টিটিই নির্দোষ, রেলওয়ের তদন্তে এবার অভিযুক্ত ট্রেনের গার্ড শরিফুল
রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণকারী ৩ যাত্রীকে জরিমানা করায় টিটিই শফিকুলকে নির্দোষ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তবে ১১ দিন পর দেওয়া কমিটির প্রতিবেদনে এবার দোষারোপ করা হয়েছে ট্রেনের গার্ড শরিফুল ইসলামকে।
যাত্রীকে প্ররোচিত করে টিটিইর বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার অভিযোগ এনে আজ সোমবার ট্রেনের গার্ড শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে রেলওয়ের তিন সদস্যের কমিটি।
এরইমধ্যে শরিফুলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় আভিযোগপত্র গঠন করে কার্যক্রম শুরু করেছে রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় পরিবহন দপ্তর।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে গার্ড শরিফুল জানিয়েছেন, ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে এবং সত্যকে আড়াল করতেই তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনা হয়েছে।
সকালে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপকের হাতে প্রতিবেদন জমা দেন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান বিভাগীয় সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম।
প্রতিবেদন হাতে পেয়ে বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক শাহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, তদন্তে টিটিই শফিকুল ইসলাম নির্দোষ প্রমাণ হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগের কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়নি। যে কারণে অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
ডিআরএম জানান, রেলওয়ের তদন্তে উঠে এসেছে ওই ট্রেনের গার্ড শরিফুল ইসলাম ওই যাত্রীকে দিয়ে টিটিই শফিকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে উস্কানি দিয়েছিলেন। গার্ড শরিফুলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
তিনি জানান, তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই গার্ড শরিফুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে রেলওয়ের পাকশি বিভাগীয় পরিবহন দপ্তর, শুরু হয়েছে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার কাজ।
তবে সেদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে শরিফুল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গার্ড হিসেবে আমি খুলনা হেডকোয়ার্টারের অধীনে কর্মরত আছি। সেদিন ওই ট্রেনে ডিউটির সময় একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ফোনে তাকে জানানো হয়, রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর আত্মীয়দের ভ্রমণের কথা।'
'আমি তাদের চিনতাম না, ঈশ্বরদী স্টেশনে আসার পর তারা ট্রেনে ওঠে, আমি তখন তাদের এসি কেবিনে নিয়ে বসাই। পরে আমি অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। হঠাৎ করে কেন আমাকে দোষারোপ করা হলো তা বুঝতে পারছি না,' বলেন শরিফুল।
যাত্রীকে প্রভাবিত করে টিটিইর বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার ব্যপারে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি জানান, ওই যাত্রীর সাথে আমার কোনো পূর্ব পরিচয় ছিল না যে তাদেরকে আমি প্ররোচিত করতে পারি।
ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য তাকে দোষারোপ করা হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে, তদন্ত কমিটির প্রধান পাকশী বিভাগীয় সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা মো. সাজেদুল ইসলাম বলেন, তদন্তের সময় অভিযোগকারী, অভিযুক্ত টিটিই, অভিযুক্ত গার্ডসহ ৯ জনের মৌখিক ও লিখিত বক্তব্য পর্যালোচনা করে গার্ড শরিফুলের বিরুদ্ধে প্ররোচনার অভিযোগ পাওয়ায় তাকে তদন্তে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা হয়েছে, ফলে কাউকে বাঁচানোর জন্য অন্য কাউকে দোষারোপ করা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে এ ঘটনার সঙ্গে রেলমন্ত্রীর আত্মীয়দের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল কিনা এবং কার নির্দেশে বিনা টিকিটের যাত্রীদের ট্রেনের এসি কামরায় তোলা হলো সে সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এগুলো তদন্তের বিষয় ছিল না।
একজন যাত্রীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নিয়েই তদন্ত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
গত ৫ মে রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে বিনা টিকিটের তিন যাত্রীকে জরিমানাসহ ভাড়া আদায় করেন পাবনার ঈশ্বরদীর ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলাম। পরে ওই দিনই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এ নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে অভিযোগ তদন্তে গঠন করা হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। এর মধ্যেই গত ৮ মে টিটিই শফিকুলের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে তাকে স্বপদে বহালের নির্দেশ দেন রেলমন্ত্রী।
Comments