বিশ্ব বাজারে কমেছে জ্বালানি তেলের দাম

রয়টার্স ফাইল ছবি

বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। গত শুক্রবার অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি প্রায় ৩ শতাংশ কমে ৮০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

জানুয়ারি থেকে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ২.৩৫ ডলার বা ২.৯ শতাংশ কমে ব্যারেল প্রতি ৭৮.৮৯ ডলারে দাঁড়াবে।

রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) আগামী ডিসেম্বর থেকে অপরিশোধিত তেলের দাম ২.৯১ ডলার বা ৩.৬ শতাংশ কমিয়েছে। যা ডিসেম্বরের শেষ দিনে ৭৬.১০ ডলারে দাঁড়াবে। জানুয়ারি থেকে তা প্রায় ২.৬৫ ডলার বা ৩.৪ শতাংশ কমে মূল্য নেমে যাবে ৭৫.৭৮ ডলারে।

গত বছরের মার্চের পর প্রথমবারের মতো টানা চতুর্থ সপ্তাহে তেলের দাম কমলো।

বিশ্ব অর্থনীতি মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে শুরু করার পর চলতি বছর অপরিশোধিত তেলের দাম প্রায় ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একইসঙ্গে পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন (ওপেক) এবং মিত্ররা (যা ওপেক+ নামে পরিচিত) ধীরে ধীরে উৎপাদন বাড়াতে শুরু করেছে।

ওএএনডিএ-র বাজার বিশ্লেষক ক্রেইগ এরলাম বলেছেন, বৈশ্বিক তেলের বাজার এখনো একটি ভালো অবস্থানে আছে। কিন্তু, ইউরোপসহ অন্যান্য দেশ এখনো লকডাউনে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধের পর বড় অর্থনীতির কয়েকটি দেশ কৌশলগত পেট্রোলিয়াম মজুদ (এসপিআর) থেকে তেল রপ্তানির বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। এটি বিশ্ব বাজারে তেলের দাম স্থিতিশীল রাখার একটি সমন্বিত উদ্যোগ।

জ্বালানি তেলের দাম কমাতে কৌশলগত মজুদ থেকে তেল রপ্তানির বিষয়ে বিশ্বের কয়েকটি বৃহত্তম অর্থনীতির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনার কয়েক দিন পরে হোয়াইট হাউস শুক্রবার ওপেককে বৈশ্বিক সরবরাহ বজায় রাখতে আবার চাপ দিয়েছে।

গোল্ডম্যান স্যাক্সের তেল বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি প্রায় ৪ ডলার কমিয়ে দিয়েছে।

এদিকে পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠনের মিত্র ওপেক+ ধীরে ধীরে হলেও তেল উৎপাদন বৃদ্ধির নীতিতে অটল আছে। এমনকি দাম বাড়লেও তারা বলেছিল, ২০২২ সালের প্রথম মাসে তেলের সরবরাহ চাহিদাকে ছাড়িয়ে যাবে।

এদিকে বাংলাদেশে গত ৩ নভেম্বর তেলের দাম বাড়ানো হয়। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়েছে।

এরপর ৫ নভেম্বর তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, দেশে ডিজেলের দাম প্রতিবেশী দেশের চেয়ে কম এবং এ নিয়ে বিভ্রান্তির অবকাশ নেই।

তথ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, 'দেশে সম্প্রতি ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বিভিন্ন মহল থেকে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ২০১৩ সালে দেশে ডিজেলের মূল্য ছিল লিটার প্রতি ৬৮ টাকা, পরবর্তীতে ২০১৬ সালে লিটার প্রতি ৩ টাকা কমিয়ে ৬৫ টাকা করা হয়। এরপর সাড়ে পাঁচ বছরে দেশে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধি হয়নি।'

তথ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এ বছরের জুন মাসে লিটার প্রতি ২.৯৭ টাকা, জুলাই মাসে ৩.৭০ টাকা, আগস্ট মাসে ১.৫৮ টাকা, সেপ্টেম্বর মাসে ৫.৬২ টাকা এবং অক্টোবর মাসে ১৩.০১ টাকা ভর্তুকি দিয়ে গত সাড়ে পাঁচ মাসে ডিজেলের জন্য বিপিসির লোকসান হয়েছে প্রায় ১১৪৭.৬০ কোটি টাকা। একইসঙ্গে ১ ডলারের মূল্য ২০১৬ সালে ৭৯ টাকা থেকে চলতি মাসে ৮৫.৭৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে ফলে ডলারে মূল্য পরিশোধে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে।

যদিও ৪ নভেম্বর দীপাবলি উৎসবের আগে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম প্রতি লিটারে যথাক্রমে ৫ ও ১০ রুপি কমিয়েছিল ভারত সরকার। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে সেদিন বলা হয়েছিল, জ্বালানি তেলের দামের ঊর্ধ্বগতিতে বিপর্যস্ত জনগণকে স্বস্তি দিতে সরকার এমন ঘোষণা দিয়েছে। আসন্ন রবি শস্যের মৌসুমে কৃষকরা যাতে উপকৃত হন সে জন্য জ্বালানি তেলের দাম কমানো হচ্ছে।

একইসঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ভোক্তাদের সুবিধার্থে রাজ্য সরকারগুলোকে জ্বালানি তেলের ওপর ভ্যাট কমানোর অনুরোধও করে।

গত ৬ নভেম্বর বিদ্যুৎ ,জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে তার প্রতিফলন ঘটবে

তিনি বলেছিলেন, '২০১৬ সালেও জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছিল। জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক মূল্য বৃদ্ধি ও পাচার রোধে মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে।'

এরপর গত ১১ নভেম্বর দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি সম্পর্কে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান এক ওয়েবিনারে বলেছিলেন, এটা পলিটিক্যাল সিদ্ধান্ত। আমলাদের এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই।

তিনি আরও বলেছিলেন, 'সারা বিশ্বে জ্বালানি নিয়ে যখন একটা রাজনীতি হয়, সেটা পলিটিক্যাল নুইসেন্স হিসেবেই বিবেচিত হয়ে থাকে। এ কাজটা আমরা করিনি। আমরা ৬ মাস অপেক্ষা করতে পারতাম। আমরা ৬ মাস অবজারভেশনে রেখেছিলাম। যখনই আমাদের আওতার বাইরে চলে গিয়েছে, যখনই আমরা আর কোনো জায়গা থেকে, কোনো উৎস থেকে অর্থায়নের কোনো নিশ্চয়তা নেই বলে জেনেছি, তখন আর কোনো উপায় ছিল না।'

Comments

The Daily Star  | English

Cargo ship with Pakistani goods reaches Ctg anchorage

On its second trip, it brings refined sugar, dolomites, fabrics, electronics, etc from Pakistan and UAE

1h ago