দ্রব্যমূল্যের আগুনে গরম বাজার

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

বুধবার সকাল ১০টা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ঘুরছেন নাজমুন নাহার। পেশায় গৃহিনী। স্বামী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। কী কী কিনলেন জিজ্ঞেস করতেই একটু বিরক্ত হলেন।

নাজমুন নাহার ১৫ দিন পরে বাজারে এসেছেন। তিনি মাসে ২ বার কারওয়ান বাজার থেকে কেনাকাটা করেন। তা দিয়ে পুরোমাস চলে।

বিরক্তির সুরে নাজমুন নাহার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এদেশে সবকিছুর দাম বাড়ে, শুধু মানুষের দাম বাড়ে না। এসি রুমে বসে সরকারি লোকজন অনেক বড় বড় কথা বলে। দেশের মানুষ নাকি শান্তিতে আছে। তারা একবার বাজার করতে আসলে বুঝবে মানুষ কতটা শান্তিতে আছে। তেলের দাম তো ঘোষণা দিয়েই বাড়িয়েছে। এখন গড়ে সবকিছুর দামই ৩০-৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।'

সরেজমিনে বিভিন্ন দোকান ঘুরে নাজমুন নাহারের বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায়।

karwan-bazar_ds.jpg
রাজধানীর কারওয়ান বাজার। ছবি: স্টার

কী কী জিনিসের দাম বেড়েছে, জানতে চাইলে বিরক্ত প্রকাশ করে তিতাস ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী রিপন আহমেদ পাল্টা প্রশ্ন করেন, 'কী কী জিনিসের দাম বাড়েনি সেটা বলেন? সব জিনিসেরই দাম বেড়েছে। ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত ঝামেলা হচ্ছে। অনেকেই বিশ্বাস করেন না যে দাম বেড়েছে। সবাই রাগারাগি করেন।'

জিনিসপত্রের দাম উল্লেখ করে তার দোকানে টাঙানো লিস্টের ছবি তুলতে চাইলে তিনি নিষেধ করে বলেন, 'এই লিস্ট অনুযায়ী কিছু বিক্রি হয় না। ঝুলিয়ে রাখতে হয়, তাই রেখেছি। ক্রেতার সঙ্গে দরদাম করে জিনিস বিক্রি করতে হয়।'

তিনি জানান, '৫০ কেজি ময়দার বস্তা আগে দেড় হাজার টাকায় কিনতাম। দাম বেড়ে তা ১ হাজার ৭০০ হয়। এখন সেই ৫০ কেজির বস্তা প্রায় ৩ হাজার টাকা। দিগুণ দাম বেড়েছে। আটার দাম ২ কেজির প্যাকেটে ৩০-৪০ টাকা বেড়েছে। খুচরা ২ কেজির প্যাকেটের ময়দার দাম ৮৫ থেকে বেড়ে ১৩০ টাকা হয়েছে। প্যাকেটজাত লবণের দাম ২৫ থেকে বেড়ে ৩৫ টাকা, ওয়াশিং পাউডার কেজিপ্রতি ৬০ থেকে বেড়ে ১১০ টাকা, চিনি ৭৮ থেকে বেড়ে ৮৫ টাকা, চিনিগুড়া চালের দাম কেজিপ্রতি প্রায় ২০ টাকা বেড়ে এখন ১১০-১২০ টাকা, মোটা মসুর ডালের দাম কেজিপ্রতি ৪০ টাকা বেড়েছে। ৩৪০ টাকার জিরা বিক্রি হচ্ছে ৪২০ টাকায়।'

পাইকারি বিক্রেতা লাকসাম জেনারেল স্টোরের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'ভারত গম রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণার পরেই মিলাররা ময়দার বস্তাপ্রতি ৩০০ টাকা দাম বাড়িয়েছে। ৫০ কেজি বস্তার ময়দার দাম আগে ১ হাজার ৯০০ টাকা ছিল। দাম বেড়ে ২ হাজার ২০০ টাকা হয়। এখন আমাদেরকেই প্রায় ২ হাজার ৭৫০ টাকায় কিনতে হয়। বস্তাপ্রতি লাভ আসে মাত্র ১৫-২০ টাকা। আটার বস্তা যেখানে ১ হাজার ৭০০-৮০০ টাকা ছিল, সেই আটা আমাদেরকেই কিনতে হচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে। মিলাররা এখন আর ফোন ধরতে চায় না। সম্ভবত আটা-ময়দার দাম আরও বাড়তে পারে।'

কারওয়ান বাজারের ৫টি দোকান ঘুরে দেখা যায়, সব ধরনের গুঁড়ো দুধের দাম কেজিপ্রতি ৩০-৪০ টাকা বেড়েছে। নাম্বার ওয়ান দুধ বিক্রি হচ্ছে ৫৪০ টাকায়, যা আগে ছিল ৫১০ টাকা, ডানো প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৪০ টাকায়, যা আগে ছিল ৭০০ টাকা।

karwan-bazar2_ds.jpg
রাজধানীর কারওয়ান বাজার। ছবি: স্টার

সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজিতে ১০-২০ টাকা দাম বেড়েছে। গোল আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়, পটল ৪০ টাকা, বেগুন ৫০-৬০ টাকা, বরবটি ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, শসা ৪০ টাকা ও পেঁপে ৬০ টাকায়।

কাঁচা মরিচের দাম কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকায়। পেঁয়াজ ঈদের আগে প্রতি ৫ কেজি ছিল ১৩০ টাকা। আজ বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়। ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন ৯০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।

তবে, মাছ ও মাংসের বাজারে কিছুটা স্বস্তি আছে। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকায়। খাসির মাংস ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৫০-১৫৫ টাকা ও লেয়ার ৩০০-৩১০ টাকা। বড় আকৃতির রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, মাঝারি আকৃতির ৩০০-৩৫০ টাকা। ছোট আকারের তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা ও বড় আকারের ১৭০-১৮০ টাকায়। মাঝারি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ৪০০ টাকা ও এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ৮০০ টাকায়।

প্রতি কেজি গোপালভোগ আম বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা ও হিমসাগর আম বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকায়। প্রতি ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ২২০-৩০০ টাকায়।

আটা-ময়দা, সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের মূল্য সামনে আরও বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

Comments