টিপু-প্রীতি হত্যা: কিলিং মিশনে অংশ নেন ৫ জন

নিহত টিপু ও প্রীতি। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু হত্যাকাণ্ডের সময় শুটার মাসুম মোহাম্মাদ আকাশ ছাড়াও আরও ৪ জন ঘটনাস্থলে ছিলেন। তাদের মধ্যে ২ জনই ছিলেন শুটার।

আকাশ যদি কোনোভাবে গুলি চালাতে ব্যর্থ হতেন কিংবা অন্য কোনো সমস্যার সৃষ্টি হতো তাহলে ওই ২ জন সামনে এসে কিলিং মিশনে অংশ নিতেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র আজ বুধবার দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, উপস্থিত ওই ২ জনের হাতেও ছিল ৭ পয়েন্ট ৬৫ এমএম ২টি পিস্তল। খুনের চুক্তিদাতা অন্যতম সন্দেহভাজন সুমন শিকদার ওরফে মুসাকে খুঁজে না পেয়ে এখন বাকীদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, হত্যাকাণ্ডের ৩ দিন আগে এই মিশনের জন্য কমলাপুরের ইনল্যান্ড ডিপো এলাকা থেকে অস্ত্র ও গুলি সংগ্রহ করেন আকাশসহ আরও ২ জন। ঘটনার দিন গুলি ছুড়ে টিপুকে হত্যা করার পর সেই অস্ত্র জমা দিয়েই ঘটনাস্থল থেকে পালান তিনি। তবে কিলিং মিশনে থাকা অন্যরা কোথায় গিয়েছে সে বিষয়ে জানাতে পারেনি আকাশ।

তদন্ত সূত্র বলছে, অস্ত্রগুলো সরবরাহ করার তালিকায় গোয়ান্দারা সবুজবাগ এলাকার একজন সাবেক কাউন্সিলরের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখছেন।

র‌্যাব ও পুলিশের গোয়েন্দারা বলছেন, টিপুকে হত্যায় আকাশের সরবরাহ করা অস্ত্রটি ছিল ৭ পয়েন্ট ৬৫ মিলিমিটার ক্যালিবারের একটি অটোমেটিক পিস্তল। এতে ২টি চেম্বার ও ১৬ রাউন্ড গুলির ম্যাগাজিন ছিল। এই অস্ত্রের বৈশিষ্ট্য হলো—অস্ত্রটি একবার লোড করে ট্রিগার চেপে ধরে রাখলে ধারাবাহিকভাবে একটার পর একটা বুলেট নিক্ষিপ্ত হতে থাকে। আবার ট্রিগার ছেড়ে দিলেই বুলেট নিক্ষেপ বন্ধ হয়ে যায়। অস্ত্রটি অটোমেটিক হওয়ায় মাত্র ৫ থেকে ৭ সেকেন্ডের মধ্যে ১১ রাউন্ড বুলেট ছুড়তে পারে শুটার।

কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অস্ত্র নিয়ে কাজ করা সদস্যরা বলছেন, এই অস্ত্রগুলো বিদেশি। এগুলো দেশ বা প্রতিবেশী দেশের অস্ত্র নয়। এই অস্ত্রগুলোর দাম ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, 'একজনকে গ্রেপ্তার করা ছাড়া এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো আপডেট নেই। হত্যা মিশনের পর অস্ত্রটি হাতবদল হওয়ায় অস্ত্রটিও এখনও জব্দ করা যায়নি। পুলিশের পাশাপাশি অন্য ইউনিটও জড়িতের গ্রেপ্তারে কাজ করছে।'

রাজধানীর শাহজাহানপুরের আমতলা জামে মসজিদের কাছে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ১০টার দিকে টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি নিজের মাইক্রোবাসে বাসায় ফিরছিলেন। গাড়িটি যানজটে পড়ার পর একটি মোটরসাইকেল যোগে আসা হেলমেট পরা এক যুবক টিপুকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। এ সময় এলোপাতাড়ি গুলিতে কলেজছাত্রী প্রীতিও নিহত হন।

এ ঘটনায় টিপুর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি শাহজাহানপুর থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) সেই মামলার তদন্ত শুরু করে। ঘটনার ২ দিন পর পুলিশ মাসুম মোহাম্মাদ আকাশ নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশ দাবি করে, তিনি গুলি ছুড়ে টিপু ও প্রীতিকে খুন করেছেন। আকাশ মূলত একজন ভাড়াটে খুনি।

পুলিশ বলছে, টিপুকে হত্যা করতে আকাশকে চুক্তি দেন সুমন শিকদার ওরফে মুসা। যার পেছনে ছিলেন একাধিক শীর্ষ সন্ত্রাসী।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এর আগে অন্তত ২ বার টিপুকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। নিজের সহযোগীদের সঙ্গে হুমকির বিষয়টি শেয়ারও করেছিলেন টিপু। তবে, তার সহযোগীরা এ বিষয়টি গুরুত্ব দেননি।

সূত্র বলছে, সুমন শিকদার ওরফে মুসা ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান, প্রকাশ-বিকাশ গ্রুপ ও মানিক গ্রুপের সদস্য। হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সন্দেহভাজন এই মুসা দেশ ছেড়েছেন বলে জানা গেছে।

Comments

The Daily Star  | English
education in Bangladesh

As a nation, we are not focused on education

We have had so many reform commissions, but none on education, reflecting our own sense of priority.

12h ago