ফিলিপাইনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, মার্কোসের ছেলের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা

ভক্তদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখছেন ফার্দিনান্দ 'বংবং' মার্কোস জুনিয়ার। ছবি: রয়টার্স

প্রায় ৬ বছর আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়াই করে হেরেছিলেন ফিলিপাইনের সাবেক একনায়ক ফার্দিনান্দ মার্কোসের ছেলে। এবার তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ছেন তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লেনি রোব্রেদোর বিরুদ্ধে।

মার্কিন সংবাদ সংস্থা সিএনএন'র প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আজ সোমবার ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র (৬৪) জয়ী হলে বিতর্কিত মার্কোস পরিবার প্রায় ৩ দশক পর আবারও মালাকানাং প্রাসাদে ফিরে আসবে।

মার্কোস পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, লুটপাট ও নৃশংসতার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।

ফিলিপাইনের মানুষের প্রবল গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার আগে দেশের রাজকোষ খালি করে গিয়েছিল এই পরিবার।

অনেকেই চান না অত্যাচারী মার্কোস পরিবার আবারও ক্ষমতায় আসুক। অপেক্ষাকৃত বেশি বয়সীরা এখনো মার্কোস পরিবারের অত্যাচার ও হত্যাকাণ্ডের কথা ভোলেনি। তাদের কাছে বিষয়টি অকল্পনীয়।

বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে মার্কোস জুনিয়রের জেতার সম্ভাবনা বেশি। অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে বেশ বড় ব্যবধানেই এগিয়ে থাকবেন।

ফিলিপাইনে 'বংবং' নামে পরিচিত এই প্রার্থী তরুণ সমাজের কাছে জনপ্রিয়। তিনি 'সমতার' কথা বলছেন। আরও বেশি চাকরি, পণ্যের দাম কমানো এবং কৃষি ও অবকাঠামো খাতে আরও বেশি বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য তিনি সঙ্গে পাচ্ছেন বিদায়ী রাষ্ট্রপ্রধান রদ্রিগো দুতের্তের মেয়ে সারা দুতের্তে কার্পিওকে।

ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বিদায়ী রাষ্ট্রপ্রধান রদ্রিগো দুতের্তের মেয়ে সারা দুতের্তে কার্পিওকে। ছবি: রয়টার্স

মার্কোস জুনিয়রের রাজনৈতিক প্রচারণায় বাবার শাসনামলের ভালো দিকগুলোকে সবার সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। তার স্লোগান 'আবারও জেগে উঠুন'। এর মাধ্যমে তিনি ফিলিপাইনের 'সোনালী যুগ'র কথা সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাইছেন।

সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে তিনি তার বাবার প্রশংসা করে তাকে 'রাজনৈতিক প্রতিভা' ও তার মাকে একজন 'অসামান্য রাজনীতিবিদ' হিসেবে অভিহিত করেন।

মার্কোস পরিবারের সমর্থকরা জানান, ফার্দিনান্দের আমলে দেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। সে সময় হাসপাতাল, সড়ক ও সেতুসহ বড় অবকাঠামো হয়েছে।

সমালোচকরা বলছেন, এই উন্নতি বাহ্যিক ছিল এবং প্রতিটি নির্মাণ প্রকল্পই দুর্নীতি, বিদেশি তহবিল তছরুপ ও বড় আকারের দেনার ঘটনায় কলঙ্কিত।

মার্কোসের আমল পার হয়ে আসা মানুষ এখনও সামরিক আইনের ভয়াবহতার কথা ভোলেননি। তারা প্রশ্ন তুলেছে, কীভাবে জাতি এত দ্রুত মার্কোসকে ক্ষমা করে দিয়েছে?

