‘তুলে নেওয়া’র পর

কাউকে 'তুলে নেওয়া'র বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। 'তুলে নেওয়া'র পর কারও সন্ধান মেলে, কারও সন্ধান মেলে না। কিন্তু যা প্রায় কখনোই জানা যায় না, তা হলো কারা কোন প্রক্রিয়ায় বা কীভাবে 'তুলে নিয়ে' যায়। সম্প্রতি 'তুলে নেওয়ার' একটি ঘটনা ঘটেছে। সৌভাগ্যবশত 'তুলে নেওয়া' ব্যক্তি মিজানুর রহমানের সন্ধান পাওয়া যায় কয়েক ঘণ্টা পর। মিজানুর দ্য ডেইলি স্টারের কাছে বলেছেন, তাকে 'তুলে নেওয়া'র আদ্যপান্ত।

জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট নাগরিক আন্দোলনে যুক্ত মিজানুর রহমানকে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার জুরাইন রেলগেট সংলগ্ন একটি মার্কেট থেকে 'তুলে নেয়' শ্যামপুর থানা পুলিশ।

মিজানুরকে 'তুলে নেওয়া'র পর প্রথমে লুকোচুরি করে শ্যামপুর থানা-পুলিশ ও ডিবি। মিজানুরের পরিবারের সদস্য, স্বজন, সহকর্মী ও বন্ধুদের মধ্যে দেখা দেয় আতঙ্ক।

মিজানুরকে 'তুলে নেওয়া'র আগের দিন জুরাইনে একজন পুলিশ সার্জেন্টের উপর হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে। মামলায় ৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪৫০ জনকে আসামি করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলার পাশাপাশি সেদিনই ফেসবুকে দেওয়া একটি স্ট্যাটাসে মিজানুর লেখেন, 'দুটি ঘটনা ঘটবে বলা যায়। এক. মামলা–বাণিজ্য। দুই. মামলার ভয় দেখিয়ে ঘুষ–বাণিজ্য। এমন একটি রাষ্ট্রে বাস করছি যেখানে এ ঘটনার নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু তদন্ত চাইব, সে অবস্থাও নেই।'

থানায় ১ ঘণ্টা

মিজানুর রহমানের ভাষ্য অনুসারে, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে তাকে জুরাইন রেলগেট সংলগ্ন একটি মার্কেট থেকে 'তুলে নেওয়া'র আগেই তিনি জানতে পেরেছিলেন যে, ডিবি তাকে খুঁজছে। এলাকার এক ছোট ভাই তাকে এ ব্যাপারে সাবধান করে আত্মগোপনে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

মিজানুর বলেন, 'আমি ভাবলাম সরে যাওয়ার কোনো কারণ নাই। প্রথমত আমি কোনো অন্যায়-অপরাধ করি নাই। দ্বিতীয়ত এই মামলায় অজ্ঞাতনামা অনেক আসামি আছে। এর মানে আমরা বুঝি। যাকে-তাকে ধরা। যার শিকার হয় বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ। তাদের পক্ষে দাঁড়ানোর মতো তো কোনো লোক নাই। এ কারণেই আমি লুকানোর চিন্তা বাদ দিলাম।'

'তুলে নেওয়া'র দিন তিনি রেলগেটের কাছে বিক্রমপুর প্লাজা নামের একটি বিপনীবিতানের সামনে গিয়ে দেখতে পান, অল্প দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এক সোর্স পুলিশের একজন পরিদর্শককে  তাকে দেখিয়ে দিচ্ছেন।।

মিজানুর বলেন, 'তখন আমার মনে হলো যে, তারা আমাকে ধরতে পারে। তখন আমি মার্কেটের ভেতরে ঢুকে গেলাম। তখন তারা দৌঁড়ে এসে আমাকে ধরে ফেলে। তারা আমার নাম জিজ্ঞেস করল। বলল, "আপনার সঙ্গে আমাদের ডিসি স্যার একটু কথা বলবেন।"'

