৩১.৭৫ শতাংশকে ২ ডোজ টিকা দিয়ে নতুন বিধি-নিষেধ বাস্তবায়ন সম্ভব?

দেশের মোট জনসংখ্যার ৩১ দশমিক ৭৫ শতাংশকে করোনাভাইরাসের ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় করোনা প্রতিরোধে সরকারের নতুন বিধি-নিষেধ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ এবং রেস্টুরেন্ট ও পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টরা।

দেশের মোট জনসংখ্যার ৩১ দশমিক ৭৫ শতাংশকে করোনাভাইরাসের ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় করোনা প্রতিরোধে সরকারের নতুন বিধি-নিষেধ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ এবং রেস্টুরেন্ট ও পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টরা।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত দেশের মোট জনসংখ্যার ৪৫ দশমিক ২৮ শতাংশকে করোনা টিকার প্রথম ডোজ এবং ৩১ দশমিক ৭৫ শতাংশকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে। এ তথ্য জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে। সরকারের লক্ষ্যমাত্রার ৮০ শতাংশের মধ্যে ৫৬ দশমিক ৬১ শতাংশ প্রথম ডোজ এবং ৩৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ দ্বিতীয় ডোজ টিকা পেয়েছেন।

নতুন করে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সরকার আবার বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গতকাল সন্ধ্যায় এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা দিয়েছে। এই বিধি-নিষেধ আগামী ১৩ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

রাজধানীর মিরপুর থেকে সদরঘাট রুটে চলাচলকারী তানজিল পরিবহনের পরিচালক সারাফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ পর্যন্ত আমার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ চালক ও সহকারী টিকা পেয়েছে। শুধু আমার না, এই চিত্র প্রায় পুরো পরিবহন খাতের। এই সীমিত সংখ্যক কর্মীর টিকা কার্ড আছে। বাকীদের অনেকে এক ডোজ পেয়েছেন, আবার অনেকে এক ডোজও পাননি। সরকারের উচিত আগে সবার টিকা নিশ্চিত করে তারপর নির্দেশনা কার্যকর করা।'

তিনি বলেন, 'সরকার যদি ১৩ জানুয়ারি থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর করে তাহলে আমরা ২০-২৫ শতাংশ বাস রাস্তায় নামাতে পারবো। এর মধ্যে যদি আবার বাসে অর্ধেক যাত্রী নিতে হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হবে। টিকা নিশ্চিত না করে এমন নির্দেশনা কার্যকর করতে গেলে বেশিরভাগ মানুষ সমস্যায় পড়বে, দুর্ভোগ বাড়বে। ফলে এই নির্দেশনাগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলে আমার মনে হয় না।'

স্টার কাবাব ও রেস্টুরেন্টের কারওয়ান বাজার শাখার ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকারের এই সিদ্ধান্তে আমাদের ব্যবসায় ধস নামবে। তা ছাড়া এই সিদ্ধান্ত কেউ মানবে বলে আমার মনে হয় না। সরকারের উচিত আগে সবার টিকা নিশ্চিত করা, তারপর এসব নির্দেশনা দেওয়া।'

তিনি বলেন, 'যারা এসব সিদ্ধান্ত প্রণয়ন করেন তারা এসি রুমে বসে থাকেন। মাঠ পর্যায়ের তেমন কোনো ধারণা তাদের নেই। আমাদের অধিকাংশ কর্মী এখনো টিকা পাননি। তারা টিকার সার্টিফিকেট কোথায় পাবে? আমরা সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চেলার চেষ্টা করবো। কিন্তু টিকা কার্ড দেখে হোটেলে খেতে দিতে হবে—এটা কোনোভাবেই বাস্তবায়ন সম্ভব না।'

ফার্মগেটের চাইনিজ নিউ প্লাজা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক আব্দুল মতিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যারা টিকা পাননি তারা ঘরের বাইরে থাকলে কোথায় খাবেন? নির্দেশনা তৈরির সময় এটা কি মাথায় ছিল না? আর আমরা টিকা কার্ড দেখতে চাইলেও কাস্টমাররা সহজেই তা দেখাবে বা দেখাতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। এতে করে আমাদের সঙ্গে কাস্টমারদের ঝামেলা হবে। শেষ পর্যন্ত আমরাই বিপদে পড়বো, কাস্টমার হারাবো। আর কোনো ব্যবসায়ীই কাস্টমার হারাতে চান না।'

এই রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আসা রেজাউল হক। ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'আমি এখনো টিকার দ্বিতীয় ডোজ পাইনি। কবে পাব তাও জানি না। বিভিন্ন সময়ে চাকরির কাজে আমাকে এদিক-সেদিক যেতে হয়। তাহলে সেই সময় কি না খেয়ে থাকব? যারা টিকা পাননি এমন পরিস্থিতিতে তারা কোথায় খাবেন? এটি কি সরকারের মাথায় নেই?'

তিনি বলেন, 'সবার জন্য টিকা নিশ্চিত না করে ১৩ তারিখ থেকে যে বিধি-নিষেধ দেওয়া হচ্ছে তা যৌক্তিক বলে আমি মনে করি না। তা ছাড়া যারা দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন তারাও যে সবাই টিকাকার্ড বহন করবে তা আমার কাছে মনে হয় না। তবে সরকার সবার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে পারে।'

সরকারের এই নতুন বিধি-নিষেধ সম্পর্কে দেশের প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও স্বনামধন্য চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগে সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করতে হবে, তারপর এসব নির্দেশনা। তা না হলে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা কোনোভাবেই সম্ভব না।'

তিনি আরও বলেন, 'হোটেল-রেস্তোরার মালিকদের বলে দিতে হবে অন্তত সবাই যেন মাস্ক পরে যান, খাওয়ার সময় মাস্ক খুলে নেন। খাওয়া শেষে আবার সবাই মাস্ক পরিধান করবেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। বাসেও যেন স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।'

'একটু সময় দিয়ে সবাইকে দ্রুত টিকার আওতায় এনে এই নির্দেশনা কার্যকর করা হোক। না হলে এটি কার্যকর করা কঠিন হবে। সরকার টিকা না দিলে মানুষ কোথায় পাবে? নির্দেশনাটি ভালো, তবে সবাইকে টিকার আওতায় এনে তারপর কার্যকর করতে হবে।'

তিনি পরামর্শ দেন, 'দোকান, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন স্থানে মাস্কের ব্যবস্থা রাখতে হবে। মাস্ক ছাড়া কেউ চলে এলে তাকে মাস্ক দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Five crisis-hit banks secure BB guarantee for liquidity

Five crisis-hit banks have obtained a Bangladesh Bank (BB) guarantee to avail liquidity support from the inter-bank money market, according to central bank officials.

1h ago