পরমাণু কমিশনের ৩ কর্মকর্তা নিহত: ধাক্কা দেওয়া বাসটির ছিল না ফিটনেস-রোড পারমিট

রোড ডিভাইডার ভেঙে পরমাণু কমিশনের বাসে ধাক্কা দিচ্ছে সেইফ লাইন বাসটি। ছবি: ভিডিও ফুটেজ থেকে নেওয়া

ঢাকার সাভারের বলিয়ারপুর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় পরমাণু শক্তি কমিশনের ৩ বিজ্ঞানীসহ ৪ জন নিহতের ঘটনায় অভিযুক্ত সেইফ লাইন পরিবহনের বাসটির রোড পারমিট ও ফিটনেস ছিল না বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

সাভার হাইওয়ে পুলিশের কাছ থেকে বাসটির নম্বর নিয়ে সাভার বিআরটিএ অফিসে যোগাযোগ করা হলে এমন তথ্যই পাওয়া যায়।

সাভার হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক গোলাম মোস্তফার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে সেইফ লাইন পরিবহনের বাসটির নম্বর দেন।

তবে বাসটির রোড পারমিট, ফিটনেস ও রোড ট্যাক্স দেওয়া ছিল কি না, তদন্তের পর জানা যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

পরে পুলিশের এই কর্মকর্তার কাছ থেকে সেইফ লাইন বাসটির নম্বর নিয়ে সাভার বিআরটিএর পরিদর্শক সাজ্জাদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

সাজ্জাদুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সেইফ লাইন পরিবহনের বাসটির কোনো নম্বর প্লেট দেখতে পাইনি। বাসটির সামনের অংশ খুব বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পেছনে লাগানো নম্বর প্লেটটিও পাওয়া যায়নি।'

হাইওয়ে পুলিশের উপপরিদর্শকের কাছ থেকে পাওয়া নম্বরটি তাকে জানানো হলে তিনি বলেন, 'নম্বরটি ওই গাড়ির হলে, এটির রোড পারমিট ছিল না। গাড়িটির ২০১৪ সাল পর্যন্ত ফিটনেস ছিল। রোড ট্যাক্স দেওয়া ছিল ২০১৫ সাল পর্যন্ত।'

রোববার সকাল ৯টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে সেইফ লাইন পরিবহনের বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রথমে বাম পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসকে ধাক্কা দেয়।

পরে সেটি ডান পাশে থাকা গরু বোঝাই একটি চলন্ত ট্রাককে সামনের দিকে ধাক্কা দিয়ে সড়ক বিভাজনের উপর দিয়ে আরিচামুখী লেনে চলে যায় এবং ওই লেনে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের একটি চলন্ত বাসকে ধাক্কা দেয়।

এতে ঘটনাস্থলেই পরমাণু শক্তি কমিশনের স্টাফ বাসের চালক রাজিব হোসেন নিহত হন। 

এ সময় কমিশনের ১২ কর্মকর্তাসহ অন্যান্য পরিবহনের মোট অন্তত ২০ জন আহত হন।

তাদের উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা পরমাণু শক্তি কমিশনের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পূজা সরকার ও প্রকৌশলী কাউসার আহম্মেদকে মৃত ঘোষণা করেন।

দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আবুল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সেইফ লাইন বাসটি দ্রুত গতিতে ঢাকার দিকে যাওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ হারায়। তখন সেটি প্রথমে সড়কের পাশে থেমে থাকা একটি বাসকে ধাক্কা দেয় এবং পরে একই লেনে থাকা গরু বোঝাই ট্রাককে ধাক্কা দেয়।'

'পরে বাসটি সড়ক বিভাজনের উপর দিয়ে নবীনগরমুখী লেনে গিয়ে পরমাণু শক্তি কমিশনের বাসকে ধাক্কা দেয়,' বলেন তিনি।

এ দুর্ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে।

ঢাকা উত্তর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (প্রশাসন) আব্দুস সালাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘটনাস্থলের একটি ভিডিও ফুটেজ আমরা দেখেছি। সেখানে সেইফ লাইন পরিবহনের বাসটি দেখে মনে হয়েছে বাসের ইঞ্জিনে কোনো ত্রুটি ছিল কিংবা চালক অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাসটি চালাচ্ছিলেন।'

'বাসের ইঞ্জিনে ত্রুটি থাকলেও, বাসটি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেটি এখন আর বোঝার উপায় নেই। তবে দুর্ঘটনার জন্য সেইফ লাইন পরিবহনের বাসটিই দায়ী,' বলেন তিনি।

সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, নিহতদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।

Comments