ঋণ করে ঘি খাওয়া ও জনগণের ঘাড়ে কর চাপানোর বাজেট: সিপিবির প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির লোগো

আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটকে 'ঋণ করে ঘি খাওয়া ও জনগণের কাঁধে কর চাপানো'র বাজেট হিসাবে আখ্যায়িত করে বাজেট প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।

সিপিবির সভাপতি কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এ কথা জানান।

এতে বলা হয়, এই বাজেটে ঘাটতি আরও বৃদ্ধি ও আরও নির্ভরতার ঝুঁকি থেকে যাবে।

নেতারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ধারায় এ বাজেট প্রণীত হয়নি। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সংবিধানের নির্দেশনা মানা হয়নি। মুক্তবাজারের নামে লুটপাটের ধারা আমাদের সংবিধান অনুমোদন দেয় না, অথচ ওই ধারায় বাজেট দেওয়া হয়েছে। এ বাজেট আমলা ও লুটেরা নির্ভর। এটা প্রণয়নে জনগণের মতামত গ্রহণ করা হয়নি। বাজেটের ঘাটতি পূরণের জন্য সাধারণ মানুষ, মধ্যবিত্তের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের বোঝা চাপানো হবে। এই বাজেট আয় বৈষম্য, সম্পদ বৈষম্য, খাদ্য-শিক্ষা-স্বাস্থ্য বৈষম্য, আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করতে কোনো ভূমিকা নেবে না। বরং বৈষম্য বাড়াবে।

বাজেটে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে খাদ্যপণ্য মজুদ, রেশন ব্যবস্থা ও ন্যায্য মূল্যের দোকান চালু, ন্যূনতম মজুরির ও হতদরিদ্র-কর্মহীনদের নগদ সহায়তার নির্দেশনা নেই। যা বর্তমান সংকটকালীন সময়ে মানুষ বাঁচাতে ও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে জরুরি বলে মনে করে সিপিবি।

বিবৃতিতে নেতারা বলেন, পাচারকৃত টাকা ফেরত আনা, কালো টাকা ও ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধারে কঠোর ভূমিকা না রেখে, বাজেটে তাদের সামান্য কর দেওয়ার মাধ্যমে ওই টাকা বৈধ করে দেওয়ার সুযোগ শুধু অনৈতিকই নয়, এই ধারা টাকা পাচারকারী ও লুটপাটকারীদের উৎসাহিত করবে।

তারা আরও বলেন, 'বিশ্ব ও দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প স্থগিত, অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় কমানো, প্রতিরক্ষা খাতসহ সরকারি ক্রয় খাতে বরাদ্দ কমিয়ে আনা, সর্বত্র স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, বিদেশ ভ্রমণসহ অপ্রয়োজনীয় বিলাসী কার্যক্রম বন্ধ জরুরি। কিন্তু এর কোনো আলামত আমরা দেখতে পেলাম না।'

বিবৃতিতে, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে বরাদ্দের অতীত অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করে সরাসরি ভূক্তভোগীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা ও বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানানো হয়।

বলা হয়, জনগণের ভোটাধিকার, দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে না পারলে, আমলা নির্ভর এ বাজেটের ধারা অব্যাহত থাকবে। প্রস্তাবিত বাজেট অব্যাহত থাকলে ধন বৈষম্য, শ্রেণি বৈষম্য, সামাজিক অস্থিরতা ও নৈরাজ্য বৃদ্ধি পাবে। দেশের অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সামাজিক অস্থিরতা দূর হবে না।

বিবৃতিতে সিপিবি জানায়, খাদ্য সংকট দূর করতে দেশের কৃষি উৎপাদন অব্যাহত ও বৃদ্ধির জন্য উৎপাদন ব্যয় কমানো ও উৎপাদিত ফসলের লাভজনক দাম নিশ্চিত করতে হবে। মধ্যস্বত্ত্বভোগী, মজুতদারদের দমন করতে হবে। এজন্য উৎপাদক সমবায় ও ক্রেতা সমবায় গড়ে তুলতে হবে। বাজেটে এর কোনো নির্দেশনা না দিয়ে কৃষি উৎপাদনে সহায়তার কথা গালভরা বুলি ছাড়া কিছু নয়।

সিপিবি আরও বলে, অপচয়-দুর্নীতি-ভুলনীতি দূর করতে পারলে অনেক খাতে তথাকথিত ভর্তুকি দেয়ার প্রয়োজন হতো না। যেমন জ্বালানি খাত। এ বিষয়ে ভুলনীতি-দুর্নীতি দূর করতে কঠোর নির্দেশনা না দিয়ে বরং দুর্নীতিবাজদের দায়মুক্তি দেয়া হচ্ছে। বাজেটে উত্থাপিত তথ্য-উপাত্তের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। গত বাজেট বরাদ্দের স্বচ্ছ হিসাব না দিয়ে গত বারের বাজেট কাটছাঁট করে নতুন বাজেট উত্থাপন মানুষের কাছে মোটেই উৎসাহ সৃষ্টি করবে না।

বিবৃতিতে বলা হয়, আগে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি বাজেটের ওপর নির্ভর করতো। এখন আগে পরে দাম বাড়িয়ে মানুষের চোখকে ফাঁকি দেওয়া হয়। তাই বাজেটে যতই ভালো কথার ফুলঝুড়ি থাকুক না কেন, সাধারণ মানুষের জীবনমানে কোনো পরিবর্তন আনবে না।

প্রস্তাবিত বাজেট বাতিল করে মুক্তিযুদ্ধের অর্থনৈতিক ধারায় বাজেট প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে সিপিবি।

Comments

The Daily Star  | English

Ending impunity for crimes against journalists

Though the signals are mixed we still hope that the media in Bangladesh will see a new dawn.

10h ago