গাজীপুর

শ্রমিক সংকটে ধান কাটা নিয়ে বিপাকে কৃষক

ছবি: স্টার

চলতি বোরো মৌসুমে ধান কাটতে শ্রমিক সংকটে পড়েছেন গাজীপুরের কৃষকরা। দ্বিগুণ পারিশ্রমিক দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

অনেকে বাধ্য হয়ে পরিবারের লোকজন নিয়ে ধান কাটছেন। অনেকে আবার বাড়তি পারিশ্রমিক দিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলছেন। এর ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে লোকসান হবে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

গাজীপুরের শ্রীপুর উত্তরপাড়া এলাকার বাসিন্দা নাহিদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি স্থানীয় গাড়ারণ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। প্রতি বিঘা (৩৫ শতক) ধান কাটার জন্য সাড়ে ৬ হাজার টাকা দিতে চেয়েও শ্রমিক না পেয়ে বাবা ও ভাইদের সঙ্গে ধান কাটছেন। এতে তাদের অনেক বেশি সময় লাগছে।'

ছবি: স্টার

সোনাকর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, অনেক কৃষকই খোঁজাখুজি করে ধান কাটার শ্রমিক পাচ্ছে না। ৩ বিঘা জমির ধান কাটতে ২ দিন খোঁজ করে তিনি শ্রমিক পেয়েছেন। তাদের বিঘা প্রতি ৬ হাজার টাকা দিতে হবে।

তিনি আরও জানান, অধিকাংশ ক্ষেত্রে শ্রমিকরা ধান কাটতে বিঘাপ্রতি ৭ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন।

বরমী গ্রামের কৃষক মো. সাহাব উদ্দিন চুক্তিতে জমি নিয়ে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। চুক্তি অনুযায়ী, ১০ মণ ধান পেলে জমির মালিককে দিতে হবে ৪ মণ। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখন উৎপাদন খরচতো দূরের কথা, আবাদ করে আটকে গিয়েছি। বাধ্য হয়ে স্বামী-স্ত্রী মিলে জমির ধান কাটছি।'

শ্রীপুর উপজেলার কর্ণপুর গ্রামের কৃষক খালেদা আক্তার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কামলা (শ্রমিক) নিলে আমরা খেতে পারবো না, আবার আমরা খেলে কামলা নিতে পারছি না। পেটতো বাঁচাতে হবে। সরকার ধান কাটা, রোপণের জন্য মেশিন দেয় কিন্তু আমরা এখনো এগুলো পাইনি। আমরা কী এসব পাব না?'

একই গ্রামের কৃষক লাল মিয়া সরকার বলেন, 'পাকিতে (৩৫ শতক) ১২ মন বা ১৪ মন ধান পাওয়া যায়। বর্গা করায় জমির মালিককে অর্ধেক দিতে হচ্ছে। ৬-৭ মণ ধান পেলে খরচ বেশি হয়ে যায়। এ সময় কামলাও পাওয়া যায় না। দিনপ্রতি ১ হাজার টাকা বা বিঘা প্রতি ৭ হাজার টাকা খরচে কামলা নিয়ে ধান কাটানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। ধান কাটার জন্য সরকারিভাবে মেশিন পেলে আমাদের অনেক উপকার হতো।'

গোসিঙ্গা গ্রামের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাইম হোসেন বলেন, 'দুদিন স্কুলে না গিয়ে মামাতো, চাচাতো ভাইদের নিয়ে বাবার সঙ্গে ৫৫ শতক জমির ধান কেটেছি।'

কুড়িগ্রাম থেকে আসা ধান কাটার শ্রমিক মোহাম্মদ আলী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ভোর ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ধান কাটার কাজ করে দিনে ১ হাজার থেকে ১২ শ টাকা পান। উচ্চমূল্যের বাজারে কৃষকরা এই পারিশ্রমিককে বেশি বললেও এ উপার্জনে তাদের সংসার চলে না।

ধান কাটা শ্রমিক মো. রমজান আলী জানান, ধান কাটার পুরো মৌসুম চলছে। কৃষকের তুলনায় শ্রমিকের সংখ্যা অনেক কম। আবার বাজারে সব কিছুর মূল্য বেশি। আমরাও শ্রমের মূল্য বেশি না নিলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চলতে পারি না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গাজীপুরে উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গাজীপুর শিল্প অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় এখানে ধান কাটা শ্রমিকের সংকট রয়েছে। সরকারিভাবে সমন্বিত উপায়ে ধান কাটা যন্ত্রের ওপর ৫০ ভাগ ভর্তুকি দেওয়া হয়। গাজীপুরের আবাদি জমিগুলো খণ্ড খণ্ড। হাওড় অঞ্চলে একত্রিত জমি হওয়ায় সেখানে ধান কাটা যন্ত্র সমন্বিতভাবে বেশি ব্যবহার হচ্ছে। ইতোমধ্যে পাওয়ার টিলার ভর্তুকির মাধ্যমে চাষের আওতায় এসেছে।'

এবার বোরো আবাদে জেলা সদর, কালিয়াকৈর ও কালীগঞ্জ উপজেলার আশপাশের নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ৫০০ হেক্টর জমির ফসল আগাম কাটতে হয়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এবার জেলায় সব মিলিয়ে ১ হাজার ৭৪০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে অর্ধেকের বেশি ধান কাটা হয়েছে।'
 

Comments

The Daily Star  | English

Interim govt's delaying election process raising public concerns: Fakhrul

Criticising the chief adviser's recent suggestion to lower the voting age to 17, Fakhrul said the move would put the Election Commission (EC) on pressure.

37m ago