ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনীর নতুন নিয়োগ পরিকল্পনায় বিক্ষোভ

বিক্ষোভকারীরা লাঠি হাতে একটি আন্তঃনগর রেলগাড়ির কাঁচের জানালা ভাঙতে শুরু করেন এবং একটি কোচে আগুন ধরিয়ে দেন
বিক্ষোভকারীরা লাঠি হাতে একটি আন্তঃনগর রেলগাড়ির কাঁচের জানালা ভাঙতে শুরু করেন এবং একটি কোচে আগুন ধরিয়ে দেন। ছবি: সংগৃহীত

ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীতে নিয়োগের নীতিমালায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা উদ্যোগ 'অগ্নিপথের' বিরুদ্ধে আজ টানা ২য় দিনের মত সহিংস বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন বাহিনীতে যোগদানে ইচ্ছুক তরুণরা। বিহার রাজ্যে সবচেয়ে সহিংস বিক্ষোভের ঘটনায় একটি ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আজ ভারতের সংবাদ মাধ্যম এনডি টিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

'অগ্নিপথ' প্রকল্পে প্রস্তাব রাখা হয়েছে, ভারতের সশস্ত্রবাহিনীতে 'জওয়ান'দের ৪ বছরের চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। তাদেরকে 'অগ্নিবীর' নাম দেওয়া হবে। 

৪ বছরের মেয়াদ শেষে বেশিরভাগ অগ্নিবীরকে বাধ্যতামূলক অবসরে যেতে হবে। অবসরপ্রাপ্ত সেনারা কোনো ধরনের পেনশন বা গ্র্যাচুইটি পাবেন না। এই নতুন নিয়োগ পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য হল ভারতের সেনাবাহিনীতে প্রচলিত বেতন ও পেনশনের খরচ কমানো এবং সাশ্রয় হওয়া অর্থ দিয়ে অত্যাধুনিক অস্ত্র কেনা।

বিহারের বিক্ষোভে সড়ক ও রেল যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়। বেশ কিছু বাসের জানালা ভেঙে দেয় বিক্ষোভকারীরা। এছাড়াও কিছু উত্তেজিত তরুণ বিজেপি দলের একজন এমএলএ'র গাড়িতে পাথর নিক্ষেপ করেন। বিহার ছাড়াও দেশের অন্যান্য প্রদেশে এই স্বল্পকালীন নিয়োগ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

বিক্ষোভকারীরা লাঠি হাতে একটি আন্তঃনগর রেলগাড়ির কাঁচের জানালা ভাঙতে শুরু করেন এবং একটি কোচে আগুন ধরিয়ে দেন। তাদের হাতের ব্যানারে লেখা ছিল, 'যারা ভারতীয় সেনাবাহিনীকে ভালোবাসেন'। তারা নতুন নিয়োগদান প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে শ্লোগান দেন।

বিহারের নওয়াদা জেলায় বিজেপির এমএলএ অরুণা দেবী আদালতে যাওয়ার পথে বিক্ষোভকারীদের হামলার শিকার হন। তাদের ছুড়ে মারা পাথরের আঘাতে অরুণাসহ ৫ ব্যক্তি আহত হন। নওয়াদা জেলার বিজেপি অফিসেও ভাংচুর করা হয়।

আররাহ রেলস্টেশনে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এ সময় উত্তেজিত জনতা পুলিশের উদ্দেশ্যে পাথর ছুড়তে থাকে। বিক্ষোভকারীরা রেললাইনের ওপর আসবাবপত্র ফেলে সেগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেন।

জেহানাবাদে শিক্ষার্থীরা পাথর ছুড়ে পুলিশ সহ বেশ কিছু মানুষকে আহত করেন। রেল যোগাযোগ বিঘ্নিত করার জন্য তারা সেখানে জমায়েত হয়েছিলেন। ধারণকৃত ভিডিওতে পুলিশ ও জনতাকে একে অপরের উদ্দেশ্যে পাথর ছুড়তে দেখা যায়। পরবর্তীতে বন্দুক দেখিয়ে বিক্ষোভকারীদের ভয় দেখানোরও চেষ্টা চালায় পুলিশ।

অগ্নিপথ প্রকল্পের আওতায় ১৭ বছর ৬ মাস থেকে ২১ বছর বয়সী প্রায় ৪৫ হাজার অগ্নিবীরকে ৪ বছরের মেয়াদে সশস্ত্র বাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া হবে। এ সময় তারা মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার রুপী উপার্জন করবেন। সঙ্গে কিছু পরিমাণ ভাতাও থাকবে। এ ছাড়াও তারা চিকিৎসা ও বিমা সুবিধা পাবেন।

‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পে প্রস্তাব রাখা হয়েছে, ভারতের সশস্ত্রবাহিনীতে ‘জওয়ান’দের ৪ বছরের চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে
‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পে প্রস্তাব রাখা হয়েছে, ভারতের সশস্ত্রবাহিনীতে ‘জওয়ান’দের ৪ বছরের চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। ছবি: সংগৃহীত

তবে মেয়াদ শেষে মাত্র ২৫ শতাংশ সেনার চাকরি নবায়ন করা হবে এবং তারা নন-অফিসার পদে ১৫ বছর চাকরি করার সুযোগ পাবেন। বাকিদেরকে ১১ থেকে ১২ লাখ রুপীর এককালীন প্যাকেজসহ অবসরগ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ সেনাদের মত তারা কোনো পেনশন পাবেন না।

পুরনো প্রক্রিয়ায় ১৬ বছর ৬ মাস থেকে ২১ বছর বয়সী তরুণরা সর্বোচ্চ ১৫ বছরের জন্য নিয়োগ পেতেন। চাকরীর মেয়াদ শেষে অবসর নেওয়ার পর তারা পেনশনও পেতেন।

অবসরপ্রাপ্ত সেনাসহ বেশ কিছু মহল নতুন নীতিমালার সমালোচনা করেছেন। এর যৌক্তিকতা নিয়েও ওঠেছে প্রশ্ন। সমালোচকরা যুক্তি দিয়েছেন, মাত্র ৪ বছরের মেয়াদ সেনাদের মনোবলকে বিঘ্নিত করবে এবং তারা কম ঝুঁকি নেবেন।

অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল বিএস ধানোয়া এক টুইটার বার্তায় সুপারিশ করেন, 'নতুন নিয়োগ নীতিমালার বিপরীতে আমার ২টি সুপারিশ আছে। প্রথমত, নতুন সেনাদের মেয়াদ কমপক্ষে ৭ বছরে উন্নীত করুন। দ্বিতীয়ত, কমপক্ষে ৫০ শতাংশ সেনাকে তাদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ দিন।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Govt publishes gazette of 1,558 injured July fighters

Of them, 210 have been enlisted in the critically injured "B" category, while the rest fall under the "C" category of injured fighters

5h ago