আকাশের সম্পর্কে যা জানা গেল

মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ। ছবি: সংগৃহীত

প্রায় ৩০ বছর আগে রাজধানীর পশ্চিম মাদারটেক এলাকায় একজন স্কুলশিক্ষক জায়গা কিনে সেমিপাকা বাড়ি করেন এবং সেখানে বসবাস শুরু করেন। এলাকায় ভদ্র পরিবার হিসেবে পরিচিত এই পরিবারের ছেলে আকাশ। এলাকাবাসী তাকে চেনেন ভালো ছাত্র এবং ভদ্র প্রকৃতির ছেলে হিসেবেই।

এলাকাবাসীর চোখে ভালো ছাত্র ও ভালো ছেলে আকাশকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে জোড়া খুনের ঘটনায়।

রাজধানীর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি হত্যার ঘটনায় মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবির) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার আজ রোববার দুপুরে জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আকাশ এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

পশ্চিম মাদারটেকে আকাশদের অন্তত ৮ জন প্রতিবেশী বলেন, আনুমানিক ১৪-১৫ বছর আগে হঠাৎ করেই আকাশকে আর তারা দেখতে পাননি। খবর নিয়ে জানতে পারেন, তার বাবা তাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছেন। এরপর থেকে তাকে আর ওই এলাকায় দেখা যায়নি।

আকাশের বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক। সেগুনবাগিচা এলাকায় একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন তিনি। আকাশের মা গৃহিনী। এই দম্পতির ২ ছেলে ও ১ মেয়ের মধ্যে আকাশ দ্বিতীয়।

আকাশকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তার মা বলেন, 'সে ভালো ছাত্র ছিল। কিন্তু এক পর্যায়ে ছাত্রলীগে যোগ দেয়, ছাত্র রাজনীতি শুরু করে এবং বন্ধুদের সঙ্গে অতিরিক্ত আড্ডা দিতে শুরু করে। তাকে এ বিষয়ে বারবার নিষেধ করা হয়। তার বাবা যখন দেখলো শাসন করেও কাজ হচ্ছে না, তখন বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলে।'

এরপর থেকে আকাশের সঙ্গে পরিবারের আর যোগাযোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, 'বিভিন্নজনের কাছে শুনেছি এরপর সে বিয়ে করেছে, সন্তানও হয়েছে। আমাদের নাতি হয়েছে নাকি নাতনি সেটাও জানি না।'

বাবা-মায়ের কাছে আকাশ বা তার স্ত্রী কখনও আসেননি দাবি করে তিনি আরও বলেন, 'আকাশ কোথায় থাকে সেটাও জানি না।'

আকাশ কাউকে হত্যা করতে পারে বিষয়টি মেনে নেওয়া পরিবারটির জন্য কষ্টকর। আকাশের ভাবি বলেন, 'আমরা জানি না সে আদৌ এই হত্যা করেছে কি না। আমাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে সে এতটাই খারাপ হয়ে গেছে। মানুষ হত্যা করার মতো কাজ সে করতে পারে, সেটা মানতেই পারছি না।'

পুলিশ জানিয়েছে, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে টিপু ও সামিয়াকে হত্যায় আকাশের অংশ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

আকাশ পুলিশকে জানিয়েছে, ওই দিনের ঘটনায় সামিয়ার মৃত্যুর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পেরেছেন তিনি।

ডিবির ভাষ্যমতে, এই হত্যার মাসুমকে ভাড়া করা হয়েছিল। ঘটনার ৩ দিন আগে অপরিচিত একজন এসে আকাশ ও তার সহযোগীকে একটি মোটরসাইকেল ও অস্ত্র দিয়ে যান।

ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তারের ভাষ্য, ২৩ মার্চ জাহিদুলকে হত্যার পরিকল্পনা করলেও তা ব্যর্থ হয়। ২৪ মার্চ জাহিদুল তার রেস্টুরেন্টে আছেন নিশ্চিত হয়ে সেখানেই তাকে হত্যা করতে যান আকাশ ও তার সহযোগী। তবে সেখানে বেশি মানুষ থাকায় জাহিদুলের গাড়ি অনুসরণ করে শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় পৌঁছান তারা। সেখানে জাহিদুলকে লক্ষ্য করে অনেকগুলো গুলি করা হয়। এতে জাহিদুল ও সামিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এবং আহত হন জাহিদুলের গাড়িচালক মনির হোসেন।

হাফিজ আক্তারের দাবি, শুধুই আর্থিক সুবিধার জন্য নয়, আকাশের নামে থাকা পূর্বের মামলা থেকে অব্যাহতি পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েও তাকে এই হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার আগে আকাশের নামে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় মোট ৪টি মামলা ছিল।

হাফিজ আক্তার আরও দাবি করেছেন, এই হত্যার জন্য আকাশকে কারা ভাড়া করেছিলেন সে সম্পর্কে পুলিশ এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি।

হত্যার পরদিন ঢাকা জয়পুরহাটে যান আকাশ। সেখান থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। তবে সেদিন ভারতে যেতে না পেরে বগুড়ায় চলে আসেন। সেখান থেকেই গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।

Comments

The Daily Star  | English

Economic expectations: Did govt fall short?

When an interim government was sworn into office following the ouster of the Awami League regime just 100 days ago, there was an air of expectation that the Prof Muhammad Yunus-led administration would take steps to salvage a scam-ridden financial sector and rescue an ailing economy.

8h ago