‘লোন করে ঘর বানিয়েছিলাম, চোখের সামনে সব চলে গেল’

হোসনা বেগম ও তার মেয়ে। ছবি: শেখ নাসির/ স্টার

'লোন করে ঘর বানিয়েছিলাম। চোখের সামনে সবকিছু চলে গেল। আবার ঘরহারা হলাম। এখন শুধু বাঁচার আকুতি।'

কথাগুলো বলছিলেন হোসনা বেগম। সিলেট জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার বর্ণি এলাকার হোসনা এবারের বন্যায় সব হারিয়েছেন।

হোসনা বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে আমরা নিজের বাড়ির খাটের ওপর একমাত্র মেয়ে নিয়ে না খেয়েছিলাম। এভাবে আমরা শুক্রবার সকাল ১১টা পর্যন্ত ছিলাম। এলাকায় যখন মাইকিং করা হলো তখন মানুষ এসে আমাদের উদ্ধার করে কোম্পানীগঞ্জ নিয়ে আসে। আমরা এখন অন্য আত্মীয়দের অপেক্ষায় আছি। তারা এলে হেঁটে ৩ কিলোমিটার দূরে আত্মীয়র বাড়ি আছে, সেখানে যাবো।'

জাঙ্গাইল গ্রামের বাসিন্দা সাবের হোসেন বলেন, 'ঘরের ভেতর কোমর সমান পানি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে সিলেট শহরের দিকে রওনা হয়েছি। নৌকার ভাড়া এতোই বেশি যে হেঁটেই যাচ্ছি। বয়স্ক মাকে নিয়েও হাঁটতে হচ্ছে। কারণ পকেটে টাকা নেই। সকাল ৭টায় সদর উপজেলার জাঙ্গাইল থেকে রওনা হয়ে আড়াই কিলোমিটার দূরত্বের পথ টুকেরবাজারে পৌঁছেছি দুপুর ১২টায়।'

উপজেলার উত্তর রণিখাই গ্রামের সাবের হোসেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন সালুটিকরে এক আত্মীয়র বাড়িতে। তিনি বলেন, 'আমার ঘরে এখন ৭ ফুট পানি। বাড়ির চালে আশ্রয় নিয়েছিলাম। সেখান থেকে নৌকায় করে সালুটিকরে এসেছি। আমার মতো হাজার হাজার মানুষ এলাকা ছাড়ার অপেক্ষায় আছেন।'

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার লাখো মানুষ বর্তমানে পানিবন্দি হয়ে আছেন। বন্যায় গ্রাস করছে সব এলাকা। কোনো বাড়িই রক্ষা পাচ্ছে না বন্যার করাল গ্রাস থেকে। অনাহারে থাকা মানুষ এখন প্রাণে বাঁচতে চান। কিন্তু, একটি নৌকা পাওয়াও যেন এখন তাদের কাছে সোনার হরিণ।

গতকাল রাত ১টা পর্যন্ত কোম্পানীগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। পানিতে তলিয়ে গেছে বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আউশধানের বীজতলা ও রাস্তাঘাট।

বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা জানান, পূর্ব ইসলামপুর, ইছাকলস, দক্ষিণ রনিখাইসহ সব ইউনিয়নের ৩-৪টি করে গ্রাম ছাড়া ইউনিয়নের সব গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী গোয়াইনঘাট এলাকার বাসিন্দা অধ্যাপক নুরুজ্জামান মনি বলেন, '১৯৮৮ সালের বন্যায়ও আমার বাড়ির উঠোনে পানি উঠেছিল। কিন্তু, এবারের বন্যায় ঘরেও পানি প্রবেশ করেছে। আমার ৬৬ বছর বয়সে এমন বন্যা কখনো দেখিনি।'

'ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার' এর আওতায় ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২ এর ধারা ৩০ অনুযায়ী, বেসামরিক প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে সিলেট বিভাগের (সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা) বিভিন্ন উপজেলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর সহায়তায় বন্যাকবলিত প্রান্তিক এলাকায় পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধারসহ অন্যান্য মানবিক কার্যক্রম শুরু করেছে।

Comments

The Daily Star  | English
special security for foreign investors in Bangladesh

Police, Bida launch special security measures for foreign investors

Held meeting with officials of foreign companies, introduced dedicated emergency contact line

3h ago