এক ফাঁকে মিজানুর তার মেয়েকে মোবাইল ফোনে বিষয়টা জানান। মুহূর্তের মধ্যে ঘটনাস্থলে আরও কয়েকজন পুলিশের সদস্য উপস্থিত হন। তাকে ঘিরে ধরে গাড়িতে ওঠান। তখন তিনি তার এক বন্ধুকে জানান যে, তাকে শ্যামপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

মিজানুর বলেন, 'গাড়িতে ওঠানোর পর পুলিশ আমার সঙ্গে একটু খারাপ আচরণ করল। জোর করে আমার মোবাইল ফোন নিয়ে নিল।'

পরিবার পরিজনের আতঙ্কের পর্ব এখান থেকেই শুরু। পুলিশ রাষ্ট্রের কোনো নাগরিককে নির্দিষ্ট কারণে আটক বা গ্রেপ্তার করতেই পারে। কিন্তু পরিবারের পক্ষ খেকে শ্যামপুর থানায় যোগাযোগ করলে জানানো হয়, তারা মিজানুরকে ধরে আনেনি। তাহলে কারা ধরে নিয়ে গেল মিজানুরকে? কি ঘটল তার ভাগ্যে? মিজানুরের স্ত্রী-সন্তানেরা যখন হন্যে হয়ে তার সন্ধান জানার চেষ্টা করছেন, তখন তাকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। অথচ স্বীকার করছে না যে, তারা মিজানুরকে ধরে এনেছে।

এ সময়ের বর্ণনা দিয়ে মিজানুর বলেন, 'সেখানে (শ্যামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষে)  একজন নারী অফিসারও ছিলেন। উনি সম্ভবত এডিসি (কাজী রোমানা নাসরিন, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার, ওয়ারি বিভাগ, ডিএমপি))। ওখানে তারা আমার সঙ্গে একপ্রকার খারাপ আচরণই করলেন। ধমক দিয়ে ও গালি-গালাজ করে কথা বললেন। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন যে, আমি এই কথা (পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ) কেন বলছি?  আমি তখন বিষয়টা ব্যাখ্যা করতে চাইলে তারা তা ঠিকমতো করতে দিচ্ছিলেন না।

'একটা পর্যায়ে আমাকে ওই রুমে থাকা নারী কর্মকর্তা মারার নির্দেশও দিলেন। এর আগে আমি দেখছিলাম পুলিশ পাশে লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শুরুতে লাঠি ছিল না। পরে এনেছে। নির্দেশ পাওয়ার পর আমার গায়ে কয়েকটা বাড়ি দিল। জোরেই দিল।'

মারধর শুরু করার পর নিজের মানসিক অবস্থার কথা বর্ণনা করেন মিজানুর। বলেন, 'আমি সম্মান নিয়ে বাঁচার জন্য, মর্যাদা নিয়ে বাঁচার জন্য নানাভাবে অনেক লড়াই করছি। এটা (মারধরের ঘটনা) আমার প্রচণ্ড লাগল। রাস্তায় লড়াই করতে গিয়ে পুলিশের কাছে মাইর খাইছি সেইটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু কথা বলার জন্য আমাকে এইভাবে ডেকে এনে গালিগালাজ করা, গায়ে হাত তোলার মতো বিষয়টা আমার প্রচণ্ড আত্মমর্যাদায় লাগল। আমার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিল না। আমি জীবনে কখনো এমনভাবে ভেঙে পড়িনি। আমার প্রচণ্ড রাগ হলো, ক্ষোভ হলো।'

মিজানুর বলতে থাকেন, 'কিছুক্ষণ পর আরেকজন সিনিয়র অফিসার আসলেন। তিনি আর খারাপ আচরণ করেননি। কিছু কথাবার্তা হলো তার সঙ্গে। তিনি আমাকে বললেন, "আপনি যে কথা বলেছেন, তা ঠিক আছে। কিন্তু এটা প্রপার চ্যানেলে বলতে পারতেন।"

থানায় জিজ্ঞাসাবাদের পুরো সময়টা মিজানুরকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় বলে জানান তিনি। বলেন, 'এরমধ্যে ওসির রুমে অফিসারদের একজন আরেক জনকে বলছিলেন, "স্যার ও তো বিএনপির কমিটির লোক।"

