মেয়রের বাড়ির উঠানে পানি

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাড়ির উঠানে পানি প্রবেশ করেছে। ছবি: সংগৃহীত

বর্ষার শুরুতে টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ফলে, বর্ষার শুরুতেই নগরীর বাসিন্দারা দুর্ভোগে পড়েছেন। এমনকি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাড়ির উঠানে পানি প্রবেশ করেছে।

আজ বাংলা মাস আষাঢ়ের চতুর্থ দিন। বাংলা পঞ্জিকায় আষাঢ় ও শ্রাবণ ২ মাস মিলে বর্ষাকাল। এ বছর বর্ষা মৌসুম বন্দর নগরবাসীকে স্বাগত জানাল প্রবল বর্ষণে। কিন্তু, জলাবদ্ধতার কারণে নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আজ শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯ মিলিমিটার এবং শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস।

বর্ষার শুরুতে টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মেঘনাথ তংচঙ্গ্যা।

সরেজমিনে দেখা যায়, হালিশহর, শুলকবহার, চান্দগাঁও, ডিসি রোড, কেবি আমান আলী রোড, বাকলিয়া, চকবাজার, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, বাদুরতলা, কাপাসগোলা, আগ্রাবাদসহ নগরীর নিচু এলাকা হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত গভীর পানিতে তলিয়ে গেছে। এসময় সড়কে মোটরচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং রাস্তায় অল্প কিছু রিকশা চলতে দেখা যায়। অনেক যাত্রীকে তাদের গন্তব্যে যেতে যানবাহন না পেয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

রাহাত্তারপুল এলাকার বাসিন্দা রাসু ধর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি এখানে প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি, কিন্তু এখনো পাইনি।' যানবাহন না পেয়ে কিছুক্ষণ পর তিনি হাঁটু জল মাড়িয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে রওয়ানা দেন।

গাড়ির চাকার কিছু স্ক্রু ভেঙে যাওয়ায় রিকশাচালক মো. রফিককে মুরাদপুর এলাকায় হাঁটু পানির মধ্যে দিয়ে ৩ চাকার গাড়িটি টেনে নিয়ে যেতে দেখা যায়। তিনি বলেন, 'পানির শক্ত কিছুর আঘাতে রিকশার চাকার স্ক্রু ভেঙে গেছে... যাত্রী নেমে গেছে রিকশা থেকে কিন্তু, আমি রিকশা টেনে নিয়ে গ্যারেজে যাচ্ছি... আজকের বাকি সময়টুকু আমাকে কোনো আয় ছাড়াই থাকতে হবে।'

দুপুরে আব্দুল মালেককে কেবি আমান আলী রোডে অবস্থিত তার মুদি দোকান থেকে পানি নিষ্কাশন করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, 'পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণে আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম। বছরের পর বছর ধরে এটি এখন স্বাভাবিক দৃশ্য যে বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে এবং আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হবে।'

তিনি বলেন, 'আগে আমরা সিটি করপোরেশনকে দোষারোপ করতাম আমাদের দুর্ভোগ লাঘবে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য। কিন্তু এখন আমরা কোনো কর্তৃপক্ষকে দোষ দিই না... আমরা এখন এই দুর্ভোগকে আমাদের নিয়তি হিসেবে মেনে নিয়েছি।'

মেয়রের বাসভবনের উঠানে পানি

শনিবার বহদ্দারহাটের বহদ্দার বাড়িতে সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসা সংলগ্ন সড়ক হাঁটু পানিতে তলিয়ে গেছে। মেয়রের বাড়ির উঠানে পানি প্রবেশ করেছে।

নোংরা পানির ওপর দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাচল করতে দেখা গেছে এলাকার বাসিন্দাদের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন বলেন, 'গত বছর জলাবদ্ধতার কারণে আমরা দুর্ভোগে পড়েছিলাম এবং আশা করেছিলাম যে স্থানীয় রেজাউল মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় আমাদের দুর্ভোগের সমাধান হবে। কিন্তু, সবকিছু আগের মতোই রয়ে গেল।'

জানতে চাইলে মেয়র রেজাউল তার বাসভবন ও আশপাশে জলাবদ্ধতার কথা স্বীকার করেন। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে সিটি মেয়র বলেন, 'আমি কী করবো? জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য সিডিএ একটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এবং এই উদ্দেশ্যে তারা খাল খনন এবং রিটেইনিং দেওয়াল তৈরি করছে। এটি করতে তারা খালগুলোতে অস্থায়ী বাঁধ তৈরি করেছে এবং খালের একটি বড় অংশ ভরাট করেছে।'

'আমি তাদের বলেছিলাম বর্ষার আগে বাঁধগুলো সরিয়ে দিতে এবং খালগুলোকে অবমুক্ত করতে। যেন বর্ষায় বৃষ্টির পানি নেমে যেতে পারে। তারা কিছু বাঁধ অপসারণ করেছে, কিন্তু খালের ভরাট মাটি সরিয়ে নেয়নি। ফলে পানি দ্রুত সরে যেতে পারছে না এবং জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে,' বলেন মেয়র।

মেয়র বলেন, 'নগরীর ৩৭টি খাল নিয়ে সিডিএ কাজ করছে।'

এ বিষয়ে জানতে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামসের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

Comments

The Daily Star  | English

Renewable ambitions still mired in uncertainty

Although the Awami League government made ambitious commitments to renewable energy before being ousted by a mass uprising in August last year, meeting those lofty goals remains a distant dream for the country.

11h ago