পরমাণু শক্তি কমিশনের ৩ কর্মকর্তা নিহত: ধাক্কা দেওয়া বাসটি কার?

রোড ডিভাইডার ভেঙে পরমাণু কমিশনের বাসে ধাক্কা দিচ্ছে সেইফ লাইন বাসটি। ছবি: ভিডিও ফুটেজ থেকে নেওয়া

ঢাকা আরিচা মহাসড়কের বলিয়ারপুর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় পরমাণু শক্তি কমিশনের ৩ কর্মকর্তাসহ ৪ জন নিহত হয়েছেন। তবে, এ ঘটনায় বাসটির চালকের বিরুদ্ধে মামলা হলেও পুলিশ এখনো তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এমনকি মালিকের নাম ও পরিচয় জানতে পারেনি পুলিশ।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাভার হাইওয়ে থানার পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সেইফ লাইন পরিবহনের বাসটির চালককে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় চালক অজ্ঞাতনামা। তবে, আমি যতটুকু জানতে পেরেছি বাসটি কুষ্টিয়া থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকায় আসছিল। এর বাইরে এখন পর্যন্ত আর কিছু জানতে পারিনি। মালিকের পরিচয়, বাসের রুট পারমিট, ফিটনেস আছে কি না সে তথ্যও আমি জানি না। তবে, এসব তথ্য জানার চেষ্টা করছি। শিগগির সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।'

সেইফ লাইন পরিবহনের গাবতলী কাউন্টারের ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'দুর্ঘটনা কবলিত বাসটিসহ ২টি বাস আমাদের ব্যানারে ঢাকা-বেনাপোল রুটে চলত। বাস দুটি ইকবাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি আমাদের দিয়েছিলেন। গাড়ির ফিটনেসহ কাগজপত্র ঠিক না থাকায় রাস্তায় পুলিশি ঝামেলা হত। এ ছাড়া, ব্যবসায় বনিবনা হচ্ছিল না বলে গত ২৬ মে আমরা বাস ২টি ছেড়ে দেই এবং আমাদের কাউন্টার বন্ধ করে দেই। সম্প্রতি বাসটি গ্রিন এক্সপ্রেসের ব্যানারে কুষ্টিয়া-গাবতলী রোডে চলত। দুর্ঘটনার দিন কুষ্টিয়া থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার দিকে আসছিল বাসটি।'

তিনি আরও বলেন, 'ইকবাল সাহেব কীভাবে বাস ২টি আমাদের এখানে এনেছিলেন তা আমি জানি না। কারণ, তার সঙ্গে আমরা খুব কম সময় ব্যবসা করেছি। তাই কোনো চুক্তি হয়নি।'

এ বিষয়ে জানতে ইকবাল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তার মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

সাভার বিআরটিএ অফিসের পরিদর্শক সাজ্জাদ উর রহমান বলেন, 'দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বাসটির রেজিস্ট্রেশন করা এক্সিম ব্যাংকের নামে। বাসটির রোড পারমিট ছিল না, ফিটনেস ছিল ২০১৪ সাল পর্যন্ত এবং ট্যাক্স কার্ড ছিল ২০১৫ সাল পর্যন্ত। এটুকুই নিশ্চিত হতে পেরেছি। এ বিষয়ে রিপোর্ট পাঠিয়ে দেব।'

তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ট্রাক ও পরমাণু শক্তি কমিশনের স্টাফ বাসটির কাগজপত্র ঠিক ছিল।

এ বিষয়ে এক্সিম ব্যাংকের ট্রান্সপোর্ট শাখার প্রধান কাজী নেসার উদ্দিন আহম্মেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এক্সিম ব্যাংকের কোনো বাস নেই। এটা লোন কেস হতে পারে। তবে, বাসের নাম্বার পেলে বলতে পারব লোন কেস কিনা। অবশ্য ব্যাংকের শাখার নাম উল্লেখ না থাকলে আমি বলতে পারব না। তারপরও আমি খোঁজ নিচ্ছি।'

এর আগে, রোববার সকাল ৯টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে সেইফ লাইন পরিবহনের বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রথমে বাম পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসকে ধাক্কা দেয়। পরে সেটি ডান পাশে থাকা গরুবোঝাই একটি চলন্ত ট্রাককে সামনের দিকে ধাক্কা দিয়ে সড়ক বিভাজনের ওপর দিয়ে আরিচামুখী লেনে চলে যায়। পরে ওই লেনে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের একটি চলন্ত বাসকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই পরমাণু শক্তি কমিশনের স্টাফ বাসের চালক রাজিব হোসেন নিহত হন। এ সময় কমিশনের ১২ কর্মকর্তাসহ অন্যান্য পরিবহনের মোট অন্তত ২০ জন আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক পরমাণু শক্তি কমিশনের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পূজা সরকার ও প্রকৌশলী কাউসার আহম্মেদকে মৃত ঘোষণা করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Penalty less than illegal gains fuels stock manipulation

While fines are intended to deter future offences, questions remain over their effectiveness if the amount is lower than the illegal gain.

12h ago