বায়ু দূষণে ঢাকাবাসীর আয়ু কমেছে সাড়ে ৭ বছর

স্টার ফাইল ছবি

ঢাকায় বায়ু দূষণ না থাকলে আপনি আরও প্রায় সাত বছর সাত মাস বেশি বাঁচতে পারতেন। আজ বুধবার শিকাগো ইউনিভার্সিটির এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট প্রকাশিত সর্বশেষ 'এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স' এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

এতে বলা হয়েছে, বায়ু দূষণের কারণে সারা দেশে মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় পাঁচ বছর চার মাস। ঢাকায় কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭২ বছর ছয় মাস। লাইফ ইনডেক্সের গবেষণা মতে, ১৯৯৮ সালে বায়ু দূষণের কারণে গড় আয়ু কমেছিল প্রায় দুই বছর আট মাস, ২০১৯ সালে সেটি পাঁচ বছর চার মাসে দাঁড়িয়েছে।

গবেষণা বলছে, সারা দেশের ৬৪টি জেলার প্রত্যেকটিতেই বায়ু দূষণের হার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী অন্তত তিন গুণ বেশি।

দূষিত বাতাসে কঠিন ও তরল পদার্থ উড়ে বেড়ায়, যার মধ্যে রয়েছে কাঁচ, ধোঁয়া বা ধুলা, যেগুলোকে 'বস্তুকণা' হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

এসব বস্তুকণার মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতি বলা হয়, সূক্ষাতিসূক্ষ 'বস্তুকণা ২.৫'। যেটি মানুষের চুলের ব্যাসের মাত্র তিন শতাংশ, যেটি মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ঢুকে যায়। এই দূষণ সবচেয়ে বেশি হয় জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে যা মূলত গাড়ির ইঞ্জিন বা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপন্ন হয়।

গত মার্চে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি রিপোর্ট ২০২০ অনুযায়ী, বাংলাদেশের বাতাসে এই বস্তুকণা ২.৫ এর পরিমাণ ৭৭.১ মাইক্রাগ্রাম পার কিউবিক মিটার, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডের চেয়ে সাত গুণ বেশি। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশ বায়ু দূষণে বিশ্বে শীর্ষস্থানে ছিল এবং রাজধানী হিসেবে ঢাকা ছিল দ্বিতীয় স্থানে।

সদ্য প্রকাশিত লাইফ ইনডেক্স অনুযায়ী, দেশের দূষিত শহরগুলোর মধ্যে বেশির ভাগ খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে অবস্থিত। আর বাস্তুকণা ২.৫ বেশি রয়েছে যথাক্রমে নারায়ণগঞ্জ, যশোর, রাজশাহী, খুলনা, পাবনা, ঢাকা ও গাজীপুরে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বায়ু দূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি হয় শ্বাসতন্ত্রের রোগ। এর মধ্যে হাঁপানি, ফুসফুসের কাশি ছাড়াও লাং ক্যানসার, স্ট্রোক ও কিডনির সমস্যা হয়।

'এ জন্য বায়ুদূষণের সঙ্গে মানুষের গড় আয়ুর বিষয়টি জড়িত। আমাদের গড় আয়ু বেড়েছে কিন্তু সেটা কতটা মানসম্মত সেটাও খতিয়ে দেখা উচিত। আমাদের জীবদ্দশায় কতটা সময় হাসপাতালে কাটাতে হয়, সেটাও হিসাব করা উচিত', বলেন তিনি।

লেলিন চৌধুরী একইসঙ্গে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি আরও বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি অবশ্যই বায়ুদূষণের একটা বড় কারণ। আমাদের দেশে ইটভাটার কারণে সবচেয়ে বেশি বায়ু দূষণ হতো। তবে সেটা হয়তো কিছুটা কমছে কিন্তু আমাদের গণপরিবহন ব্যবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। সেটা না হলে ব্যক্তিগত গাড়ি কমবে না, এ ধরনের জ্বালানির ব্যবহারও কমবে না।

লাইফ ইনডেক্সের তথ্য মতে, বায়ুদূষণের কারণে সারা বিশ্বে মানুষের গড় আয়ু কমেছে ২.২ বছর। স্থায়ীভাবে দূষণ বন্ধ করা গেলে বিশ্বের মানুষের গড় আয়ু ৭২ থেকে ৭৪ বছর হতো, যা সার্বিক হিসাবে ১৭ বিলিয়ন জীবন-বর্ষ।

নির্মল বায়ুর জন্য স্থায়ী কোনো নীতি যেটি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে পারে, সেটা গড় আয়ু বাড়ানোর পাশাপাশি জলবায়ুর ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারে বলে গবেষকেরা মনে করেন। তারা এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে চীনকে উল্লেখ করে বলেছে, ২০১১ সালের তারা যে নীতি গ্রহণ করেছে, তাতে তাদের গড় আয়ু বেড়েছে ২.৬ বছর।

Comments

The Daily Star  | English
High tax expenditure in Bangladesh

Vat, Tax hikes: Short-sighted state policies to hurt people

The current high level of inflation has already placed significant financial pressure on the common people, and increasing taxes in this context will create even more strain

31m ago