'এছাড়া থানায় রেগে গিয়ে আরেকজন বলছে, "স্যার ওরা তো পরিবারসুদ্ধা আন্দোলন করে। মেয়েরাও আন্দোলন করে।" তখন থানার কোনো এক অফিসার বলছে, "ওইগুলারেও তুইল্যা নিয়া আয়।"'

থানায় যখন মিজানুরের সঙ্গে এমন আচরণ চলছে, তখন তার আতঙ্কিত স্ত্রী-কন্যা, স্বজন-সহকর্মীরা কোনোভাবেই জানতে পারছিলেন না যে মিজানুর থানাতেই আছেন।

সেদিন মিজানুরের বন্ধু মাহতাব উদ্দিন আহমেদ ডেইলি স্টারকে টেলিফোনে বলেন, 'মিজান আমাকে সকাল ১১টায় ফোনে করে জানান তাকে পুলিশ তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তারপর তার লাইন কেটে যায়। আমি এখন শ্যামপুর থানার সামনে আছি। আমাকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। তবে এখানকার আনসার ও আশপাশের লোকজন জানিয়েছে, দাড়িওয়ালা টাক মাথার একজনকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।'

কাছাকাছি সময়ে ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে মিজানের নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তখন তার ফোনে রিং হলেও কেউ রিসিভ করেননি।

শ্যামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজুল আলমও মিজানুরকে তুলে আনার অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, 'আমরা মিজানুর রহমান মিজানকে তুলে আনিনি। তবে জানতে পেরেছি তাকে ডিবিতে নেওয়া হয়েছে। জুরাইনে ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় তিনি একজন সন্দেহভাজন ইন্ধনদাতা। তার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেখছেন।'

চোখ বেঁধে ডিবি কার্যালয়ের পথে

থানায় ঘণ্টাখানেক অবস্থানের পর মিজানুর রহমানকে চোখ বেঁধে ও হাজতে থাকার আরেক ব্যক্তির সঙ্গে একই হাতকড়া পরিয়ে গাড়িতে তোলা হয় ডিবি কার্যালয়ে নেওয়ার জন্য। মোটামুটি আধা ঘণ্টার মধ্যে তারা ডিবি কার্যালয়ে পৌঁছান বলে জানান মিজানুর।

তিনি বলেন, 'গাড়িতে আমাকে তেমন কিছু বলে নাই। নিজেরা নিজেদের কথা বলতেছিল। এরমধ্যে একজন বলে ওঠে, "মুরব্বি কেন যে এগুলো করতে যান। এখন তো সারাজীবন বাতের ব্যাথায় ভুগবেন।"'

ডিবি কার্যালয়ে 'বড় অফিসারের' কক্ষে নেওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর মিজানুরের চোখের বাঁধন খুলে দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।

মিজানুর বলেন, 'ওই রুমে থাকা সবার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সবচেয়ে সিনিয়র লোকটি আমার সঙ্গে কথা বলেন। প্রথমে তিনি আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন। তিনি আমার সঙ্গে মূলত নানা বিষয় নিয়ে আলাপ করেছেন। এটাকে ঠিক জেরা বলা যাবে না। সে সময় ওই রুমে ৫-৬ জন ছিলেন। সিনিয়র লোকটি আমার সঙ্গে কথা বলার সময় জুনিয়ররা আমার ওপর রেগে যাচ্ছিলেন। খারাপ আচরণ করছিলেন। সিনিয়র লোকটি তখন তাদের ধমক দিয়ে থামাচ্ছিলেন। তিনি বলছিলেন, "গণতান্ত্রিক চর্চার মধ্যে এগুলো থাকা উচিত। অনেক সময় আমরা তো অনেক ভুল-টুল করি। তাদের (মিজানুর) মতো লোকজন কথাবার্তা বললেও তো আমাদের ভুলগুলো ধরা পড়ে।"'