ফার্দিনান্দ মার্কোসের একমাত্র সন্তান 'বংবং' মাত্র ২৩ বছর বয়সে সক্রিয় রাজনীতিতে আসেন। ১৯৮০ সালে উত্তরের ইলোকোস নরতে প্রদেশের ভাইস গভর্নর হন তিনি।

১৯৮৬ সালে আন্দোলনের মাধ্যমে ফার্দিনান্দ মার্কোসকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। তিনি হাওয়াই দ্বীপে নির্বাসনে যেতে বাধ্য হন। সেসময় মার্কোস জুনিয়রের বয়স ছিল ২৯। ৩ বছর পর ফার্দিনান্দ মার্কোস মারা গেলেও তার পরিবারের সম্পদ, প্রভাব ও প্রতিপত্তি কমেনি। ১৯৯১ সালে তারা দেশে ফিরে আসেন এবং ইলোকোস নর্তে প্রদেশে পারিবারিক বাসস্থানকে ঘিরে গড়ে ওঠে তাদের প্রভাব-বলয়।

ক্ষমতায় থাকাকালে মার্কোস পরিবার তাদের বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য সুপরিচিত ছিল। দামি চিত্রকর্ম ও দেশের বাইরে কেনা সম্পত্তির পেছনে তারা লাখ লাখ ডলার খরচ করেন।

লাখো মানুষ দারিদ্র্যে ও সারা দেশ দেনায় ডুবে থাকলেও তাদের ব্যক্তিগত ভোগবিলাস কখনোই থেমে থাকেনি। সাবেক ফার্স্ট লেডি ইমেলদা মার্কোসকে সবাই চিনতেন নানান ডিজাইনের জুতার সংগ্রহের জন্য। এর আনুমানিক মূল্য সে আমলে ১০ হাজার ডলারেরও বেশি ছিল।

ইমেলদা মার্কোসের জুতার সংগ্রহ। ছবি: রয়টার্স

অভিযোগ আছে, খরুচে স্বভাবের ইমেলদা হাওয়াই দ্বীপে পালানোর সময় বেশ কিছু গয়না ও মণিমুক্তা চুরি করে নিয়ে যান। এর মধ্যে একটি দুর্লভ ২৫ ক্যারাটের গোলাপি হিরা ও একটি কার্টিয়ার হিরার মুকুট ছিল। পরবর্তীতে মার্কিন শুল্ক বিভাগ মুকুটটি জব্দ করে। এর মূল্য নির্ধারিত হয় ২ কোটি ১০ লাখ ডলার।

মার্কোসের পতনের ৪০ বছর পরও ফিলিপাইন সরকার বিলিয়ন ডলারের খোয়া যাওয়া রাষ্ট্রীয় সম্পদ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

একটি সরকারি কমিশন বিভিন্ন মামলায় মার্কোস পরিবারের কাছ থেকে ফিলিপাইনের জনগণের ১০ বিলিয়ন ডলার ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ যাবৎ তারা ৩ বিলিয়ন ডলার ফিরে পেতে সক্ষম হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসামান্য জনপ্রিয়তার কারণে মার্কোস জুনিয়র অন্যান্য প্রার্থীদের থেকে এগিয়ে আছেন। 'রিব্র্যান্ডিং' প্রচারণার অংশ হিসেবে তিনি ইউটিউব, টিকটক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে ফার্দিনান্দ মার্কোসের আমলের নৃশংসতার ঘটনাগুলোকে ধামাচাপা দিচ্ছেন, অবজ্ঞা করছেন ও বিকৃত করে ঘটনাগুলোকে ইতিবাচকভাবে দেখাচ্ছেন বলে সমালোচকরা অভিযোগ করেছেন।

তবে মার্কোস জুনিয়র এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

অন্যান্য বিশ্লেষকদের দাবি, যেসব ফিলিপিনো রাজনৈতিক কোন্দল, উন্নয়নের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও বেশ কয়েকটি সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কারের উদ্যোগ ব্যর্থ হতে দেখে বিরক্ত হয়েছেন, তারাই মূলত মার্কোস জুনিয়রের দিকে ঝুঁকছেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

Public admin reforms: Cluster system may be proposed for ministries

The Public Administration Reform Commission is likely to recommend reducing the number of ministries and divisions to 30 from 55 to improve coordination and slash the government’s operational cost.

7h ago