লামায় জুমের বাগান পুড়িয়ে দেওয়ায় ২৮ নাগরিকের উদ্বেগ

লামা উপজেলায় দুর্গম লাংকম ম্রো পাড়ায় পাহাড়িদের জুমের বাগান পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ২৭ এপ্রিল ২০২২। ছবি: সংগৃহীত

বান্দরবানের লামা উপজেলার পাহাড়িদের জুমের বাগান পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন দেশের ২৮ নাগরিক।

গত বুধবার উপজেলায় দুর্গম লাংকম ম্রো পাড়ায় পাহাড়িদের জুমের বাগান পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে একটি রাবার কোম্পানির বিরুদ্ধে।

রাবার কোম্পানির বিরুদ্ধে ম্রোদের জুমের বাগান পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ শিরোনামে দ্য ডেইলি স্টারে গত ২৭ এপ্রিল একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আজ শুক্রবার ২৮ নাগরিকের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।

এতে বলা হয়, 'জুমের বাগান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় প্রশাসনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ না থাকার বিষয়টি আমাদের গভীরভাবে হতাশ করেছে, আমরা উদ্বিগ্ন। বাগান পুড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর শিগগিরই খাদ্য সংকটে পরার আশঙ্কা আছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ন্যায় বিচারের লক্ষ্যে কোনো প্রকার ব্যবস্থা কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে থেকে তাদের আশ্বস্তও করা হয়নি, যা আমাদের বিক্ষুব্ধ করেছে।'

বিবৃতিতে রাবার কোম্পানি কর্তৃক পাহাড়িদের প্রায় ১০০ একর জুমের বাগান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় আইনানুগ প্রতিকারের লক্ষ্যে এর নিরপেক্ষ তদন্ত করা, দায়ীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার, ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপত্তা ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং পাড়াগুলোতে ম্রো জনগোষ্ঠীর মানুষের দখলসত্ত্ব নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

এতে বলা হয়, 'এর আগে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লি. স্থানীয় ভূমিদস্যুদের সহায়তায় বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের লাংকম ম্রো কারবারি পাড়া, জয়চন্দ্র ত্রিপুরা কারবারি পাড়া এবং রেংয়েন ম্রো কারবারি পাড়ার প্রায় ৩০০ একর জুম ভূমি দখল করেছে। এর প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন সময় পাহাড়িদের বিরুদ্ধে এই কোম্পানি মিথ্যা মামলা করেছে।'

'সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভূমির মালিকানা দেশের প্রচলিত আইনে নির্ধারণ করা হলেও, ৩ পার্বত্য জেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভূমি মালিকানা সামাজিক' উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, 'সার্বজনীন সম্পদ-সম্পত্তি মালিকানা অধিকার নীতিই হলো তাদের ভূমি মালিকানার ভিত্তি। ফলে এই মালিকানা বংশ পরম্পরায় মৌখিক। ৩টি সার্কেলের আওতায় পার্বত্য পাড়ার হেডম্যান এবং কারবারিরা এর ব্যবস্থাপনা করে থাকেন। কিন্তু গত ৩০ বছরে এই পার্বত্য পাড়ার নিয়ন্ত্রণাধীন ভূমির পরিমাণ শতকরা ৫১ ভাগ কমে গেছে। বলা যায়, পাহাড়িদের সামাজিক মালিকানার অর্ধেকেরও বেশি ভূমি ও ভূসম্পদ হাতছাড়া হয়ে গেছে।'

বিবৃতিদাতারা হলেন-ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতিণ্ডলীর সদস্য রামেন্দু মজুমদার, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চের সদস্য সচিব ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি এস এম এ সবুর, উন্নয়নকর্মী খুশী কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহিদুল বারী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পারভেজ হাসেম, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, জাতীয় শ্রমিক জোটের কার্যকরী সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, সংস্কৃতিকর্মী ড. সেলু বাসিত, সমাজকর্মী রাজিয়া সামাদ ডালিয়া, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী, সংস্কৃতিকর্মী এ কে আজাদ, অলক দাস গুপ্ত, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা,  গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক অ্যাডভোকেট জীবনানন্দ জয়ন্ত, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিভূতী ভূষণ মাহাতো, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি কাজী আব্দুল মোতালেব জুয়েল, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিসিএলের সভাপতি গৌতম শীল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দনওয়াই ম্রো। 

Comments

The Daily Star  | English

BNP struggles to rein in the rogues

Over the past 11 months, 349 incidents of political violence took place across the country, BNP and its affiliated organisations were linked to 323 of these

10h ago