মিজানুরের বক্তব্য, 'ওই সিনিয়র কর্মকর্তা আমাকে উদাহরণ দিয়ে বলেন, "ধরেন আপনি একটা মামলা খেলেন। মামলা তো নানাভাবেই দেওয়া যায়। ধরেন আপনাকে কেউ ২ পিস, ৫ পিস, ১০পিস ইয়াবা ঢুকায় দিয়ে মামলা দিয়ে দিল। মামলায় ধরেন ২০ বছর পর রায় হলো। আপনি নির্দোষ প্রমাণিত হলেন। যারা আপনার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে তারাও জানে আপনি নির্দোষ। কিন্তু এই ২০ বছরের জার্নি আপনি চিন্তা করেন তো।"'

এরমধ্যে পেরিয়ে যায় ৩ ঘণ্টা। তখনো জানা যায়নি- মিজানুর কোথায় আছেন, কেমন আছেন? মিজানুরের স্ত্রী-সন্তান, বন্ধুরা যে যেভাবে পারছেন তার সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা করছেন। ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে ডিবিসহ পুলিশের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলোতে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। কেউ-ই স্বীকার করছেন না যে, মিজানুরকে কারা তুলে এনেছে। পরিবারের সদস্য, বন্ধুদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ক্রমেই বাড়তে থাকে।

ওই কক্ষে মিজানুরকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সেখানে হাজির হন ঢাকা-৪ আসনের (শ্যামপুর-কদমতলী) সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। তখন তাকে কিছুক্ষণের জন্য ওই কক্ষ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় বলে জানান মিজানুর।

পানি চাইলে বলেন 'রোজা থাকেন'

এরপর মিজানুরকে পাশের আরেকটি কক্ষে নিয়ে আটকের ৩ ঘণ্টা পর প্রথমবারের মতো বসতে বলা হয়। তার ভাষ্য, 'আমি পানি খেতে চেয়েছিলাম। তখন আমাকে বলা হয়, রোজা থাকেন।'

মিজানুর বলেন, 'তখন মূলত তারা আমার সঙ্গে আলোচনাই করেন। জাফর ইকবাল ও আনু মুহাম্মদ স্যারের উদাহরণ দিয়ে আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয় যে, জ্ঞানীরা এত কথা বলে না। সমালোচনা করতে হয় দায়িত্বের সঙ্গে, ইত্যাদি।' 

মিজানুর জানান, এ ছাড়া ওই কক্ষে থাকা কর্মকর্তা তাকে বিদ্রূপ করে বলেন যে, তিনি ওয়াসার এমডিকে খাওয়ানোর জন্য ড্রেনের পানি নিয়ে গিয়েছিলেন।

মিজানুর আরও বলেন, 'সেখান থেকে আমাকে পাশের আরেকটি রুমে বসিয়ে জিজ্ঞেস করা হয় যে, আমি খাওয়া-দাওয়া করছি কিনা। ওখানে আমাকে ভাত দিল। টয়লেটে গেলাম। পানিও দিল। কফি দিল। ভাত খাওয়ার পর আরেক কর্মকর্তা আমার সঙ্গে কথা বলেন। আমার কেসটা সম্ভবত তার তত্ত্বাবধানে আছে। তিনি আমাকে একজন জিম্মাদার ডাকতে বললেন। তখন আমি আমার স্ত্রীকে ডাকতে বলি।'

এর মাঝখানে ওই কর্মকর্তা (যার তত্ত্বাবধানে ছিলেন বলে ভাবছেন মিজানুর) বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে মিজানুরকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন যে, তার বয়স হয়েছে, একটা ভবিষ্যৎ আছে, সন্তান আছে। তাই তার এ ধরণের কোনো কর্মকাণ্ডে জড়ানোর আগে ভাবা দরকার।

অথচ মিজানুর রহমানকে আটক করা বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার সেদিন ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, 'উসকে দিয়ে জুরাইনে পুলিশ সার্জেন্টের উপর হামলার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। সেই ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তার মধ্যে মিজানুর রহমান আছে কিনা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। আমরা যাচাই করে দেখবো।'

'গোপনে ধরে আনলে কাকপক্ষীও টের পাবে না'

