই পরিচিত।

বর্তমান মহানগর কমিটির নিয়ন্ত্রণ বাহারের হাতে উল্লেখ করে স্থানীয় নেতারা বলেন, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগে শুধুমাত্র একপক্ষীয় নিয়ন্ত্রণ চলে আসছে। এতে স্থানীয় এমপির লাভ হলেও প্রকৃত আওয়ামী লীগের ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান তারা। তাই এখানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইছেন তারা।

আগামীদিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তৃণমূল থেকে তরুণ নেতৃত্ব গড়ে তুলতে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগকে দলমতের ঊর্ধ্বে ঢেলে সাজানো জরুরি মনে করছে তৃণমূল আওয়ামী লীগ।

একক আধিপত্য বিস্তারের অভিযোগ বিষয়ে জানতে এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের নম্বরে ৫ বার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও তিনি উত্তর দেননি।

এ অভিযোগ বিষয়ে আরফানুল হক রিফাত ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মূলত কেন্দ্রীয় নেতাদের মনোযোগ পেতে তারা এসব অভিযোগ তুলেছেন। কিন্তু, আমরা সঠিকভাবে সাংগঠনিক চর্চা করেছি। কোনোভাবেই একক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে না।'

Comments

The Daily Star  | English
crimes against journalists

Ending impunity for crimes against journalists

Though the signals are mixed we still hope that the media in Bangladesh will see a new dawn.

18h ago