১০ ফুটের ব্যবধান

রংপুরের কাউনিয়া থেকে ব্রজবালা রানী (৬৮) বুড়িমারী সীমান্তের জিরো লাইনে এসেছিলেন তার ছোট ভাই রমেশ চন্দ্র সরকারের (৬৪) সঙ্গে দেখা করতে। রমেশ প্রায় ৪০ বছর ধরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার দিনহাটায় বসবাস করছেন।
বুড়িমারী-চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্তে ২ দেশের নাগরিকরা একে অপরের সঙ্গে দেখা করতে ভিড় করেন। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

রংপুরের কাউনিয়া থেকে ব্রজবালা রানী (৬৮) বুড়িমারী সীমান্তের জিরো লাইনে এসেছিলেন তার ছোট ভাই রমেশ চন্দ্র সরকারের (৬৪) সঙ্গে দেখা করতে। রমেশ প্রায় ৪০ বছর ধরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার দিনহাটায় বসবাস করছেন।

গতকাল শনিবার দুপুরে দেখা যায়—ব্রজবালা তার পরিবারের ৪ জনকে সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বাংলাদেশ সীমান্তের জিরো লাইনে। ভাই রমেশ চন্দ্রও তার পরিবারের ৩ জনকে সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ভারত সীমান্তের জিরো লাইনে।

তাদের মাঝেখানে দূরত্ব ১০ ফুট। সীমান্তের জিরো লাইনে ৫ ফুট দূরত্বে বাংলাদেশের আর অপরদিকে ৫ ফুট দূরত্বে ভারতের বাঁশের বেড়া।

ব্রজবালা ডেইলি স্টারকে জানান, প্রায় ৭ বছর পর ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছে। প্রায় ১৫ মিনিট কথা হয়। ২ জনেই কেঁদেছেন।

বলেন, 'ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলো। কিন্তু, তাকে স্পর্শ করতে পারলাম না। ভাইকে কিছু খাওয়াতে পারলাম না। তাকে কিছু উপহারও দিতে পারলাম না।'

'আমাদের পাসপোর্ট-ভিসা করার সামর্থ্য নেই। তাই ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে ভারতেও যেতে পারি না,' যোগ করেন তিনি।

ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

১০ ফুট দূরে থেকে ব্রজবালার ভাই রমেশ চন্দ্র বলছিলেন, 'দিদি তুই কেমন আছিস। তোমরাগুলা সবাই কেমন আছো। পাসপোর্ট করতে দিছি এখনো হয়নি। বাংলাদেশে গিয়ে সবার সঙ্গে দেখা করবো।'

এমন দৃশ্য প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায় বাংলাদেশ সীমান্তের জিরো লাইন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা বুড়িমারী ও ভারত সীমান্তের জিরো লাইন পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার মেঘলিগঞ্জের চ্যাংড়াবান্ধায়।

২ দেশের কাস্টমস অফিসের পাশে ১০ ফুট দূরত্বে দেখা করা ও কথা বলার সুযোগ পান ২ দেশের নাগরিকরা। তাদের অধিকাংশের পাসপোর্ট-ভিসা করার সামর্থ্য নেই।

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা গ্রামের আব্দুল কাদের (৬৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভারতে থাকা আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার জন্য প্রতিমাসে বুড়িমারী-চ্যাংড়াবান্ধা জিরো লাইনে আসি। ২ ছোট ভাইসহ অনেক আত্মীয় ভারতে থাকেন।'

তিনি আরও বলেন, 'সীমান্তের জিরো লাইনে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয়। কিন্তু, স্পর্শ করতে পারি না। উপহার দিতে পারি না।'

ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

তার মতে, 'এভাবে দেখা করার সুযোগ করে না দিলে হয়তো আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কোনোদিন দেখাই হতো না।'

বুড়িমারী স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশের ইনচার্জ সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) আনোয়ার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ মানুষ সীমান্তের জিরো লাইনে আসেন ভারতে বসবাসকারী আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে, কথা বলতে। ভারতের জিরো লাইনেও মানুষ আসেন।'

'মানবিক কারণে কোনো বাধা দেওয়া হয় না' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'তবে উভয় দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দর্শনার্থীদের কঠোর নজরদারিতে রাখেন।'

বুড়িমারী স্থলবন্দর কাস্টমসের ইন্সপেক্টর সমীরকান্তি মজুমদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জিরো লাইনে দেখা ও কথা বলতে আসা ২ দেশের নাগরিকের অধিকাংশেরই পাসপোর্ট-ভিসা করার সামর্থ্য নেই। তারা যেন কোনোকিছু আদান-প্রদান করতে না পারেন সেজন্য উভয় দেশে বাঁশের বেড়া দিয়ে ১০ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা হয়েছে।'

২ দেশের নাগরিকরা সীমান্তে একে অপরের সঙ্গে দেখা করা ও কথা বলার সুযোগ পেয়ে খুশি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Exit polls: UK Labour Party set for landslide victory

As polling stations closed at 10:00pm (2100 GMT), the survey for UK broadcasters suggested centre-left Labour would win 410 seats in the 650-seat House of Commons, with the right-wing Tories managing only 131

3h ago