ডিবি কার্যালয় থেকে মিজানুরকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার স্ত্রী শামিম হাসেম খুকিকে ডাকা হয় বিকেল সাড়ে ৩টার পর। অর্থাৎ তুলে নেওয়ার সাড়ে ৪ ঘণ্টা পর পরিবারের সদস্যরা প্রথমবারের মতো তার অবস্থান জানতে পারেন। খোঁজ পেয়ে অন্যান্য বন্ধু-শুভানুধ্যায়ীরাও মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন।

মিজানুরের বক্তব্য অনুসারে, বিকেল ৪টার খানিকটা পর তার স্ত্রী ও মেঝ মেয়ে পূর্ণতা ডিবি কার্যালয়ের ভেতরে ঢোকেন। সবমিলিয়ে সেখানে তারা ৩০ মিনিটের মতো ছিলেন। শুরুতে তাদের আলাদা একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়।

মিজানুর বলেন, 'আমার স্ত্রী যখন (ডিবি কার্যালয়ে) গেলেন তাকে আমার সামনেই বলা হলো, "আমরা তো ওনাকে সবার সামনে দিয়ে নিয়ে আসছি। যদি গোপনে ধরে নিয়ে যাই, কাকপক্ষীও টের পাবে না, তখন কি করবেন?"'

পরে একটা মুচলেকা লিখে নিয়ে আসেন ওই ডিবি কর্মকর্তা। মিজানুরের ভাষায়, 'সেখানে সম্ভবত লেখা ছিল "আইনবিরুদ্ধ কাজ করব না। রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করব না, ইত্যাদি।"'

 মিজানুর বলেন, 'নানা কিছু বিবেচনায় নিয়ে আমি তাতে স্বাক্ষর করি।'

মিজানুর আরও বলেন, 'ডিবি কার্যালয়ে আমার মেয়েকেও (পূর্ণতা) আমাকে বোঝাতে বলা হয়েছে। এক কর্মকর্তা বলেছেন, এমন হলে আমার মেয়েদের সরকারি চাকরি হবে না। আর রাস্তাঘাটে চলাফেরার ক্ষেত্রে তাদের ঝুঁকির কথাও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে।'

মিজানুরের ভাষ্য, 'আর মোটামুটি সবাই আমাকে যে কথাটা বলেছে তা হলো, "এই যে থানা থেকে এখান পর্যন্ত এতকিছু হলো, এগুলো কাউরে না বলাই ভালো। সাংবাদিকরা নানাভাবে প্রশ্ন করবে। সাংবাদিক, সংবাদমাধ্যমের নানা এজেন্ডা থাকে। এগুলো বললে তো সমস্যা। আমাদের সিনিয়রদেরও একটু সমস্যা হয়।"'

মিজানুর বলেন, 'ওরা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, আমার পলিটিক্যাল আইডেন্টিটি কি? ভিউ কি? আওয়ামী লীগ-বিএনপি করি কিনা, তা জিগ্যেস করে নাই। আমি বলতে নিছিলাম যে, আমি চাই শোষণ, নির্যাতন ও নিপীড়নমুক্ত সমাজ এবং রাষ্ট্র। প্রতিটি মানুুষ মর্যাদা নিয়ে রাষ্ট্রে বসবাস করবে। তারা সেগুলো গুরুত্ব দিয়ে শুনতে চায়নি। অন্য প্রসঙ্গে চলে গেছে।'

এ ছাড়া তাকে তুলে নিয়ে আবার অস্বীকার করার প্রসঙ্গে মিজানুর বলেন, 'আমাকে তুলে নেওয়ার সময় আমি মোবাইলে আমার বড় মেয়েকে তা জানাতে পেরেছিলাম। তখন আমার স্ত্রী-মেয়েরা তেমন একটা চিন্তিত হয়নি। কিন্তু যখনই থানা ও ডিবি কার্যালয় থেকে বিষয়টি অস্বীকার করা হলো, তখন তারা খুব ভয় পেয়ে যায়। প্রচণ্ড আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে।'

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

7h ago