মাথাপিছু আয় কার?

অলঙ্করণ: স্টার

সত্যি হলেই ভালো—গত মঙ্গলবার সরকারের ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তথ্য প্রকাশের পর অনেক মানুষ এভাবেই তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে।

অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মে এই অস্বাভাবিকভাবে উচ্চ মাথাপিছু আয় সম্পর্কে বলেছেন, এই সংখ্যাটি কোনোভাবেই তাদের প্রকৃত আয় অথবা সাধারণ নাগরিকদের আয় কমে যাওয়ার ফলে উচ্চ জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে যে হিমশিম খাচ্ছেন সেটাকে প্রতিফলিত করছে না।

স্পষ্টতই, তারা নিজেদের সরকারের এই আশাব্যঞ্জক গল্পের বাইরের মানুষ বলে মনে করছেন। এ কারণে অনেক জানতে চেয়েছেন, তাদের না হলে এই মাথাপিছু আয় আসলে কাদের?

সরকারি কর্মকর্তারা অবশ্য আত্মবিশ্বাসী যে, জনগণের আয়ের পরিমাণ অবশ্যই বেড়েছে। এর উদাহরণ হিসেবে তারা গ্রামীণ এলাকার মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি, সুপারমার্কেটগুলোয় দীর্ঘ লাইন, কায়িক শ্রমিকের অভাব ইত্যাদিকে দেখিয়েছেন।

এটি মুদ্রার এক দিক। অন্যদিকে যদিও প্রায় সবগুলো লক্ষণই উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও অতি উচ্চ আয় বৈষম্যের ফলে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান দুর্ভোগকে নির্দেশ করে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ গৃহস্থালী আয়-ব্যয় জরিপ অনুসারে, দেশের জিনি সহগ-সমতার অর্থনৈতিক পরিমাপ ২০১০ সালে ছিল শূন্য দশমিক ৪৫৮ সেটা ২০১৬ সালে এসে দাঁড়ায় শূন্য দশমিক ৪৮২-তে। জিনি সহগ একটি স্কেলে পরিমাপ করা হয়। শূন্য থেকে ১; এটি ১-এর যত কাছাকাছি হবে, বৈষম্য তত বেশি। এখন, বাংলাদেশের জিনি সহগ সর্বকালের সর্বোচ্চ, অর্থাৎ সমাজে বৈষম্যও সর্বকালের সর্বোচ্চ।

২০২১-২০২২ অর্থবছরের অন্যান্য অস্থায়ী পরিসংখ্যানগুলোয় সরকারি হিসাব ও বাস্তবতার মধ্যে বিস্তৃত ব্যবধান প্রকাশ পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বিবিএসের মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এই অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে। যা ২০০৬-০৭ অর্থবছরের পর তৃতীয়বারের মতো জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ অতিক্রম করবে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ এখনো মহামারির অর্থনৈতিক পতন মোকাবিলায় লড়াই করছে। ফলে এ ধরনের আশাবাদী অনুমানকে বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

সরকারের উচ্ছ্বাস সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের বিবিএসের পরিসংখ্যানের এই জটিল হিসাব শোনার ধৈর্য নেই অথবা তাদের এই অভিহিত মূল্যের প্রতি কোনো মোহ নেই। তারা তাদের জীবনে বাস্তব উন্নতি দেখতে চান।

শালীন চাকরি করে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, চিকিৎসা খরচ, আবাসন ও শিক্ষার জন্য ব্যয় করার মতো যথেষ্ট উপার্জন করতে চান।

সরকার যদি সত্যিকার অর্থেই মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নে আন্তরিক হয়, তাহলে তার মনোযোগ শুধু পরিসংখ্যানেই সীমাবদ্ধ রাখা উচিত নয়। এর জন্য এমন একটি উন্নয়ননীতি অনুসরণ করা উচিত যা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই। যেখানে সবাই 'শুধু হিসাবে আছে' এমন নয়, এর থেকে উপকৃত হতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

Tribunal-2 to be formed to expedite trials: ICT Adviser

Alam did not elaborate on the specific legal amendments or timeline for the formation of the new tribunal

27m ago