জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ড এলাকার সবজি খেতের ফুল ঝরে যাচ্ছে

স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, এই এলাকার বেশিরভাগ সবজি খেতের ফুল ঝরে যাচ্ছে। ছবি: সঞ্জয় কুমার বড়ুয়া/স্টার

সীতাকুণ্ডে জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ড এলাকার কৃষি জমিতে গত কয়েক বছরে ফলন ‍তুলনামূলক কমেছে। একইসঙ্গে স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, এই এলাকার বেশিরভাগ সবজি খেতের ফুল ঝরে যাচ্ছে।

মধ্যম সোনাইছড়ি জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ডের পাশে ৩ কানি জমিতে গত ২০ বছর ধরে সবজি চাষ করছেন নাজিম উদ্দিন।

নাজিম উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কয়েক বছর ধরে সবজি উৎপাদন অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে। সবজি গাছে ফুল আসার পর বেশিরভাগ ফুলই ঝরে যায়।'

জাহাজ ভাঙা এলাকার পাশের কৃষি জমিতে আবাদ করা মো. ইউনুস, মিজান আলীসহ কয়েকজন কৃষকও গত শনিবার নাজিমের মত একই অভিযোগ করেন।

মো. ইউনুস বলেন, 'জাহাজ ভাঙার কালো ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাসের কারণে প্রায়ই জমিতে কাজ করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।'

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুমন কান্তি দাশ বলেন, 'সীতাকুণ্ডের জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ড এলাকার কৃষি জমিতে আগের চেয়ে উৎপাদন কমে গেছে।'

সীতাকুণ্ডে জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ড এলাকার কৃষি জমিতে গত কয়েক বছরে ফলন ‍তুলনামূলক কমেছে। ছবি: সঞ্জয় কুমার বড়ুয়া/স্টার

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সীতাকুণ্ড জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ড এলাকার কৃষি জমিতে ক্ষতিকর ভারি ধাতুর উপস্থিতি, অম্লত্ব বৃদ্ধি, এবং ধোঁয়ার কারণে সেখানে ফলন কমে গেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফুল ঝরে পড়ছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম বলেন, 'সীতাকুণ্ডে জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ড এলাকার কৃষি জমিতে ফলন কমার প্রধান কারণ হতে পারে ক্ষতিকর ভারি ধাতু এবং অম্লত্ব বৃদ্ধি।'

তিনি বলেন, 'বিষাক্ত গ্যাস,এবং ধোঁয়ার কারণে জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ড এলাকার আবাদি জমির ফুল নষ্ট হতে পারে।'

তিনি আরও বলেন, 'কেউ কেউ জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ড এলাকার মাটি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তবে, বিস্তারিত জানতে আরও ভালো গবেষণার প্রয়োজন আছে।'

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশনের (ইপসা) সমন্বয়ক মোহাম্মদ আলী শাহিন বলেন, 'গত ৪০ বছর ধরে অপরিকল্পিতভাবে জাহাজ ভাঙার কারণেই চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকায় পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকায় প্রায় ৫০টির মত ইয়ার্ড আছে। যেখানে হংকং কনভেনশন সার্টিফিকেটের অধীনে মাত্র একটি গ্রিন ইয়ার্ড আছে।'

জাহাজ ভাঙার কালো ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাসের কারণে প্রায়ই জমিতে কাজ করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। ছবি: সঞ্জয় কুমার বড়ুয়া/স্টার

জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ডের মালিক সংগঠন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ) নির্বাহী সদস্য জহিরুল ইসলাম বলেন, 'প্রতিবছর প্রায় ২৫০-৩০০ স্ক্র্যাপ জাহাজ চট্টগ্রামে আসে।'

তিনি আরও বলেন, 'আগের ‍তুলনায় তেলবাহী ট্যাংকার কম আসছে। এছাড়া, পরিবেশ রক্ষায় ইয়ার্ডগুলো আগের চেয়ে সচেতন হচ্ছে।'

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুরনো এবং বাতিল হওয়া জাহাজগুলো বাংলাদেশে ভাঙার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নিয়মনীতি মানা হয় না। এ কারণেই জাহাজে থাকা বিষাক্ত উপাদান ইয়ার্ডের পাশে থাকা কৃষি জমিতে মিশে যাচ্ছে। এতে খাদ্যচক্রের মাধ্যমে সেগুলো মানব দেহে প্রবেশ করছে।'

সিলেটের নর্থ ইষ্ট ক্যান্সার হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. দেবাশীষ পাটোয়ারীর বাড়ি  চট্টগ্রামের মিরসরাই এলাকায়। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ০৮-১০ বছরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এবং মিরসরাই এলাকায় ক্যান্সারের রোগী বেড়েছে। তাদের অনেকে লিভার এবং ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত।'

Comments

The Daily Star  | English

People will have to take to the streets for voting rights: Fakhrul

People will have to take to the streets like they did on August 5 to realise their voting rights, said BNP Secretary General Mirza Fakhrul Islam Alamgir today

33m ago